ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর পাঁচ খালে পানি প্রবাহ বাড়াতে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর পাঁচ খালে পানি প্রবাহ বাড়াতে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীর প্রধান পাঁচ খালে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির সময় এসব জমির কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য মোট ৩০ দশমিক ৫৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করে খনন করা হবে। অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের খরচ হবে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ‘হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ী খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন/পুনঃখনন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বর্ষাকালে ঢাকার বড় খালগুলোতে পানির প্রবাহ বাড়বে। এতে জলজট ও জলাবদ্ধতা কমে আসবে। পাশাপাশি খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব টেকসই বসবাস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনভুক্ত (ডিএসসিসি) মান্ডা, সবুজবাগ, বাসাবো ও হাজারীবাগ এলাকা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা ও রামপুরা থানা এলাকা প্রকল্পের আওতাভুক্ত। সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা অন্যান্য সেবা সংস্থার পাশাপাশি নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। মহানগরীরর ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৪৪টি খাল, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতাধীন কিছু খাল বর্তমানে নগরবাসীর ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমেও প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে ঢাকা ওয়াসার আইনগত কোন কর্তৃত্ব নেই। এতে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা যেকোন সময় তাদের জমির শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নগরীরর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি মহানগরীর এলাকাভুক্ত কুর্মিটোলা এলাকা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকার গৃহস্থালি ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঢাকা ওয়াসাকে অনুরোধ জানায়। এছাড়া হাজারীবাগ খাল, বাইশটেকী খাল, মান্ডা খাল এবং বেগুনবাড়ী খালগুলোর সংস্কার করা প্রয়োজন। এজন্য খালসংলগ্ন জমি অধিগ্রহণ করা জরুরী। বর্জ্য পানি এবং বৃষ্টির পানি যাতে এসব খাল দিয়ে সহজে নেমে যেতে পারে, সেজন্য বাইশটেকী খালের ভাঁটিতে অবস্থিত সাংবাদিক কলোনি খালের পরে একটি খাল এবং মান্ডা ও বেগুনবাড়ী খাল প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া হাজারীবাগ খালের উজানে ও ভাঁটিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। কুর্মিটোলা নামে নতুন খাল খননের জন্য এসব জমিও অধিগ্রহণ করতে হবে। এসব খালের উন্নয়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য ঢাকা ওয়াসা এরইমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও শেষ করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট খালগুলোতে জলপ্রবাহ নিশ্চিত হবে। ফলে প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) পানি, গৃহস্থালির বর্জ্য পানি ইত্যাদি সহজেই খালের মাধ্যমে নির্ধারিত আউটফলে চলে যাবে। এতে জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূর হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট সড়কসমূহ টেকসই হবে এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকবে। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পভুক্ত এলাকার জনগণের জন্য টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সুবিধা সৃষ্টি হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় যে সব এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে সেগুলো হলো- হাজারীবাগ খাল- ৪ দশমিক ৩৫৫ একর, বাইশটেকী এবং সাংবাদিক কলোনি খাল- ৬ দশমিক ৩৮৫ একর, কুর্মিটোলা খাল- ৪ দশমিক ৬১৩ একর, বেগুনবাড়ী খাল- ১ দশমিক ৯০৫ একর, মান্ডা খাল- ১৩ দশমিক ৩০৪ একর। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামোর (ঘর, বাড়ি, ভবন ইত্যাদি) ক্ষতিপূরণ, রোড ক্রসিং কালভার্ট নির্মাণ, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার খাল খনন ও পাড় উন্নয়ন এবং দুই হাজার ২০০টি ডিমারকেশন পিলার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে ব্যয় করা হবে।
×