ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

পিংকির টেনিসময় জীবন...

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

পিংকির টেনিসময় জীবন...

বিদ্যা অর্জনের জন্য মানুষ যেমন সুদূর চীনে যায়, তেমনি টেনিসবিদ্যা অর্জনের জন্য সুদূর চীনে গিয়েছেন পিংকি। পিংকি বেপারী। ইংরেজী শব্দ পিংকির বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘ঈষৎ ফ্যাকাসে লাল’। পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুরে হলেও জন্ম ঢাকায় যার, সেই পিংকি অবশ্য দেখতে ঈষৎ ফ্যাকাসে কৃষ্ণবর্ণের। লাস্যময়ী, সুদর্শনা পিংকির জীবন কাহিনীটা বেশ চড়াই-উতরাইয়ের ও বৈচিত্র্যময়। তার পারিবারিক ইতিকথা, টেনিসে আসা, প্রেম-বিয়ে, টেনিস নিয়ে নানা ভাবনা-ক্ষোভ-আশা-পরামর্শ-পরিকল্পনা এবং চীনে টেনিস প্রশিক্ষণ নেয়ার নেপথ্য কাহিনী... এ সবকিছুই সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন জানা যাক তা- ৫ মার্চ, ১৯৯৭। মাদারীপুরের গৃহিণী মা মাকছুদা বেগম এবং বাসচালক বাবা সৈয়দ আলী বেপারী। তাদের ঘর আলো করে এই সুন্দর ধরণীতে এক কন্যা শিশুর আগমন। কন্যাটির বয়স যখন মাত্র ১০ তখন তার বাবা ২০০৭ সালে মারা যান আকস্মিকভাবেই হার্ট এ্যাটাক করে। কলিজার ধন সেই কন্যা শিশুর ‘পিংকি’ নামটা তিনিই রেখে গেয়েছিলেন। দুই ভাই ও এক বোন পিংকিরা। পিংকিই সবার ছোট। তারা তিন ভাই-বোনই খেলোয়াড়। বড় ভাই মাছুদ বেপারী শাটলার। ছোট ভাই মামুন বেপারী টেনিস খেলোয়াড়। বাবা বেঁচে থাকার সময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভাল থাকলেও তিনি মারা যাবার পর অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। ফলে বড় ভাইকেই বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। তাই তিনি আর বেশিদূর পড়াশুনা করতে পারেননি। কিন্তু বাকি দুজনকে ঠিকই পড়িয়েছেন। মামুন পড়ছেন অনার্সে। পিংকি উচ্চ মাধ্যমিকে। শৈশবে খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন পিংকি। সারাদিনই মেতে থাকতেন খেলাধুলায়। গোল্লাছুট, বউচি, কানামাছি, পাঁচ গুঁটি, ডাঙ্গুলি, ফুলটোক্কা... আরও কত খেলা। মন বসে না পড়ার টেবিলে। তারপরও রোজই স্কুলে যেতে হয়। যান অবশ্য খেলাধুলার লোভে। এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে পিংকির স্মৃতিচারণ, ‘স্কুলে যে কোন খেলাতেই সবার আগে নাম দিতাম। মজার ব্যাপারÑ আমি নাম দেয়ার আগেই স্যাররা আমার নাম দিয়ে দিতেন। কারণ তারা জানতেন আমি খেলবই খেলব। সবসময় সব খেলাতেই আমি জিততাম।’ পিংকির টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার গল্পটা কেমন? ‘আমার ভাই টেনিস খেলতো। তার খেলা দেখেই আমারও খেলতে ইচ্ছে হতো। সেই ইচ্ছে থেকেই স্বপ্নের পথে এগুনো, তখন থেকেই টেনিস-জীবন শুরু।’ যদিও শুরুতে ভাইয়েরা রাজি হননি। এক্ষেত্রে মায়ের সমর্থন পান পিংকি। ‘পরে যখন ভাল খেলতে শুরু করি তখন ভাইয়ারাও সমর্থন করা শুরু করে।’ পিংকির ভাষ্য। ২০০৭ সালে টেনিসে হাতেখড়ি হবার পর পরের বছর থেকে মাদারীপুর টেনিস কোর্টে পুরোদমে খেলা শুরু পিংকির। তার প্রথম কোচ বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (মাদারীপুর টেনিস কোর্টের কোচ)। তার মাধ্যমেই বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া ২০০৯ সালে। প্রায় নয় বছরের ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১৭টি ট্রফি জিতেছেন পিংকি। যার মধ্যে ৯টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৫টিতে রানারআপ এবং ৩টিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। সাফল্যের হারটা একটু কম হয়ে গেল না? ‘তা অস্বীকার করছি না। আসলে আরও ট্রফি হতো, যদি হাত ভেঙ্গে এক বছর এবং এ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের জন্য এক বছর এবং বিয়ের পর তিন বছর... সব মিলে পাঁচ বছর যদি খেলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই ট্রফির সংখ্যা আরও বেশি হতো।’ পিংকির আত্মপক্ষ সমর্থন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং পিকে ঘোষকে আদর্শ কোচ হিসেবে মানা পিংকি চান সারাজীবনই টেনিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে, ‘যতদিন পারবো খেলোয়াড় হিসেবে খেলব। তারপর কোচিং করে এবং সর্বশেষে টেনিসে ফেডারেশনের কোন একটা পদে মেম্বার বা টেনিস সংগঠক হতে চাই।’ হাত ভেঙ্গে এক বছরের নির্বাসনে যাবার কাহিনীটাও শোনান পিংকি, ‘বিকেএসপিতে দ্বৈত অনুশীলন করছি। পার্টনার রেবেকা সুলতানা জয়া শট মারতে গিয়ে অসাবধানবশত আমার ডান হাতে র‌্যাকেট দিয়ে মারে। ফলে হাত ভেঙ্গে যায়। হাতটা সেরে ওঠার ১৫ দিন আগেই ডাক্তারের নির্দেশ না শুনে আবারও খেলতে গিয়ে হাড়ের জয়েন্ট ছুটিয়ে ফেলি।’ এই ঘটনার পর বিকেএসপিতে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন পিংকি। ছুটি নিয়ে মাদারীপুরে চলে যান। আর ফিরে যাননি বিকেএসপিতে। যদিও তারা ফেরার তাগিদ দিয়ে বারবার চিঠি পাঠিয়েছিল পিংকিকে। কিন্তু কেন যেন আর মন টানেনি পিংকির, ‘আসলে তখন অনেক ছোট ছিলাম। অনেক হোমসিক ছিলাম। তাই আর যাইনি। বলতে পারেন বিকেএসপি আমার জীবনের এক অসমাপ্ত অধ্যায়।’ ভর্তি হওয়ার বছরেই ডিসেম্বরে বিকেএসপি ছাড়েন পিংকি। তখন তিনি ক্লাস সিক্সে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। এরপর সেভেনে ভর্তি হন মাদারীপুর পাবলিক ইন্সটিটিউট বয়েস এ্যান্ড গার্লস স্কুলে। পিংকির আদর্শ খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, রজার ফেদেরার এবং নোভাক জোকোভিচ। বাংলাদেশে শারমিন আলম শারদা এবং জামিল ভুঁইয়া। শেষেরজনকে কিছুটা অচেনা মনে হচ্ছে। কে তিনি? ‘আমার স্বামী।’ পিংকির লাজুক জবাব। বিয়েটা কিভাবে হলো, লাভ ম্যারেজ নাকি? ‘হ্যাঁ। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমরা বিয়ে করি। তবে সেটা দুজনের পরিবারের সম্মতিতেই।’ কত বছর মন দেয়া-নেয়া? ‘বছর নয়, মাত্র পাঁচ মাস।’ সেই কাহিনীটাও চমকপ্রদ। দুজনই নাকি একসঙ্গে পরস্পরকে ভাল লাগার কথা জানিয়েছিলেন। সেটা কিভাবে সম্ভব? ‘না, আসলে জামিলই আগে বলেছে। তারপরই আমি সাড়া দিয়েছি প্রেমে।’ দুজনের প্রেমকাহিনীর শুরু এক বিয়েবাড়ি থেকে। দেলোয়ার নামের এক টেনিস খেলোয়াড় কুমিল্লায় বিয়ে করেন। সেই বৌভাতের নিমন্ত্রণ পেয়ে ঢাকা থেকে পিংকি, জামিলসহ আট খেলোয়াড় সেখানে যান। বৌভাত শেষে সবাই ঢাকায় ফিরে এলেও জামিল ও পিংকি আরও তিনদিন সেখানে থেকে যান সবার জোরাজুরিতে। ঢাকায় রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে প্রায়ই দ্বৈতে অনুশীলন করতেন। সেখান থেকে বন্ধুত্ব, ভাল লাগা। কুমিল্লায় গিয়ে একে-অপরের প্রতি আরও বেশি করে দুর্বল-আকৃষ্ট হওয়া। তারপর ঢাকায় ফেরার পথে বাসে পাশাপাশি বসে জামিলের সেই মধুর-গোপন বাক্যটি সাহস করে বলে ফেলা, যা শোনার জন্য জগতের সব মেয়েরাই তৃষিত হয়ে থাকে। জামিলের মুখে ওই কথা তখন বাসের আশেপাশের যাত্রীরা শোনেনি? আবেগের বশে জোরে বলে ফেললে যদি যাত্রীদের হাতে গণপিটুনি খাওয়ার ভয় ছিল না? ‘হি হি হি! না, এমনটা হয়নি। কারণ তখন বাসা প্রায় ফাঁকাই ছিল। মাত্র ১০-১৫ জন যাত্রী। আর জামিল সেই পরম আকাক্সিক্ষত কথাটি বলেছিল অনেক নিচু গলায়। তাই রক্ষে!’ সে সময়টা বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের কোচ-কাম প্লেয়ার ছিলেন জামিল। পিংকিও খেলতেন একই দলের হয়ে। এতক্ষণে মিলে গেল অঙ্কটা। প্রেম না হয়ে কি পারে? দুজনে অবশ্য কখনও মিক্সড ডাবলসে পার্টনার না হলেও জীবন-সংসারে কিন্তু ঠিকই লাইফ-পার্টনার। জামিলের কোন্ গুণের জন্য তাকে পছন্দ করে বিয়ে করলেন? ‘সুন্দর ব্যবহার, বাজে নেশা করে না, ভাল মানসিকতা। বিয়ের পর এখনও সেই গুণগুলো দেখতে পাই ওর মাঝে। আমার ইচ্ছেকে অনেক গুরুত্ব দেয়। আমি সত্যিই অনেক সুখী।’ তাই বলে ঝগড়া-ঝাটি হয় না, এটা ভাবলে ভুল হবে। ‘ভালবাসাতে ঝগড়া না থাকলে হয়? তবে ঝগড়ার পর আবারও দুজনে মিলে যাই। সেক্ষেত্রে আমিই আগে সরি বলি। কারণ ওর সঙ্গে কথা না বলে এক মুহূর্তও থাকতে পারি না।’ পিংকির অকপট স্বীকারোক্তি। জার্মানির স্টেফিগ্রাফ ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্দ্রে আগাসি এই দুই টেনিস তারকা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন এবং কিছুদিন জুটি বেঁধে মিশ্র দ্বৈতও খেলেছিলেন। পিংকি ও জামিলও তো টেনিস-দম্পত্তি। নিজেদের বাংলাদেশের গ্রাফ-আগাসি ভাবতে কেমন লাগে? প্রশ্ন শুনে মজাই পেলেন পিংকি, ‘হ্যাঁ, জানি তাদের কথা। নিজেদের টেনিস-দম্পত্তি হিসেবে ভাবতে খুবই ভাল লাগে। ওদের মতো আমাদেরও মিশ্র দ্বৈত খেলার ইচ্ছে আছে। যদি কখনও সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই খেলব।’ মজার ব্যাপারÑ পিংকির স্বামীর জন্মও পিংকির মতো মার্চে। তবে পিংকির চেয়ে বছর দুয়েকের বড় তিনি (জন্ম ১ মার্চ, ১৯৯৫)। বিয়ের পর তারা হানিমুন করেন কক্সবাজারে। সে আরেক মজার কাহিনী। ওখানে তারা ছিলেন সাতদিন। কিন্তু কপাল এমনই খারাপÑ পড়েছিলেন টানা বৃষ্টির কবলে। সাতদিনই হোটেলবন্দী। ‘তারপরও বৃষ্টি মাথায় করেই আমরা বাইরে বেরিয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজেই সমুদ্র দেখেছি। সবমিলিয়ে মন্দ কাটেনি।’ পিংকি ফিরে যান সেই সময়টায়। বিয়ের ২১ দিন পরেই জামিল টেনিস কোচের চাকরি নিয়ে চলে যান চীনের ডংগুয়ান প্রদেশের গ্যাল্লপে। চাকরিটা পান বিকেএসপির টেনিস কোচ রোকনউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে। যে টেনিস ক্লাবে যোগ দেন জামিল, তার মালিক তিনজন। এদের একজন বাংলাদেশী রিজভী আবেদীন। তিনি বিকেএসপির ছাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে রোকনের সঙ্গে পরিচয়। এভাবেই রোকনের মাধ্যমে চাকরিটা পেয়ে যান জামিল। এদিকে স্বামী চীনে চলে গেলে তার বিরহ-যাতনায় দগ্ধ হতে থাকেন বেচারী পিংকি। অবশেষে চার মাস অপেক্ষা-চেষ্টার পর জামিল তাকে চীনে নিজের কাছে নিতে সফল হন। প্রায় বছর দুয়েক ধরে সেখানেই সংসার করছেন পিংকি। তবে সেখানে গিয়েও টেনিস ছাড়েননি পিংকি। স্বামী যেহেতু গ্যাল্লপ টেনিস ক্লাবের কোচ (৩০ জনকে টেনিস শেখান), সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে টেনিস অনুশীলনও করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে পিংকির ভাষ্য, ‘ওখানে প্র্যাকটিসের ফ্যাসিলিটিজ, ইক্যুইপেমেন্ট, মেডিক্যাল, ফিজিও... সবকিছুই দারুণ ভাল। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে অকল্পনীয়। ওখানে সপ্তাহে চারদিন বিকেলে জামিলের অধীনেই অনুশীলন করি।’ সকালে বা দুই বেলা কেন নয়? ‘খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না। রাতে মুভি বা নাটক দেখি মজা করে, অথবা ফেসবুক চালাই, এ জন্যই সকালে উঠতে পারি না।’ পিংকির ব্যাখ্যা।’ যদি পারতেন তাহলে নিশ্চয়ই দ্বিগুণ উন্নতি করতে পারতেন, এটা স্বীকার করেন পিংকি, ‘বাংলাদেশের চেয়ে চীনের অনুশীলন অনেক আলাদা এবং উন্নতমানের। তফাতটা টের পাই ভালভাবেই। এখানে অনুশীলন করে অনেক কিছুই শিখেছি ও উন্নতি করেছি।’ সেই সঙ্গে বোমাটাও ফাটালেন, ‘বাংলাদেশের অনেক কোচ আছেন যারা কাজের চেয়ে ভাব ধরেন বেশি। আর এখানে কোচরা ভাবের চেয়ে কাজটাই বেশি করেন।’ দেশে ফিরে খেললে আগের চেয়েও ভাল রেজাল্ট করার ব্যাপারে আশাবাদী-আত্মবিশ্বাসী পিংকি। যদিও দেশে কবে ফিরবেন তা জানেন না মাদারীপুর টেনিস ক্লাবের এই খেলোয়াড়। ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ম্যাচ? ‘অনেক আছে। একটার কথা বলি। তখন মাদারীপুর থেকে টুর্নামেন্ট খেলতে ঢাকায় আসতাম। সালটা মনে নেই। নাটরের নওরিনের বিরুদ্ধে ম্যাচ। সে খুবই ভাল খেলোয়াড়। সবাই যখন শুনলো ওর সঙ্গে আমার ম্যাচ, তখন আমাকে বলল খেলার দরকার নেই। বরং ওয়াকওভার দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরে যাও, খেললে তুমি তো গো-হারা হারবে! শুনে তো আমার বেজায় রাগ হলো। ৬-১, ৬-০ গেমে জিতে হাসতে হাসতে সবাইকে বলি, যাও এবার ওর ব্যাগ গুছিয়ে ওকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা কর।’ টেনিস ফেডারেশনের প্রতি পিংকির উপদেশ, ‘ফেডারেশনের উচিত প্রতি মাসে না হোক, প্রতি বছরে ৪টা ছেলে ও ৪টা মেয়েকে বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলার জন্য বা ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো। আর পাঠালেও সেটা তাদের যাচাই-বাছাই করে প্লেয়ারের যোগ্যতা অনুযায়ী পাঠানো উচিত।’ ফেডারেশনের ওপর বীতশ্রদ্ধও বটে পিংকি। এ নিয়ে সতীর্থদের উদ্দেশে তার উপদেশ, ‘যারা এখন ফেডারেশনের প্লেয়ার হিসেবে আছে তারা যেন তাদের পাওনাটা কড়ায়-গ-ায় আদায় করে নেয়। কারণ আমি বুঝে গেছি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা নিজে থেকে প্লেয়ারদের কিছুই দেবে না। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশের মেয়ে টেনিস প্লেয়াররা অনেক প্রতিভাবান। তাদের যদি একটু গাইড করা যায়, ফ্যাসিটিলিজ দেয়া যায়, তাহলে তারা অনেক ভাল করবে।’ বাংলাদেশে টেনিসের প্রাইজমানি অন্য দেশগুলোর প্রাইজমানির তুলনায় কিছুই না। তাই খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য প্রাইজমানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন পিংকি। সেই সঙ্গে বলেন, ‘সব গেমের খেলোয়াড়দের কম বেশি স্পন্সর আছে। কিন্তু টেনিস খেলোয়াড়দের স্পন্সর নেই। এক্ষেত্রে স্পন্সররা এগিয়ে এলে অনেক ভাল খেলোয়াড় তৈরি হবে। এতে আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের টেনিস উঁচুতে উঠবে। সেই সঙ্গে প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ আরও উন্নত করা এবং ছয়মাস পরপর বছরে দুবার বিদেশী কোচ দিয়ে কোচিং করাতে হবে। তাহলে যদি বাংলাদেশের খেলার উন্নতি হয়।’ চীনে গিয়ে চীনা মহিলা টেনিস তারকা শুয়াই ঝ্যাংয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা জানান পিংকি, ‘যে শহরে থাকি, সেই শহরে ঘুরতে এসে অন্য একটি টেনিস ক্লাবে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন শুয়াই। আর তখন সৌভাগ্যক্রমে তাকে দেখেছিলাম। তিনি খেলছিলেন, আমি দাঁড়িয়ে তার খেলা দেখছিলাম।’ স্বামীর ব্যস্ততার কারণে এখনও চীনের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেননি বলে আক্ষেপ আছে পিংকির। অবসরে চীনে শপিং করে, বাসায় বিভিন্ন নতুন আইটেম রান্না করার চেষ্টা করে, গান শুনে সময় কাটান পিংকি। ‘রান্নাবান্না মোটামুটি করতে পারি, তবে অল্প কষ্টতেই কান্না করে ফেলি। হি হি হি!’ পিংকি নিজের সম্পর্কে আরও কিছু অজানা তথ্য দিলেন, ‘রাতে একা থাকতে ভয় পাই। মিথ্যা কথা শুনলেই রেগে যাই। জামিল কোন উপহার দিলে খুব খুশি হই। জামিলকে জ¦ালানো, মোবাইল চালানো আর শপিং... এ তিনটি ছাড়া আমি অচল।’ টেনিস খেলার সুবাদে কখনও বিদেশ না গেলেও স্বামীর সুবাদে ঠিকই চীনে আসা পিংকির জীবনের মূলমন্ত্র তিনটি, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এবং ব্যবহারে বংশের পরিচয়।’ পিংকির প্রিয় বিষয়গুলো এরকম : রং-নীল, ফুল-গোলাপ, ফল-লিচু, খাবার-পানি পুরি, মাছ-ইলিশ, পোশাক-শাড়ি, পারফিউম-এডিডাস, অভিনয় শিল্পী-রাজ্জাক, সঙ্গীত শিল্পী-হৃদয় খান, বেড়ানোর প্রিয় স্থান-সিলেট। এখন দেখার বিষয়, আগামীতে টেনিস নিয়ে পিংকির ভাবনা, স্বপ্ন, পরিকল্পনা... সবকিছু কতটা বাস্তবে রূপ নেয়।
×