ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে ‘মাছের মেলা’ উৎসব

প্রকাশিত: ০১:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

হবিগঞ্জে ‘মাছের মেলা’ উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ পৌষ সংক্রাতিতে শুধু পিঠা খাওয়ার ধুম নয় বরং এ যেন আরও এক অপরূপ দৃশ্যের সূচনা ঘটানো হল। শুধুই নানা প্রজাতির মাছ আর মাছ। ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া দু’চোখ ভরে না দেখিলে বুঝতেই পারবেন না আপনি কোথায় এসেছেন আর কি দেখছেন। বরাবরের মতো এবারও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্ম ভূমিতে কয়েক হাত লম্বা বোয়াল আর বাঘাই, পাঙ্কাজ, কাতলা সহ অন্তত অর্ধ শতাধিক নানা ছোট-বড় মাছের আগমন নিয়ে হবিগঞ্জের সদর উপজেলাধীন পৈল বাজারে শুরু হয়েছে বহুল আলোচিত ২’শ বছরের এতিয্যবাহী ‘মাছের মেলা’ উৎসব। রবিবার ভোর থেকে এই মেলায় শুধু বিক্রেতারা নয়, হবিগঞ্জ শহর সহ জেলার ৮ উপজেলা এমনকি সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বি-বাড়িয়া, কুমিল্লা থেকেও এসেছে ক্রেতা-দর্শনার্থী সহ হাজার হাজার উৎসুক নারী-পুরুষ। ভোর ৬ টা থেকেই এই মেলায় আসতে থাকে শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারী-পুরুষ। একপর্যায়ে মেলা প্রাঙ্গন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। অনেকেই কয়েক হাত লম্বা ও ৪০ থেকে ৬০ এমনকি ৭০ থেকে ৮০ কেটি ওজনের বোয়াল, বাঘাই আর রুই-কাতলা, পাঙ্গাস, চিতল মাছ দেখে অভিভূত হন। সেই সাথে এসব মাছ সামনে-পেছনে রেখে কেউবা সেলফি তুলে তাৎক্ষনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে আসছে লাইক-নানা কমেন্ট। অন্যদিকে চাপিলা, চিংড়ি, কৈ, বাইম, গুটুম, চান্দা, বালিকারা ও পুটি মাছ সহ নানা প্রজাতির ছোট ছোট মাছও এই মেলায় উঠেছে। দাম চড়া হলেও কেউ না কেউ ছোট-বড় এসব মাছ কিনে বাড়ীতেও নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে পৈল গ্রামের বাসিন্দারা শুধু নয়,আশপাশের বাড়ী-ঘরের কর্তারা তাদেও আত্মীয়-স্বজন-শুভাকাঙ্খিদেও দাওয়াত দেয়ায় দুরদুরান্ত থেকে সউস্বাদু এসব মাছের তরকারী-ভাজা খেতে ছুটে এসেছেন স্ব স্ব বাড়ীতে। যেন এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে এসব গ্রামগুলোতে। মাছ তবে এবার লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে হাওর-বাওর, জলাশয়, নদী থেকে এই বাজারে বিক্রেতারা সরাসরি মাছ নিয়ে আসায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত মাছ খাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে সাধারন মানুষ। অনেকেই কেমিক্যাল মুক্ত মাছ আসাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হবে না বিধায় একটু বেশী দাম হলেও আমরা নির্দিধায় মাছ কিনছি। এদিকে এই মেলাকে ঘিরে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকার পাশাপাশি প্রতিবারের মতো নিজস্ব বাহিনী সহ সর্বজ্বন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমুদুল হক,তার পুত্র পৈল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ সহ সংশ্লিস্ট এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সার্বিক তদারকি করছেন। এদিকে জন¯্রােত থাকায় এই মেলা একদিনের হলেও আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চলবে বলে অনেকেই বলছেন। পৈল গ্রামের কয়েক বাসিন্দা জনকন্ঠকে বললেন, প্রতিবারই একটি বাঘাই মাছ লাখ,নয়তো ৮০/৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ফলে তাদেও ধারনা এবারও বাঘাই সহ বোয়াল-কাতলা তার চেয়ে বেশী মূল্যে বিক্রি হবে। যা হবে ২০১৮ সালের শুরুতে পৈল মাছের মেলা উৎসবের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
×