ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যা করব, তাতে যেন শিল্পমানটা থাকে॥ জয়া আহসান

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

যা করব, তাতে যেন শিল্পমানটা থাকে॥ জয়া আহসান

অনলাইন ডেস্ক ॥ তাঁর যোধপুর পার্কের ফ্ল্যাটের নেমপ্লেটে অন্য পরিবারের নাম। কলিং বেল বাজিয়েও ভাবছিলাম, ভুল ঠিকানা নয় তো! কিন্তু দরজা খুলতেই যে চেনা হাসি ও অকৃত্রিম আন্তরিকতার সঙ্গে অভ্যর্থনা পেলাম, তাতে কোনও ভুল ছিল না। পরে জানলাম, নেমপ্লেটে বদলানো হয়নি বাড়িওয়ালার নাম! গৃহকর্ত্রী নিজে নিলেন গ্রিন টি আর আমার জন্য বাংলাদেশ থেকে আনা আমের জুস। দু’টি বেডরুমের বিছানাতেই ডাঁই করা জামাকাপড় আর পাশে রাখা বড় বড় স্যুটকেস। লাগেজ আর পাসপোর্ট তাঁর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তিনি এই মুহূর্তে টলিউডের ব্যস্ত অভিনেত্রী জয়া আহসান। প্র: ভীষণ ব্যস্ত আপনি... উ: ওই শ্যুটিং নিয়েই (হাসি)। যদি আমি শুধু এখানে বা ওখানে কাজ করতাম, তবে এতটা ব্যস্ত থাকতাম না। এমন দিনও যায়, ঢাকায় শ্যুটিং সেরে রাতের ফ্লাইটে এলাম। সকালে এখানে লুক টেস্ট। দু’দিক সামলাতে গিয়েই নিজেকে আর সময় দেওয়া হচ্ছে না। প্র: কখনও ভেবেছিলেন, এখানেও এতটা সাফল্য পাবেন? উ: রোডম্যাপ করে কখনও এগোইনি। ‘আবর্ত’র পরেও কিছুটা সময় নিয়েছিলাম। এখন অবশ্য বেশ কিছু ডায়নামিক চরিত্রের অফার পেয়েছি। আমি তো নিজেকে শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই। নায়িকা তকমাটা চাইনি। প্র: তার মানে কি নাচ-গানের ছবি করবেন না? উ: কেন করব না? ওগুলোও তো চরিত্র। যা করব, তাতে যেন শিল্পমানটা থাকে। আর চরিত্রগুলো ভার্সেটাইল হয়। প্র: বাংলাদেশের এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘জয়া আমাদের গর্ব, আবার আক্ষেপও।’ ওই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসায় আপনার কোনও আক্ষেপ আছে? উ: আসলে বাংলাদেশে এক্সপেরিমেন্টাল ছবির বাজারটা এখনও সে ভাবে তৈরি হয়নি। আমার খুব ভাল একটা ছবি ‘খাঁচা’ হঠাৎ করে রিলিজ করল। ছবিটির মার্কেটিং ঠিক ভাবে করা হয়নি। আর একটি ছবি ‘বিউটি সার্কাস’, যেখানে আমি সার্কাসের ট্র্যাপিজের খেলা দেখাই, সেটা টেকনিক্যাল কারণে বহু দিন ধরে আটকে। শিল্পী হিসেবে ছবির রিলিজ নিয়ে একটু আক্ষেপ আছে। প্র: স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর্শকের প্রতিক্রিয়া কি মাথায় রাখেন? উ: কোনও চরিত্র বা দৃশ্য করতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার বাধা আছে কি না, সেটা আগে বিবেচ্য। একটি মেয়ে চরিত্রের খাতিরে স্মোক, ড্রিংক করতেই পারে। তবে তার যুক্তি থাকতে হবে। আমি ওই মাটি থেকেই জয়া আহসান হয়েছি, তাই ওঁদের কথাও ভাবি। এখানকার মানুষের ভাল লাগাকেও সম্মান দেওয়া আমারই দায়িত্ব। প্র: প্রযোজনাও তো করছেন... উ: আমি বরাবরই ভাবতাম, ছবি করার জন্য হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ খুব ভাল গল্প। ছবিটির জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছি। শ্যুটিং বাংলাদেশে হয়েছে। এখানে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শুরু করেছি। প্র: ভারতেশ্বরী হোমসের কথা মনে পড়ে? উ: খু-উ-উ-ব (স্মিত হাসি)। ভারতেশ্বরী হোমস এমন একটা বোর্ডিং ছিল, যা আমার আত্মবিশ্বাসটা গড়ে দিয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার চেয়ে আমার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের উপর বেশি নজর ছিল। লুকিয়ে বেঞ্চের নীচে বই পড়া, ছবি আঁকা, কলেজ ফাঁকি দেওয়া, কানে তিনটে পিয়ার্সিং করানো... আর ছোটবেলায় এমন গুছিয়ে ভূতের গল্প বলতাম, আমার বোন সে দিনও বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, ওটা মিথ্যে ছিল (হাসি)। প্র: অভিনেত্রী জয়ার অনিশ্চয়তার জায়গা কোনটা? উ: বারবার নিজেকে অতিক্রম করতে চাই। তবে মেধা মাঝে মাঝে নিম্নমুখী হয়। সেই ভয় আছে। মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই। আর এমন কাজ করব না, যাতে আমার শিল্পীসত্তা নষ্ট হয়। অভিনয় আমার ইবাদত (প্রার্থনা)। প্র: কোনও নেশা আছে? উ: সেটের লাইটিংয়ের দাদাদের কাছ থেকে শিখেছি পানমশলা খেতে (জোরে হাসি)। জরদা দেওয়া পান খেতে খুব পছন্দ করি। তবে ক্লিওপেট্রা (পোষ্য) আমার নেশা। মায়ের কাছ থেকে বাগান করার শখ পেয়েছি। আর আমি কিন্তু গাছ-চোর। আমার লাগেজ খুললেই গাছ পাবেন (দুষ্টু হাসি)। প্র: কলকাতা কতটা কাছের হল? উ: বাংলাদেশ যতটা কাছের, এই বাড়িঘরও ততটাই। তবে এখানকার বাংলা ছবিতে যে ‘বাঙাল’ ভাষা বলা হয়, সেটা খুব খারাপ। বাঙাল ভাষা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। ওখানকার ভাষায় বৈচিত্র রয়েছে। তাই এই ‘বাঙাল’ ভাষা শুনে বাংলাদেশের মানুষ খুব রেগে যায়। আর কলকাতার খাবারে মিষ্টি একটু বেশি দেওয়া হয়। তবে এখান থেকে পাতিলেবু, মুড়ি বাড়িতে নিয়ে যাই (হাসি)। প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার লিঙ্কআপের গুঞ্জন তো থামেই না। ওঁর ছবিতে আবারও কাজ করছেন... উ: শিল্পী হিসেবে তো ওর সঙ্গে কাজ করতেই চাই। আমরা একসঙ্গে পথ চললে সেটা একটা বলার বিষয় ছিল। কিন্তু এটা পুরোটাই গুজব। প্র: ঢাকায় আপনার বিশেষ বন্ধু আছে তো। নামটা বলবেন? উ: (জোরে হাসি) নাম তো বলা যাবে না। প্র: বিয়ের পরিকল্পনা? উ: এই মুহূর্তে অন্তত নয়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×