ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পণ্যের পরিচিতি বাড়ছে বাণিজ্যমেলায়

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

পণ্যের পরিচিতি বাড়ছে বাণিজ্যমেলায়

ওয়াজেদ হীরা ॥ সকাল থেকে দুপুর কিংবা বিকেল গড়িয়ে মধ্য রাত সর্বত্রই এখন ক্রেতা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলা। মাসব্যাপী এই মেলার অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই এখন ব্যস্ত। কেউ কিনতে কেউ বিক্রিতে কেউবা আবার পণ্যের পরিচিতেই সময় পাড় করছেন। ছুটির দিন ছাড়াও পরিবার পরিজন নিয়ে লোকজন মেলায় আসছেন নতুন কোন পণ্য থাকলে বা কোন অফার থাকলে তারও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রতিদিনের এমন চিত্রে মেলার সফলতা নিয়ে আশাবাদী আয়োজকরা আর খুশি ব্যবসায়ীরাও। মেলায় হরেক রকমের পণ্য বিক্রির সঙ্গে নতুন পণ্যের প্রচারণাও চালাচ্ছেন অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু প্রতিষ্ঠান মেলায় বিক্রির উদ্দেশে থাকলেও অধিকাংশ দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠান চায় পণ্যের পরিচিতি। অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যবসায়ীর এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্লেজার ও কাপড়ের স্টলগুলোতে দেখা গেছে বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে নতুন ডিজাইনের পণ্যের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। জুয়েলারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্টলগুলোতে বিক্রিই বেশি। আবার নিত্যপ্রয়োজন নয় এমন পণ্যের বিক্রি নয় বরং প্রচারণা করতেই দেখা গেছে। আইসক্রিম, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যগুলোর প্রসার বৃদ্ধিতে কাজ করছেন বিক্রয়কর্মীরা। আবার জুয়েলারি, সাজসজ্জা, কুকারিজ, খাবারের স্টলগুলোতে পরিচয়ের চেয়ে বিক্রিই বেশি। উদ্যোক্তাদের মতে, বাণিজ্যমেলা পণ্য প্রচারের বড় প্লাটফর্ম। এখানে যে প্রতিষ্ঠানের আয়োজন যত ভাল হবে, বছরের বাকি সময়ে সে ততো ভাল করবে। এজন্যই নতুন পণ্য মেলা থেকেই বিক্রি শুরু করা হয়। ক্রেতার সাড়া দেখে মেলা শেষে পণ্যগুলো বাজারে ছাড়া হয়। তবে সবকিছুর পিছনে বড় ভূমিকা রাখে বিক্রয়কর্মীরা। তাদের পারফরমেন্স জরুরী মনে করেন ব্যবসায়ীরা। যে যত সুন্দরভাবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সামনে প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা তুলে ধরতে পারবেন, ক্রেতাদের সাড়া ততই মিলবে। আর এ কথা চিন্তা করে প্রত্যেক স্টল ও প্যাভিলিয়নে বিক্রয়কর্মী রাখে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক প্রতিষ্ঠান মেলায় বিক্রির উপর কমিশনের ব্যবস্থাও রাখে। বিক্রয়কর্মীরা বলেন, মেলায় বিক্রির পারফরমেন্স মূল্যায়ন করেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। বেশি বিক্রি করতে পারলে কমিশনের পাশাপাশি থাকে উপহার। নাভানা ফার্নিচারের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমরা পণ্যের মান তুলে ধরছি। এদিকে, বুধবার মেলায় আসেন অভিনেত্রী ফারিয়া। ইভালোনা এ্যাকুয়াটিক প্রতিষ্ঠানে স্টলে যান। সেখানে উপস্থিত দর্শনার্থীরা ফারিয়াকে পেয়ে সেলফি উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। মেলা নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, মেলা মানেই হাজারও মানুষের মিলনমেলা। এই মিলনমেলা থেকে যার যার পছন্দসই পণ্যসহ বিনোদনও পাওয়া যায় বলে জানান ফারিয়া। ভ্রমণকারীদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কিস্তিতে ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকার অফারের সেবা মিলছে মেলায়। বিক্রয়কর্মীরা বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা কোটিপতি অফার দিচ্ছি। মাসিক খুব অল্প কিস্তিতে মালিকানা বিক্রি করছে বলেও জানা গেলো। আর কিস্তিতে তিন লাখ টাকায় যে কেউ হতে পারেন ওয়াটারপার্ক ও ফাইভ স্টার হোটেলের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিক রহমান জানিয়েছেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আমাদের এই মহাপরিকল্পনা। আমরা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছি। ফারিয়ার সঙ্গে সেলফি তুলে উপস্থিত দর্শনার্থী তানিয়া বলেন, মেলায় নানা পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হলাম। খুব ভাল লেগেছে। ছাড়ে নানা পণ্যে কিনতে পেরে খুশি এই ক্রেতা। এছাড়া ফার্নিচারের অন্যান্য প্যাভিলিয়নে দেখা যায় পণ্যের পরিচিতি দিতে ব্যস্ত প্রতিনিধিরা। এদিন মেলায় বাণিজ্য সচিবও পরিদর্শন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের নানা কার্যক্রম ও তাদের সেবার বিষয়ে দৃষ্টি দেন। প্রতিবন্ধী ও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিনোদনের জায়গাগুলো ঘুরতে বিভিন্ন রাইডে চড়ে সবার সঙ্গে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার সুযোগ দিয়েছে সারিকা ফ্যান্টাসি এমাজিং ওয়াল্ড শিশু পার্কটি। শিশু পার্কটি বিনামূল্যে অটিজম শিশুদের এই ব্যবস্থা করার জন্য প্রশংসা করেন বাণিজ্য সচিবও। পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুুবুর রহমান পলাশ বলেন, সমাজের যেসব শিশু সুবিধা বঞ্চিত তারাও তাদের পিতামাতার কছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুরা সব সময় সমাজের সব কিছু উপভোগ করতে পারে না। বাণিজ্যমেলায় যে শুধু স্বাভাবিক শিশুরা আসে তা নয়, প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুরাও আছে। কিন্তু তাদের জন্য বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এজন্য তাদের বিনোদনের জন্য আমরা এ ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সমাজের প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। সেটিও আমার এমন উদ্যোগের অনুপ্রেরণা। বিদেশী প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের পণ্যের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। এসব পণ্যের মধ্যে জামা, জুতা, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন মসলাও রয়েছে। বিভিন্ন ইরানী জিরা, হলুদ, মরিচসহ নানা বিদেশী মসলা বিষয়ে জানতে পারছেন দর্শনার্থীরা। দুবাই কালেকশনের বিক্রেতা অহিদুর আলম বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন বিদেশী পণ্য আছে। বিক্রি হচ্ছে তবে দর্শনার্থীরা না কিনলেও জেনে যাচ্ছেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলার রাত দশটায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দর্শনার্থীদের চাপে আরও দু’এক ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে। তবুও বিক্রয় আর প্রসার নিয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রেতা বিক্রেতা সবাই।
×