ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিডিএফের অভিমত

বেসরকারী খাত প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন- সক্ষমতা বাড়ান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

বেসরকারী খাত প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন- সক্ষমতা বাড়ান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতকে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন আখ্যা দিয়ে উন্নয়ন সহযোগী ও দেশীয় নীতি-নির্ধারকরা বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য বেসরকারী খাতের প্রসার, বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন, রাজস্ব বাড়াতে এ খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার, জলবায়ু তহবিলের কার্যকর ব্যবহার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) সফল বাস্তবায়ন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ-২০১৮) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী দিনে ‘এসডিজি অর্থায়ন এবং বহুপক্ষীয় অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বিশেষ এ বৈঠকে এটি ছিল দিনের শেষ অধিবেশন। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রাম লিডার (ইক্যুয়েটেবল গ্রোথ ফিন্যান্স এ্যান্ড ইনস্টিটিউশনস) ক্রিস্টিয়ান ইজেল-জুকি ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। মূল প্রবন্ধে ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি অর্জনে আগামী ১৩ বছরে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বিদেশী উৎস থেকে ১৫ শতাংশ অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ। এই অর্থায়নের মধ্যে বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ, আর বাকি ৫ শতাংশ অর্থায়নের উৎস হবে উন্নয়ন সহযোগীরা। অবশ্য অর্থায়ন বলতে কেবল টাকা পয়সা নয়, জ্ঞান, প্রযুক্তি ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তারা এ সহযোগিতা করবেন। শামসুল আলম বলেন, অর্থায়ন ছাড়াও বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে না পারলে ব্যয় বেড়ে যায় এবং প্রকল্পের সুফল পাওয়া যায় না। এছাড়া নিজস্ব উৎস থেকে অর্থায়ন বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান রাজস্ব নীতি ও কাঠামোর সংস্কার জরুরী। এসডিজি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দক্ষতা এবং সক্ষমতার উন্নয়নও ঘটাতে হবে। প্যানেল আলোচনায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থায়নের সমস্যা সব সময় থাকে, থাকবে। যতটুকুই পাওয়া যায়, তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। এমডিজির ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি, আশাকরি এসডিজি অর্জনেও সফল হব। বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা ক্রিস্টিয়ান ইজেল-জুকি বলেন, এসডিজি অর্জনে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের ভবিষ্যত ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। বেসরকারী খাতকে প্রাধান্য দিয়েই সরকারের নীতি-পরিকল্পনা সাজানো প্রয়োজন। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থায়নের ওপর জোর দিতে হবে। সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশ উন্নতি করছে। তবে উন্নতির আরও সুযোগ আছে। যেমন- সমপর্যায়ের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত অনেক কম, প্রকল্প ব্যয় বেশি ও কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসও বেশি। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সরকারের নীতি-পরিকল্পনার আলোকে পিকেএসএফ দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করছে। দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট প্রকল্প বেশি কার্যকর। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও কম এবং এগুলো থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি উপকৃত হয়। এক পর্যায়ে তাদের সাহায্যেরও দরকার হয় না, তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেসরকারী খাতকে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন ধরে নিয়ে সরকার এগুচ্ছে। আমরা উন্নত অর্থনীতির দেশ হতে চাই, পাশাপাশি কাউকে পেছনে না রেখে এসডিজিও অর্জন করতে চাই। এজন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার বিশেষ বিশেষ কর্মসূচীও নিচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, এসডিজি একক কোন দেশের এজেন্ডা না। এটা বৈশ্বিক লক্ষ্য। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে অংশীদারিত্ব অন্যতম। আমার মতে, বাংলাদেশের জন্য এসডিজি অর্জনে বিদেশী সহযোগীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ এসডিজি অর্জনে অন্যতম প্রতিবন্ধক জলবায়ু পরিবর্তন। এর জন্য দায়ী উন্নত দেশ, আর এর অন্যতম ক্ষতির শিকার বাংলাদেশ। আগাম বন্যা ও প্রলম্বিত বর্ষার কারণে আমরা গত বছর চাল রফতানিকারক দেশ থেকে চাল আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি। সবার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণে এসডিজি নেয়া হয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী যে প্রভাব, তা মোকাবেলায় উন্নত দেশের ক্ষতিপূরণ ও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
×