ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ৩০ বিধবা পাচ্ছেন সরকারি বরাদ্দের বাড়ি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ৩০ বিধবা পাচ্ছেন সরকারি বরাদ্দের বাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর অঞ্চলের স্মরণীয় শোকগাঁথা নিয়ে বয়ে চলা সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ৩০ বিধবা এবার মাথা গোঁজার জন্য পাচ্ছেন সরকারি বরাদ্দের বাড়ি। গণহত্যায় স্বামী-স্বজন হারানো ও নির্যাতনের শিকার ওই ৩০ নারীর জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্প’র আওতায় ওই বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ওইসব বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এদিন সকালে বিধবা করফুলী বেওয়া ও হাসেন বানুর হাতে ওই প্রকল্পের ঢালাই কাজের উদ্বোধন হয়। ওইসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হক মাস্টার, উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহীদউল্লাহ তালুকদার মুকুলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে অন্যান্য সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় এবার মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি বিধবা পল্লীর সেই বিধবা ও তাদের সন্তান-সন্ততিরা। জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে ওই বাড়িগুলো নির্মাণ করছে। প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে ওইসব বাড়িতে থাকছে ২টি থাকার কক্ষ, একটি রান্নার কক্ষ, একটি পশুপাখি রাখার ঘর, পাশে নলকূপ ও শৌচাগার। বাড়িগুলোর রঙ হবে লাল ও সবুজ, যেগুলো দেখলেই বুঝা যাবে সেটা সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি। সরেজমিনে গেলে কথা হয় বিধবা নারী জবেদা বেওয়াসহ অন্যান্যদের সাথে। ওইসময় জবেদা বেওয়া বলেন, গণহত্যায় স্বামীসহ ৪ জনকে হারাইছি। রোজগারে কেউ না থাহায় মানুষের বাড়িতে কাম কইরা দিন চালাইছি। বাড়িগর না থাহায় আত্মীয় বাড়িতে থাকছি। শেহের বেটি হাসিনার কারণে গণহত্যায় বিচার পাইছি। নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইছি। অহন আমগরে থাহুনের লাইগা সরকার ঘরের ব্যবস্থা করছে। এতে আমগর কত খুশি ও আনন্দ বইলা বুঝাবার পাইতাম না। সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, ৩০ জন নারীর মধ্যে ৭ জন নারীর কোন ভিটামাটি নেই। তারা অন্যের বাড়িতে থাকেন। ইতোমধ্যে নির্যাতনের শিকার ৬ জনকে নারী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের যাচাই-বাছাই চলছে। এখন ৩০ জনকে একটি করো বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ওই অসহায় মানুষগুলোর বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ায় তারা দারুণ খুশি। আমরাও সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদউল্লাহ তালুকদার মুকুল এলাকার সাংসদ কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সোহাগপুরের বিধবাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় ৩০ জন নারীর পরিবারসহ এলাকাবাসী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ উল্লেখ করে বলেন, মতিয়া চৌধুরীর কল্যাণেই প্রত্যেক নারীকে প্রতিমাসে ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ২ হাজার, বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাক থেকে ৪শ ও সরকারি বিধবা ভাতা হিসেবে ৫শ টাকা সহায়তা পাচ্ছেন। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোহাগপুর গণহত্যায় স্বামী-স্বজন হারা, নির্যাতিত ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া ৩০ বিধবার নারীর জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্প’র আওতায় বাড়িগুলো দ্রুত নির্মাণে তাগিদ রয়েছে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ ওই বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে সুবিধাভোগীদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশিয় রাজাকার সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যায় ১৮৭ জন নিরিহ মানুষকে হত্যা করে। ওইসময় ৬২জন নারী বিধবা হন। এদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার ৬ নারীকে গত বছর সরকার নারী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও ১২ নারীকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতে যাচাই-বাছাই চলছে।
×