ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজাহানপুর কবরস্থানে অন্তিম শয়নে শাম্মী আখতার

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

শাহজাহানপুর কবরস্থানে অন্তিম শয়নে শাম্মী আখতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্তিম শয়নে শায়িত হলেন স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী শাম্মী আখতার। রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলীবাগের আমিনবাগ জামে মসজিদে আজ বুধবার বাদ জোহর জানাজা শেষে শাহজাহানপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। জানাজায় অংশ নেন সঙ্গীতাঙ্গনে তার সহকর্মীসহ শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা। পরিবার থেকে জানানো হয়, মরদেহের অবস্থার কথা বিবেচনা করে শহীদ মিনারে নেয়া হয়নি শাম্মী আখতারের মরদেহ। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার বেলা ৪টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। এই শিল্পী রেখে গেছেন জীবনসঙ্গী লোকসঙ্গীত শিল্পী আকরামুল ইসলাম এবং দুই ছেলে-মেয়ে সোহান ইবনে আকরাম কমল ও হুমাইরা চৌধুরী সাজিয়া। শাম্মী আখতারের স্বামী সঙ্গীতশিল্পী আকরামুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পাঁচ বছর ধরে ব্রেস্ট ক্যানসারে ভুগছিলেন শাম্মী আক্তার। তার ক্যান্সার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে ধরা পড়ে। তবে চিকিৎসায় কোন ত্রুটি ছিল না। এ অবস্থায় জীবনের দিনগুলোয় শাম্মী আক্তার বাসাতেই ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হৃদস্পন্দন না পাওয়ায় বাসাবোর হেলথ এইড হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শাম্মী আখতার ১৯৫৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের উৎসাহে শাম্মীর সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয় মাত্র ছয় বছর বয়সে, হাতেখড়ি ওস্তাদ গৌরবাবুর কাছে। বাবার বদলির কারণে দেশের কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে সঙ্গীতের তালিম নেওয়ার সুযোগ পান। তিনি ১৯৭০ সালে খুলনা বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হন। সেখানে আধুনিক গানের পাশাপাশি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ট্রান্সকিপশন সার্ভিস আয়োজিত লোকসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে খুলনার আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন। এটাই ছিল ঢাকায় তার প্রথম সঙ্গীত পরিবেশনা। এরপর তিনি বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন।পেশাদার শিল্পী হিসেবে শাম্মী আখতারের সঙ্গীত জীবনের সূচনা বেতারে গান গেয়ে। বেতারে গাওয়া তাঁর প্রথম গানটি ছিল নজরুলসঙ্গীত। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশে গেয়েছিলেন ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’। সত্তরের দশক পেরিয়ে আশির এই শিল্পী সম্পৃক্ত হন চলচ্চিত্রের গানে। ১৯৮০ সালে অশিক্ষিত ছবিতে গান গেয়ে প্লে ব্যাকে অভিষেক হয় এই শিল্পীর। আর চলচ্চিত্রের অভিষেক হওয়া সেই গানটিই তাকে এনে পৌঁছে দেয় তুমুল জনপ্রিয়তার শিখরে। রাজধানীর রঙিন জীবনের কথা সেই গানের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে’। আজিজুর রহমান পরিচালিত একই চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া ‘আমি যেমন আছি তেমন রব বউ হব না রে...’ গানটিও পেয়েছে দারুণ শ্রোতাপ্রিয়তা । এছাড়াও এ শিল্পী চলচ্চিত্রে প্রায় তিনশ গান গেয়েছেন। তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া উল্লেখযোগ্য অন্য গানগুলো হলো ‘বিদেশ গিয়া বন্ধু তুমি আমায় ভুইলো না’, ‘মনে বড় আশা ছিল তোমাকে শুনাবো গান’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন চিঠি দিও’, ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না’, ‘এই রাত ডাকে এই চাঁদ ডাকে’, ‘আমার মনের বেদনা বন্ধু ছাড়া বুঝে না’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী/খোদার পরে তোমায় আমি বড় বলে জানি’, ‘আমার নায়ে পার হইতে লাগে ষোল আনা’ ইত্যাদি। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না’ গানটি গেয়ে ২০১০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন শাম্মী আখতার। বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের গানের পাখি নামে শাম্মী আখতার বিগত পাঁচ বছরের বেশি সময় ভুগেছেন মরণবাধি ক্যানসারে। সেই অসুস্থ শরীরেও সুরের ভুবনের এই বাসিন্দা মাঝে মাঝে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অসুস্থতার মাঝেও বিশেষ বিশেষ অনুরোধে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গান গেছেন। গান গেয়ে মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার মধ্যেই নিজের জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে ফিরেছেন এই শিল্পী।
×