ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোনারগাঁও যাদুঘরটি আরও সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধ করা হবে ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

সোনারগাঁও যাদুঘরটি আরও সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধ করা হবে ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, সোনারগাঁও যাদুঘর ঘরটি আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। যাদুঘরটি আরও সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধ করা হবে। সোনারগাঁয়ে পুরো অঞ্চলজুড়ে পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত কর হবে। সরকার এ বিষয়ে র্দীঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। রবিবার দুপুরে সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন শেষে সংস্কৃতি মন্ত্রী একথা জানান। তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশের গ্রামীণ শিল্পীদের তালিকা প্রয়ণনের জন্য দেশব্যাপী জরিপ করা হবে। আমাদের দেশের উচ্চ পর্যায়ের শিল্পীরা অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে আছেন। সোনারগঁও ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এখানে কাঠের ঘোড়া, হাতি ও পুতুল তৈরি হয়। এটি সীমিত হতে হতে একটি দু’ পরিবারের মধ্য সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। ওই কাজটি তারা আর করতে চান না। একটি হাতী, ঘোড়া তৈরি করতে যে সময় লাগে তা বিক্রি করে তারা যে টাকা পান সেই টাকায় তারা আগ্রহী হারিয়ে ফেলেন। অথচ তারা খাট পালং ও চেয়ার-টেবিল বানালে অনেক টাকা তারা অনেক বেশি আয় করতে পারেন। অথচ আমরা সেই কাঠের পুতুল ঘোড়া, হাতি, পুতুল যখন বিদেশী রাষ্ট্রদুতদের হাতে তুলে দেয় তখন তারা খুব আগ্রহী হয়ে সেইগুলো নিয়ে যান। তিনি বলেন, গ্রামীণ শিল্পীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি আমরা তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে হয়তো তারা আবারও সেই কাজে ফিরে আসবেন। তিনি বলেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে বাংলাদেশের শীতল পাটি, জামদানি শাড়ী, বাউল গান ও মঙ্গল শোভা যাত্রা স্থান পেয়েছে। এটা আমাদের গর্ব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিনূর ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট শামছুল ইসলাম ভূইঁয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডিপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমূখ। পানাম সিটি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, পানাননগরীতে ৫২টি ভবন আছে। পানান নগরীতে কয়েকটি বিশেজ্ঞদল পরিদর্শন করে গেছে। তারা মনে করছেন সব কয়টি ভবন উদ্ধার করা কঠিন হবে। তবে সেইগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারব। কিন্তু আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারব কিনা তা সন্দেহ আছে। কারণ যথেষ্ট নমুনা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, পানাম নগরীতে দেশ-বিদেশী পর্যটকরা আসবেন। তারা এখানে যাতে অবস্থান করতে পারে, রাত্রিযাপন করতে পারেন, আহার করতে পারেন আমরা সেই ধরণের সুযোগ-সুবিধাগুলো গড়ে তুলবে। সত্যিকার অর্থে সোনারগাঁয়ের পুরো অঞ্চল জুড়ে পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। পরে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব উদ্বোধন করার পর মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। মেলায় থাকছে: বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৬০জন কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ফ্রি ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের নক্শি পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পটচিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পসহ মোট ১৮০টি স্টল থাকছে। এবারের লোকজ মেলায় ১৮০টি স্টলের মধ্যে হস্তশিল্প ৪৫টি, পোশাক শিল্প ৪৫টি, স্টেশনারী ও কসমেটিক্স ৩৪টি, খাবার স্টল ১৬টি, মিষ্টির ১০টি ও ৩০টি স্টল কারুশিল্পের কারুপণ্য উৎপাদন প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়ত-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথিপাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে। মেলা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
×