ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপে কর্মী নিয়োগে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

মালদ্বীপে কর্মী নিয়োগে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলছে

ফিরোজ মান্না ॥ মালদ্বীপে বৈধ পথে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ‘যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি’ গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এই কমিটি ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় মালদ্বীপে বৈধভাবে কর্মী নিয়োগ হবে। বৈধ পথে কর্মী নিয়োগে মালদ্বীপের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে একটি দালাল চক্র অবৈধভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে। বর্তমানে দেশেটির সঙ্গে কর্মী নিয়োগের সমঝোতা কোন স্মারক নেই। নতুন করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জন্যও দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়শাত সান সাকির প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদারের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে সচিব মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান, অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নেয়া ও নতুন করে আরও কর্মী নিয়োগে। এ সময় সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যকার সমঝোতা স্মারকটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। চুক্তি নতুন করে করার জন্য রাষ্ট্রদূতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নমিতা হালদার জয়েন্ট কমিটি পুনঃগঠনের জন্য তার মাধ্যমে মালদ্বীপ সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশস্থ মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়শাত সান সাকির বলেন, বাংলাদেশী কর্মীরা কর্মঠ, সৎ ও নিষ্ঠাবান। মালদ্বীপের জনগণ বাংলাদেশী কর্মীদের পছন্দ করে। মালদ্বীপের বেশিরভাগ বিদেশী কর্মী বাংলাদেশের। তার সরকার বৈধভাবে বিদেশী কর্মীদের নেয়ার বিষয়ে কাজ করছে। এতে বাংলাদেশী কর্মীরা উপকৃত হবে। নতুন করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেন। বৈধ পথে কর্মী পাঠাতে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মালদ্বীপ ছোট একটি দেশ। পর্যটনের এই দেশটিতে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা চালু রয়েছে। কে সেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন আর কে বেড়াতে গেছেন তা বলা কঠিন। কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালদ্বীপের সঙ্গে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বর্তমানে কোন চুক্তি নেই। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে মালদ্বীপে কাজের কতটুকু ক্ষেত্র রয়েছে সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মালদ্বীপের বাজারে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরবে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যও অনেকটা কমে যাবে। মালদ্বীপের বিষয়ে বায়রার এক কর্মকর্তা বলেন, যারা মালদ্বীপে যাচ্ছেন তারা ওয়ার্কপারমিট নিয়েই যাচ্ছেন। জনশক্তি রফতানিকারকরা কেউ ম্যানপাওয়ার ও ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কর্মী পাঠায় না। এখন যদি অন্য কেউ জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানপাওয়ার ও ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কর্মী পাঠান সে দায় বায়রা নেবে না। অবৈধ পথে মালদ্বীপের মতো একটি নিরিবিলি বাজারে কি করে এত লোক যেতে পারে। দেশটিতে তেমন কোন কাজ নেই। মাছ ধরা আর হোটেলে বয়গিরি ছাড়া আর তেমন কিছু করার নেই। এক শ্রেণীর লোকের মাধ্যমে এ কাজ হতে পারে। তবে আপনি বিএমইটির সঙ্গে কথা বলেন। সেটাই ভাল হবে। দেশটির সঙ্গে আমাদের ‘বাইলেটারাল’ কোন চুক্তি নেই। এটা করার জন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও কোন লাভ হয়নি। আগে জনশক্তি নিয়োগে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি ছিল। ওই চুক্তি বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। চুক্তির সময় যারা দেশটিতে চাকরি নিয়ে গেছেন তারা কিন্তু ভাল বেতন পয়েছেন। আরেকটা মুশকিল হচ্ছে, পোর্ট এন্ট্রি ভিসার কারণে যে কেউ বিমানের টিকিট কেটে মালদ্বীপ চলে যাচ্ছেন। তারা সেখানে গিয়ে কাজে লেগে যেতে পারেন। এখানে কোন বাধা নেই। সব মিলে মালদ্বীপের বাজারটি একটি জটিল অবস্থার মধ্যদিয়ে চলছে। এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে বাজারটি হারাতে হতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করলে বাজারটি সুষ্ঠু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে দেশটিতে কাজের চাহিদা কেমন। চাহিদার বিষয়টি জানতে পারলে সেই অনুযায়ী কর্মীদের ম্যানপাওয়ার দেয়া হবে। অযথা লোকজনকে পাঠিয়ে দিয়ে বেকার বসিয়ে রাখার কিছু নেই। হাইকমিশন এই হিসাবটি আজ পর্যন্ত পাঠাতে পারেনি। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন, তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, অল্প দিনের মধ্যে এ ধরনের একটি রিপোর্ট পাঠাবেন। রিপোর্ট পেলে মালদ্বীপের বাজারে একটি শৃঙ্খলা ফিরবে। জনশক্তি রফতানিকারকরা আমাদের যদি ওই দেশের কোম্পানির অনুমতিপত্র দেখায় যে তাদের কর্মী প্রয়োজন তাহলে আমরা না দিয়ে তো পারি না। আমাদের তো জানানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মী চাকরি নিয়েই যাচ্ছেন। এটা যে তাৎক্ষণিক যাচাই বাছাই করা হবে সেই সুযোগ নেই। বেশ কয়েকটি দেশে অনলাইনে দেখা যায় কোন কোম্পানির কতজন কর্মী লাগবে। কিন্তু মালদ্বীপে তা সম্ভব না। কারণ ওদের সঙ্গে আমাদের ‘সার্ভার কানেকশন’নেই। অনলাইনে তাদের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কোন তথ্য আদান প্রদানই হয় না। উল্লেখ্য, দেশটিতে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশী রয়েছেন। অফিসিয়ালি অবশ্য ৬০ হাজারের কথা বলা হয়। কর্মীদের বেশিরভাগই হোটেলে বয় বেয়ারার কাজ করেন। কিছু কর্মী মাছ ধরার কাজ করছেন। ভিসা জটিলতা না থাকায় এবং অন এরাইভাল ভিসা হওয়ায় মালদ্বীপে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ কাজ করতে যাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ ওয়ার্কিং ভিসায় গেলেও অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশটিতে গিয়ে কাজ করছেন। ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কাজ করলেও তারা কেউ অবৈধ নয়। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন একটি দালাল চক্র। দুষ্টু চক্রের হাত থেকে কর্মীদের রক্ষা করার জন্য অচিরেই মালদ্বীপের সঙ্গে নতুন করে কর্মী নিয়োগ চুক্তি করা হচ্ছে।
×