ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শৈত্য প্রবাহে বীজতলা বিবর্ণ ॥ হতাশায় বোরো চাষীরা

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

শৈত্য প্রবাহে বীজতলা বিবর্ণ ॥ হতাশায় বোরো চাষীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ দীর্ঘ শৈতপ্রবাহের কারণে বোরো চারা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বোরো চাষীরা। গত দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে বিরাজ করছে প্রচন্ড ও মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ। চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশায় জেলার ৫ উপজেলার সর্বত্র বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে হলুদ বর্ন ধারণ করেছে। এ কারণে বীজতলায় হলুদ বর্ন ধারণ করে বোরো চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। অনেক বীজতলার বোরো চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্তায় চাষীরা তাদের বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বোরো বীজতলায় হরেক রকমের পলিথিন ঢেকে দিয়েও কিংবা কীটনাশক স্প্রে করেও তেমন কোন ফল পাচ্ছেন না বলে জানান বোরো চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানান, ঠাকুরগাও জেলায় এ বছর ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১২ হাজার ৯৪ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৪৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি । এ জন্য কৃষকরা তাদের ৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু গত পনের দিন ধরে তীব্র শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য কৃষকরা বীজতলায় পানি সেচ কিংবা প্লাষ্টিক দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেন কেউ কেউ। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি তার বেশিরভাগেরই হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অনেক বীজতলার বোরো চারা পোড়া বা ঝলসানোর মতো হয়ে গেছে। সদর উপজেলার লাউথুতি গ্রামের শামসুল আলম বলেন, ‘এবার দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে মোতাবেক আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু দুই দফায় টানা ১০/১২ দিনের শৈত্য প্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশায় বীজতলার সমস্ত চারা বির্র্বন হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, কৃষি উপ- সহকারী দের পরামর্শ মোতাবেক চেষ্টা করেও বীজতলা ভালো রাখতে পারছি না। চারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগুনের তাপে ঝলসে গেছে। বালিয়াডাঙ্গী ঊপজেলার হরিনমারী গ্রামের কৃষক ওয়াহেদুজ্জামান জানান, গত আমন মৌসুমে আকস্মিক বন্যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতি পোষাতে বোরো আবাদের সিদ্ধান্ত নেই। সেজন্য প্রয়োজনীয় বোরো বীজতলাতে বীজ বপন করি। কিন্তু শীতের দাপটে বিচনের রং হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। কুজিশহর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, আমার এক মাত্র অর্থকরী ফসল হলো এই বোরো ধান। সারা বছরের ভাত, পরিবারের খরচ ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ এখান থেকেই প্রতি বছর তুলে থাকি। কিন্তু বীজতলায় বিচন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি। ফরিদপুর গ্রামের আনোয়ার মেম্বার জানান, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষের জন্য রেডি করেছি। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ১০ শতক জমির বীজ তলার বীজ জ্বলে গেছে। কৃষি অফিসারদের দেয়া পরামর্শও তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। কানিকশালগাও গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, আমি অনেক দায় দেনার মধ্যে রয়েছি। দুইটা এনজিওতে লোন নিয়ে কিস্তি চালাই। যদি বোরো আবাদ করতে না পারি তাহলে এলাকা ছেড়ে দেনার দায়ে পালাতে হবে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আরাজী সরলিয়া গ্রামের বোরো চাষি আব্দুল জলিল। তিনি বলেন বোরো চারা রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছি তাও চারা নস্ট হতে শুরু করেছে। এ দূর্যোগের কারণে বোরো আবাদ করতে পারবো কিনা চরম দুঃচিন্তায় আছি।। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার মাওদুদুল ইসলাম জানান, ‘দুই দফার তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার কিছু কিছু বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ফিল্ড সুপারভাইজারগনকে চোখ কান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বোরো বীজতলা বাঁচাতে কৃষক ভাইদের করণীয় শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আক্রান্ত বীজতলায় প্রতিদিন ভোরে পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং চারার আগা থেকে শিশির ফেলে দিতে হবে। রাতে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে । চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত বীজতলায় প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি লিটার আজো অক্সিষ্ট্রবিন বা পাইরাকোস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাক নাশক মিশিয়ে বীজতলায় দুপুরে স্প্রে করা যেতে পারে।
×