ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন করে শুরু করাই যোগ্যতা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

নতুন করে শুরু করাই যোগ্যতা

নির্জন দ্বীপে একা একা বেঁচে থাকার চেষ্টা, গভীর সমুদ্রে একাকী ছুটে চলা কিংবা গহীন জঙ্গলে ভয়ঙ্কর প্রাণিকুলের সঙ্গে লড়াই করা মামুলি ব্যাপার তার। বলছি ডিসকভারি চ্যানেলের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গধহ াং ডরষফ-এর উপস্থাপক বেয়ার গ্রিলস (ইবধৎ এৎুষষং) এর কথা। বন্য পরিবেশে টিকে থাকার নানা কৌশল শিখিয়ে ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতিকূল পরিবেশে তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম আর তার বিদঘুটে খাবার খাওয়ার জন্যও তিনি বেশ জনপ্রিয়। বেয়ার একাধারে ব্রিটিশ অভিযাত্রী, লেখক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। বেয়ার গ্রিলসের জন্ম ১৯৭৪ সালের ৭ জুন। ব্যক্তিগত জীবনে তার রয়েছে অজস্র অর্জন ও সম্মাননা। বাবা মাইকেল গ্রিলস ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং মা সারা গ্রিলস। তার নামটা অবশ্য বাবা অথবা মায়ের দেয়া ছিল না। নাম দিয়েছিলেন বেয়ারের বোন লাটা পসিট। বেয়ার আয়ারল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন চার বছর পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই বেয়ারের মধ্যে ডানপিটেপনা জড়িয়ে ছিল দারুণভাবে। নৌকা চালানো এবং পাহাড়ে চড়া শিখেছেন একেবারে ছোটবেলায়। আট বছর বয়সে তিনি কাব স্কাউট হন। একই বয়সে বেয়ারের বাবা তাকে মাউন্ট এভারেস্টের একটি ছবি দেন। তখন থেকেই তার মনে গেঁথে যায় এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন। এখান থেকেই হয়তো এ্যাডভেঞ্চারের বীজ বপিত হয়েছিল বেয়ারের কচি মনে। কৈশোরে শেখেন স্কাই ডাইভিং এবং মার্শাল আর্ট। কে জানত সেই ছোট্ট ছেলেটিই এক সময় হয়ে ওঠবে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ্যাডভেঞ্চার ম্যান! ইটন হাউস, লুগ্রোভ স্কুল এবং ইটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ইটন কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি সেখানকার প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ইংরেজী ভাষা ছাড়াও স্প্যানিশ এবং ফরাসী ভাষাও জানেন। পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। এ সময় তিনি বিভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকার কলাকৌশলগুলো রপ্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জিকিউ সাময়িকীতে বেয়ার গ্রিলস তার জীবন শুরুর কথা বলতে গিয়ে বলেন- কীভাবে বাধা পেরোতে হয় আমার মনে আছে, তখন আমি বেশ ছোট। প্রচণ্ড শীতের সকালে বাবা আমাকে সমুদ্রের পাড়ে ঘোড়ায় চড়াতে নিয়ে গেলেন। প্রথমে আমাদের ঘোড়া খানিকটা দুলকি চালে হাঁটল, এরপর একসময় দৌড়াতে শুরু করল। ঘোড়ার গতির কারণে আমি কিছুক্ষণ পরপর ঘোড়ায় বাঁধা বসার আসন থেকে শূন্যে উঠে যাচ্ছিলাম। বেশ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি উড়ছি। কিন্তু হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি নিজেকে ঠাণ্ডা, নরম বালুর মধ্যে আবিষ্কার করলাম। বাবা মুখে বড় একটা হাসির রেখা টেনে হাততালি দিতে দিতে আমার কাছে এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘তুমি কতটা ভাল অশ্বারোহী, সেটা মূল কথা নয়। বরং কতবার পড়ে গিয়ে তুমি কতবার আবার ঘোড়ার পিঠে উঠে বসেছ, সে সংখ্যাটাই বড়। অশ্বারোহণ আর জীবন-দুটো ক্ষেত্রেই এটা তোমার কাজে আসবে।’ বাবা সেদিন আমাকে জীবনের মূল মন্ত্রটাই ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, যদি কেউ প্রথম একটা কিছু শুরু করে, তবে কাজের কোন এক মোড়ে এসে সে ওই নরম বালুতে নিজেকে আবিষ্কার করবেই। এটাকে বরং সুলক্ষণ হিসেবেই ধরে নেয়া উচিত। অর্থাৎ তুমি যা করছ, তা নিশ্চয়ই অনেক বড় কিছু। কেননা, একটা সহজ পথ তোমাকে কখনো বড় কিংবা চমকপ্রদ কিছুর কাছে নিয়ে যাবে না। বরং একটা ভয়ানক পথই অনেক অসাধারণ কিছু উপহার দিতে পারে। তাই আমাদের যোগ্যতা এটাই যে আমরা বার বার পড়ে গিয়েও আবার নতুন করে শুরু করলাম। যেমনটা ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে আমরা করে থাকি। জীবনটাও অশ্বারোহণের মতোই। বেয়ার গ্রিলস প্রতিদিন আমাদের শিখিয়ে যাচ্ছেন দুর্গম পরিবেশে ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই করতে। এর জন্য একান্ত প্রয়োজন শক্ত মনোবল ও হতাশ না হওয়ার মানসিকতা। তার জনপ্রিয়তার উৎস ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটিতে বেয়ার গ্রিলসকে দেখা যায় অরণ্যে, তুন্দ্রা অঞ্চলে কিংবা যে কোন দুর্গম পরিবেশে বেঁচে থাকার অসম্ভব লড়াই করতে। বেঁচে থাকার জন্য তাকে করতে হয় এমন সব কাজ, যা সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবাও যায় না। বন্যপ্রাণী শিকার করা, লতাপাতা, পোকামাকড় খেয়ে থাকা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার কলাকৌশল শেখানোই এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। এই অনুষ্ঠান দেখে এখন অনেকের বিভিন্ন ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে যেমন মনোবল শক্ত হওয়ার পাশাপাশি খাবার গ্রহণে খুঁতখুঁতে ভাবটা এখন আর অনেকের মধ্যে নেই। যেমন খাবারে চুল, পিঁপড়া, তেলাপোকা বা কিট জাতীয় কিছু পেলেই আগে খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। তরকারিতে হলুদ, মরিচ, মসলা কম হলেই খেতে অরুচি লাগত। মাংস সিদ্ধ কম বা শক্ত থাকলে খেতে ইচ্ছে করত না। এ ধরনের ছোটখাটো সমস্যা বেয়ার গ্রিলস তার এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×