ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটির আলোচনা সভা

স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীকে কোন অবস্থাতেই ভোট দেয়া যাবে না

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীকে কোন অবস্থাতেই ভোট দেয়া যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উগ্র-সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী যেন কোন অবস্থাতেই ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে হলে কোন অবস্থাতেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীকে ভোট দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য গড়ে তুলতে হবে জনমত। বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতা। অন্যথায় দেশে আবারও মাথাচড়া দিয়ে ওঠতে পারে মৌলবাদ। বাড়তে পারে জঙ্গীবাদের আস্ফালন। যা দেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলেও মনে করেন তারা। সেইসঙ্গে গণতন্ত্রের পথও রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন অনেকে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতার রাজনীতি এবং আদর্শের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ক্ষমতার রাজনীতিতে আপোস করতে হয় এটা কঠিন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাই আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে। আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের অংশগ্রহণ করা বিএনপির সাংবিধানিক অধিকার। তাদের সংবিধান মেনেই নির্বাচনে যেতে হবে। এখানে সরকারের দয়া দাক্ষিণ্যের কোন বিষয় নেই। ‘২৬ বছরের অভিযাত্রা ॥ নির্বাচনের বছরে নির্মূল কমিটির আন্দোলন’ শীর্ষক সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান, ইন্সটিটিউট অব করফ্লিক্ট, ল’ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ (অব) এবং সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি শামসুল হুদা। ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতার রাজনীতি এবং আদর্শের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ক্ষমতার রাজনীতিতে আপোস করতে হয় এটা কঠিন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাই আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে। এর কারণ একটি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, বাস্তবতাকে মেনে কূটনৈতিক মিত্রতা করলেও আদর্শকে বিসর্জন করে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ ভুল ত্রুটি নিয়ে রাজনীতি করলেও বাংলাদেশের জন্মের আদর্শ থেকে এক চুলও সরেনি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু পরবর্তী নির্বাচনের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রাজনীতি করেন। প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই সংঘাত এড়িয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই মিয়ানমারের উস্কানি সত্ত্বেও ঠা-া মাথায় তার একক সিদ্ধান্তে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করছেন। মন্ত্রী বলেন, হেফাজতের দাবিতে মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এটা বাস্তবতা। তবে তাদের সঙ্গে আপোস করার জন্য এই স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ওবায়দুল কাদের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনে আসাটা যে কোন দলের সংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার বিএনপিরও রয়েছে। এই বিষয়ে সরকার বিএনপিকে কোন ধরনের দয়া দাক্ষিণ্য দেখাতে পারবে না। তাদের সংবিধান মেনেই নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে বলেন, দলটির কিছু নেতা প্যাথলজিক্যাল লায়ার (মানসিক বিকারগ্রস্ত মিথ্যাবাদী)। তারা কোন রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম না করে এসিতে বসে মিথ্যার কারখানা তৈরি করেছে। বিএনপি আন্দোলন এবং নির্বাচনে ব্যর্থ। এখন তারা সংলাপ চাইছে। কিন্তু এই সংলাপ তো খালেদা জিয়ার সেদিন বন্ধ করে দিয়েছিলেন যেদিন প্রধানমন্ত্রী তার সন্তানের মৃত্যুর পর তাকে সান্ত¦না দিতে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফিরে এসেছিলেন। বিএনপি নষ্ট রাজনীতি করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুইডেনে বসে বিএনপির নেতারা গুম খুনের সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ভোটের রাজনীতির জন্যে প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় নিয়ে আসছে। এই খেলা শুধু প্রেসক্লাবে নয় দেশের জাতীয় নির্বাচনেও হবে। কাজেই সরকাকে এই বিষয়ে সতর্ক থেকে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করতে হবে। মুনতাসীর মামুন বলেন, নির্বাচনের আগের বছরকে তুষ্টির বছর হিসেবে ধরা হয়। এই বছরে সরকার সবাইতে তুষ্ট করে। কিন্তু এই তুষ্ট করার প্রক্রিয়ায় যাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যুদ্ধারপরাধীরা ঢুকে না পরে সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য জরুরী। রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে নাস্তিক মুরতাদদের সরকার বলেছিল। তারা ২০১৫ সাল থেকে বলছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোন বিরোধ নেই, তারা শুধু নাস্তিকতার বিরুদ্ধে। তাছাড়া হেফাজতের এক নেতা বলেছেন যে সরকার আগামী নির্বাচনে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করবেন তারা সেই ব্লকে সমর্থন দেবেন। কাজেই যারা বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেনে তাদের কাছে বিষয়টি উদ্বেগের। বক্তারা ক্ষমতার কারণে আওয়ামী লীগকে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাছে নতজানু না হওয়ারও পরামর্শ দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তদন্ত করতে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবেই।
×