ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কেউ দস্যুতা করে পার পাবেনা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৫০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

কেউ দস্যুতা করে পার পাবেনা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে দস্যুতা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ চলবেনা। এদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী। এখন আর কেউ দস্যুতা করে পার পাবেনা। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। পূনরবাসন করছে। মঙ্গলবার বিকেলে চারটায় বরিশাল নগরীর রুপাতলীস্থ র্যাব-৮ এর কার্যালয়ে সুন্দরবনের তিন জলদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিপদগামী পথ পরিহার করে বাকী জলদস্যুদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাছান ইমন আল রাজীবের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিএমপি কমিশনার এসএম রুহুল আমিন প্রমুখ। সভার শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্দরবনের জলদস্যু বড়ভাই বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী ও সুমন বাহিনীর ৩৮ সদস্য, ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ হাজার ৯৬৯টি গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পন করেন। র্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানান, আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে রয়েছে বড়ভাই বাহিনীর প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা, সদস্য বাচ্চু শেখ, মাহামুদ হাসান, রফিকুল ইসলাম, ওলি ইজারাদার, গোলাম মাওলা, অলিয়ার শেখ, বরকত আলী শেখ, রেজাউল মোল্লা, রিপন শেখ, খালিদ ইজারাদার, মিকাইল ইজারাদার, বায়েজিদ মোল্লা, লিটন আলী ইজারাদার, মাজেদ ইজারাদার, এসএম মেহেদী হাসান মিলন, আব্দুল মজিদ ভাঙ্গী, ইউনুস আলীসহ ১৮ জন। এদিকে ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান ফারুক মোড়ল, রেজাউল সানা, অনিমেষ বাড়ৈ, কুতুব উদ্দিন গাজী, ইমদাদুল হক, আলমগীর হাওলাদার, আলামিন হাওলাদার, হাবিবুর রহমান সিকদারসহ আট সদস্য। সুমন বাহিনীর প্রধান জামাল শরীফ সুমন, কাইয়ুম জোমাদ্দার, আলামিন মৃধা, জামাল তালুকদার, রাজা ফরাজী, আলামিন খান, রফিকুল ইসলাম, আকরাম হোসেন গাজী, জুয়েল রানা, আবুল কালাম শেখ, মিলন হাওলাদার, ছমির তালুকদারসহ ১২ সদস্য আত্মসমর্পন করেছেন। আত্মসমর্পনকারীরা সকলেই খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। আত্মসমর্পনকারীদের জমা দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৪টি বিদেশী একনালা বন্দুক, নয়টি বিদেশী দোনালা বন্দুক, তিনটি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশী রাইফেল, ছয়টি বিদেশী এয়ারগান, পাঁচটি পাইপ গান ও একটি বিদেশী কাটা রাইফেল। মেজর সোহেল রানা প্রিন্স আরও জানান, “বড় ভাই, ভাই ভাই ও সুমন” বাহিনী সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মংলা, শ্যালাগাং, হারবাড়িয়া, ভদ্রা, সুন্দরবনের পশুর নদী এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী। এসব অঞ্চলের বনজীবী ও জলজীবী সাধারণ মানুষ তাদের টার্গেট ছিলো। ১৯৯৫ সাল থেকে বড়ভাই বাহিনী ও ২০০৮ সাল থেকে ভাই ভাই বাহিনী এবং ২০১০ সাল থেকে সুমন বাহিনীর আত্মসমর্পনকারী প্রধানদের নেতৃত্বে সুন্দরবনে দস্যুতা বৃত্তি করে আসছিলো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জলদস্যু ও ডাকাত বাহিনীর বিরুদ্ধে র্যাব-৮ এর সদস্যরা একাধিক কঠোর অভিযান পরিচালনা করেন। যে কারণে কোনঠাসা হয়ে আতংকিত হয়ে পড়ায় দস্যুরা অনুধাবন করেন অধিক অর্থ উপার্জন ও কু-প্ররোচনার স্বীকার হয়ে তারা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিলো। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে গত ২১ মাসে মোট ১৭টি জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পন করেছে। এরআগে সোমবার দিবাগত গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে র্যাবের বিশেষ অভিযানে কুখ্যাত জলদস্যু বড় ভাই বাহিনীর প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা, ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান ফারুক মোড়ল ও সুমন বাহিনীর প্রধান জামাল শরীফ সুমনসহ ৩৮ সদস্য আত্মসমর্পন করেন।
×