ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রণব মুখার্জী এখনও ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

 প্রণব মুখার্জী এখনও ঢাকায়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জী রবিবার পাঁচদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সকলকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটায় জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে প্রণব মুখার্জী ঢাকায় পৌঁছেন। প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে তার মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জীও ঢাকায় এসেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে নেমেই সকলকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আমি কয়েকদিন বাংলাদেশে আছি। অনেকের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছ্। বিমানবন্দর থেকে প্রণব মুখার্জী রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি এখানেই থাকবেন। রবিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার দেয়া নৈশভোজে তিনি অংশ নেন। আজ সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। মঙ্গলবার প্রণব মুখার্জী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাবেন। চট্টগ্রামে সূর্যসেনের বাড়ি পরিদর্শন করবেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রণব মুখার্জী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রীও দেবে। বুধবার তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরবেন। সেদিন তিনি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে তিনি অংশ নেবেন। বৃহস্পতিবার সকালে প্রণব মুখার্জী ঢাকা ত্যাগ করবেন। প্রণব মুখার্জী ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেবেন। চট্টগ্রামের একাধিক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন তিনি। ঢাকা সফরকালে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রণব মুখার্জীর সৌজন্য বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। আর আজ সোমবার বাংলা একাডেমিতে সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। ঢাকার মাটিতে এ সম্মেলনের মূল বার্তা হবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালবাসাকে ছড়িয়ে দেয়া। মূলত সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতেই ঢাকায় আসছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রণব মুখার্জী এর আগে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ছিল বাংলাদেশে তার প্রথম বিদেশ সফর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই বাঙালী রাজনীতিক। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়। তবে এবার প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঢাকা সফর না করলেও তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হবে। গত বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লী সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তারা সে সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বান্তকরণে সমর্থন দানের জন্য প্রণব মুখার্জীকে ধন্যবাদ জানান। তারা দু’জনেই ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর শেখ হাসিনার ভারতে নির্বাসিত জীবনে তাদের দুই পরিবারের স্মৃতিচারণ করেন। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে ভারতের সমর্থন দানের বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৫ জুন ভারতের রাজ্যসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন প্রণব মুখার্জী। ভারতের ত্রয়োদশ এবং প্রথম বাঙালী রাষ্ট্রপতি প্রণব কংগ্রেস দলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ভারতের অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জী ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইল সদর উপজেলার চিত্রাপারের ভদ্রবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মা মীরা রানী ঘোষ আর বাবা অমরেন্দ্র ঘোষের আদরের মেয়ে ছিলেন প্রণবপত্নী শুভ্রা ঘোষ। প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে প্রণয়ের পর ‘শুভ্রা মুখার্জী’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি (শুভ্রা)। শুভ্রা মুখার্জী পেশায় ছিলেন অধ্যাপক। গত বছর ১৮ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লীর একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে নয়াদিল্লী যান শেখ হাসিনা।
×