ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ৩২৯ কোটি টাকার প্রশস্ততা প্রকল্প নিয়েও শঙ্কা

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারিত হয়নি এক শ’ বছরেও

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

 যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারিত হয়নি এক শ’ বছরেও

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর-বেনাপোল অতি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি গত ১০০ বছরেও সম্প্রসারণ করা হয়নি। এবার সম্প্রসারণে সরকার ৩২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও দুই ধারের দুই হাজার গাছ রাখা না রাখা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি, লিগ্যাল নোটিসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, ১৯১৩ সালে যশোরের কালেক্টর জনসন প্রথম ২৪ ফুট প্রস্থের যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নক্সা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। ৩৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার লম্বা মহাসড়কটির বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন করা হলেও গত ১০০ বছরেও সম্প্রসারিত হয়নি। বেনাপোল সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, গত ৫০ বছর আগে এ সড়কে প্রতি ঘণ্টায় ১০টি গাড়ি চললেও এখন হাজার খানেক চলাচল করছে। সারাদিনে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ ভারতে আসা যাওয়া করে। রাস্তার উপর যে পরিমাণ চাপ এজন্য চার না আট লেন দরকার। তিনি আরও বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই স্থলবন্দর থেকে ৪ হাজার ৫৮৯ দশমিক ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দিয়েছে। কত মালামাল আমদানি-রফতানি হলে এ টাকা রাজস্ব আদায় হয় সেটা সকলের অনুধাবন করতে হবে। এদিকে, মহাসড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত বছরের ২১ মার্চ ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ২৪ ফুট চওড়া থেকে বাড়িয়ে ৪০ দশমিক ৩৫ ফুট করার কথা রয়েছে। যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়ে তা শেষ হবে বেনাপোলের শূন্য রেখা পর্যন্ত। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। গেল ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে জনসভা থেকে যশোর-বেনাপোল রাস্তার কাজ উদ্বোধন করেন। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে যশোর-বেনাপোল রাস্তার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বৃক্ষ অপসারণ বিষয়ক সভা থেকে গাছ কাটার বিষয়ে একমত হন জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সভায় এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, এমপি মনিরুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল উপস্থিত ছিলেন। তবে এ নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। শুরু হয়েছে গাছ রক্ষায় আন্দোলনও। ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্মকর্তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আইনী নোটিস দিয়েছেন। সে কারণে প্রকল্পের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। যশোর সওজ ও জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, মহাসড়কটির দুই পাশে ১০০ বছরের বেশি পুরোনো রেইনট্রি রয়েছে ৭৪৫টি। মেহগনি, বাবলা, খয়ের, কড়ই, আকাশমণি, বট, শিশু, ঝাউ, আম, কাঁঠাল, সেগুন, শিমুল ও দেবদারুসহ ২ হাজার ৩১২টি গাছ। এসব গাছ বাঁচাতে সর্বশেষ গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) যশোর প্রেসক্লাবের সামনে ‘সচেতন যশোরবাসী’র ব্যানারে গাছগুলো রেখে রাস্তার উন্নয়ন করতে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নেয়া ওয়ার্কার্সপার্টির জেলা সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় যশোর রোড ধরে লাখ লাখ শরণার্থী গেছে ভারতে। ইতিহাসের সাক্ষী গাছগুলো কেটে মহাসড়ক করার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারও কারও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলে ইতিহাস ও পরিবেশের উপর করাত বসানো চলবে না। যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসান বলেন, গাছগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বহন করছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা করে রাস্তার উন্নয়ন করতে হবে। অন্যদিকে, সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করে আপাতত দুই লেন করা হচ্ছে। তবে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয় লেনের এক সমীক্ষা চলছে। দুই লেন হোক আর ছয় লেন হোক, গাছ রেখে মহাসড়কটি সম্প্রসারণ সম্ভব না। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, মহাসড়কের পাশে থাকা গাছের জীবনকাল শেষ হওয়ায় অনেক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে। জনগণ ও উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটা উচিত। তিনি আরও বলেন, গাছগুলোর মালিক যশোর জেলা পরিষদ। মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠিও তার দফতরে এসেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুতই গাছগুলো কাটা হবে।
×