ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েদের পুঁজি করে টাকা কামানোই কাল হলো আজাদের

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

মেয়েদের পুঁজি করে টাকা কামানোই কাল হলো আজাদের

গাফফার খান চৌধুরী ॥ কাঁচা টাকার লোভে শেষ পর্যন্ত লালদালানের বাসিন্দা হল এক সময়ে গুলশান ও শেখ জামালের মতো অভিজাত ক্লাবে চাকরি করা আলাউদ্দিন আল আজাদ। মাঝখান থেকে শুধু শুধুই দীর্ঘ একবছরেরও বেশি সময় আত্মগোপনে থেকে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হলো। মেয়েদেরকে পুঁজি করে কাঁচা টাকা কামানোই কাল হলো তার জন্য। ঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তানের সুখী জীবন ছিল তার। অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক আগেই দুই ক্লাব থেকেই চাকরি চলে যায়। তার ছেলে এবার জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড প্রকাশের পর ঘৃণায়, দুঃখে, অপমানে আর সামাজিক লোকলজ্জায় আলাউদ্দিনের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা। গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার গুলশান থানাধীন নিকেতন এলাকা থেকে আলাউদ্দিন আল আজাদ (৩৭) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে গ্রেফতার হয়। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, আলাউদ্দিনের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান এলাকায়। সংসারে অভাব। এইচএসসি পাস করে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসেছিল। এক পর্যায়ে চাকরি হয় গুলশান ক্লাবে। সেখানে ওয়েটারের কাজ করত। এ কাজ করতে করতেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে। তাদের মাধ্যমে সে শেখ জামাল ক্লাবেও চাকরি নেয়। দুইটি চাকরি সে একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিল। রোজগার ছিল ভালই। বিয়ে করেছে। সংসারে স্ত্রী ছাড়াও এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেটি এবার জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। চাকরির পাশাপাশি অনেকের সঙ্গেই তার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ হতো। তাদের নানা চাহিদাও পূরণ করত। এভাবে সে ভাল টাকা রোজগার করছিল। সর্বশেষ সে মেয়েদের মাধ্যমে কাঁচা টাকা রোজগারের চেষ্টা করতে থাকে। অনেক মেয়েকেই বিয়ের প্রলোভন ও টাকার লোভে ঢাকায় এনে অসামাজিক কর্মকাণ্ড করিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবেই সে টাকা রোজগার করছিল। কিন্তু তার সেই পথ বন্ধ হয়ে যায় এক নারীর কারণে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ জানান, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ জান্নাত নামে আলাউদ্দিনের এলাকার এক নারীকে আলাউদ্দিন পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে নকল বিয়ে করে। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। পরবর্তীতে পারিবারিক বৈঠকে সত্যিকার অর্থেই ৫ লাখ টাকা কাবিনে আবার বিয়ে করে ওই নারীকে। ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই ভাটারা থানাধীন বোডঘাট এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে আসছিল। ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট থেকে আলাউদ্দিন ওই নারীকে ফেলে আত্মগোপনে চলে যায়। এ বিষয়ে ওই নারী ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর বনানী মডেল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত বছর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন তালুকদার দীর্ঘ চেষ্টার পর আলাউদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আলাউদ্দিন আল আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। আলাউদ্দিন আল আজাদ মূলত প্রতারক ও ধর্ষণকারী। বিভিন্ন সময় নানাভাবে একাধিক মেয়েকে অর্থ ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে বাসা ভাড়া নিয়ে তাদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল বলে জানা গেছে। আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ ৭/৮ টি মামলা আছে।
×