ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাইফ সাপোর্টের নামে অধিক অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী

প্রকাশিত: ০২:৩২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

লাইফ সাপোর্টের নামে অধিক অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী

সংসদ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রোগিকে জিম্মি করে লাইফ সাপোর্টের নামে অর্থ আদায়কারী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, এটা রীতিমত ক্রাইম (অপরাধ), ফৌজদারী অপরাধ। এসব অনৈতিক কর্মকান্ড কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টি রোধে শীঘ্রই একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আইনটি প্রণয়ন হলে এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে , প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়া হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার রাতে সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর ৭১-বিধিতে আনীত জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। নোটিশের জবাব দিতে গিয়ে অনেক নামি-দামী বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের কিছু হাসপাতালের আইসিউতে আটকে রেখে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেক সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু এতো জনসংখ্যার দেশে সবাইকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসে যে, অনেক মুমুর্ষ রোগীকে আটকে রেখে অনেক স্বনামধন্য হাসপাতালেও অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এসব হাসপাতালগুলো ফাইভ স্টারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চালানো হচ্ছে। একাধিকবার রোগিকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হয়। এমনকি রোগী মারা গেছে, অথচ তাকে জীবিত বলে লাইফ সাপোর্টে রেখে অর্থ আদায় করা হয়। এটি রীতিমত ক্রাইম, ফৌজদারী অপরাধ। অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, অনেকগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি যুগোপযোগী আইন আনা হচ্ছে। আইনটি হলে চিকিৎসা ও রোগীর চিকিৎসার নামে যারা অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষকে ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে হেলথ কার্ড দিয়ে ৫০ ধরণের রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি টাঙ্গাইলের মধপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতিতে পরীক্ষামূ চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই হেলথ কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। নোটিশদাতা জাতীয় পার্টির বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাজধানীসহ দেশের বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রাইফ সাপোর্টের নামে হাসপাতালে আটকে রেখে লাখ লাখ টাকা আদায় ও নানা ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে। দেশের বড় বড় স্বনামধন্য হাসপাতারসহ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে হাসপাতালে সেবার পরিবর্তে তারা কিভাবে অধিক পরিমাণ টাকা পাওয়া যায় সেদিকে তাদের লক্ষ্য থাকে বেশি। নোটিশে বলা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আইসিইউতে রেখে লাইফ সাপোর্টের নামে দিনের পর দিন রোগীকে রেখে দেয়। রোগীর স্বজনদের রোগী দেখতে পর্যন্ত দেয় না। দেখা যায় রোগী কয়েক দিন আগেই মারা গিয়েছে। এ বিষয়টি প্রায়ই পত্রিকায় লক্ষ্য করা যায়। একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের যদি এ ধরনের সেবা প্রদান করে তাহলে দেশের মানুষ কিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পাবে। এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য দেশের বেশিরভাগ রোগী বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। দেশের হাসপাতালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
×