ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনীতে অর্থমন্ত্রী

বিনোদনে চলচ্চিত্র উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

বিনোদনে চলচ্চিত্র উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমি কৈশোরের আগে আগেই ছবি দেখতে শুরু করি। সিলেটের লালকুঠি ও ছায়াবাণী সিনেমা হলেই দেখা হতো ছবি। এই মুহূর্তে নামটা ঠিক মনে নেই। তবে স¤্রাট বাবরের কাহিনী নিয়েই দেখেছি আমার জীবনের প্রথম ছবি। তারপর দেখেছি ‘টারজান’। আমি এখনও মাঝে মাঝে এই ছবিটি দেখি। কলকাতার বয়স খুব বেশি দিনের না হলেও বোম্বের সঙ্গে সঙ্গে ওরাও চলচ্চিত্রে সমান্তরাল। সে দিক দিয়ে আমাদের ঢাকায় তেমন কিছুই নেই। কোন এক সময়ে আমাদের দেশে ভাল ভাল সিনেমা হল তৈরি হয়েছিল। মানুষ ছবি দেখে বিনোদিত হতো। এখন আর তেমন সেই জোয়ার নেই। অধুনা কিছু কিছু সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। আমি মনে করি বিনোদনের ক্ষেত্রে এই চলচ্চিত্র উৎসব অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’- জাতীয় জাদুঘরে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ‘ভালো ছবি, ভালো দর্শক, সমৃদ্ধ সমাজ’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ৯ দিনের এ উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ৬৪ দেশের ২১৬টি চলচ্চিত্র। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা গিরিশ কসরবলী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের অতীত ঐহিত্য রয়েছে। চলচ্চিত্র জগৎ এত বৈচিত্রে ভরপুর যা আমাদের ভাবায়। আমাদের মনের কথাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। আমি মনেকরি এ উৎসব দেশের চলচ্চিত্র জগতের উপর ভিন্ন এবং বিশেষ এক প্রভাব ফেলবে। আমাদের নৈতিকতা, সমাজসংস্কার যা একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে চলচ্চিত্র তার একটি। শুরুতে নায়ক রাজ রাজ্জাক, নির্মাতা মিজারুল কায়েস, সঙ্গীতশিল্পী আবদুল জব্বারসহ চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে জড়িত প্রয়াতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুস্তফা জামাল। উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯২২ সালে শুরু হওয়া আমাদের এ চলচ্চিত্র উৎসব দিন দিন আরও বড় পরিসরে হতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি এ উৎসব আগামীতে বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসবের কাছাকাছি পৌঁছতে সক্ষম হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সেমিনারের ভেন্যুগুলো হলো সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল ও প্রধান মিলনায়তন। এছাড়াও আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তন, রাশিয়ান কালচার সেন্টার ও স্টার সিনেপ্লেক্সে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে উৎসব চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিয়মিতভাবে মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এ পর্বটি চলবে ১৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রথম দিন ১৫ তারিখ বিকেল ৪টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও পরিচালক অপর্ণা সেন এবং তার সঙ্গে থাকবেন ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা মধুরিমা সিনহা। উৎসবে বাংলাদেশের পাশাপাশি আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইরান, ইরাক, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, চীন, কাজাখস্তান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল, সুইডেন, তুর্কী, সুইরাজল্যান্ডসহ ৬৪ দেশের বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ২১৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। তিনি বলেন, আজ ও আগামীকাল আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ‘ফোরথ ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা এ পর্বে তাদের চলচ্চিত্র অভিযাত্রার গল্পের পাশাপাশি নারী নির্মাতাদের নানা প্রতিবন্ধকতার গল্পও শোনাবেন। সভাপতির বক্তব্যে উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি আরও বাড়ছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হয় তুরস্কের নির্মাতা কাজিম ওজ’র আলোচিত চলচ্চিত্র ‘জার’। উল্লেখ্য, এবারের উৎসবে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ফার্স্ট এশিয়ান ফিল্ম ক্রিটিকস এ্যাসেম্বলি কনফারেন্সে এশীয় অঞ্চলের ১২ দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকাররা অংশ নেবেন। উৎসবের অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর পাঠশালায় শুরু হয়েছে অষ্টম ঢাকা আন্তর্জাতিক সিনে ওয়ার্কশপ। উৎসবে যোগ দিতে আসা বিদেশী চলচ্চিত্রকাররা এখানে বিভিন্ন সেশনে কর্মশালা পরিচালনা করছেন। এবারের উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫টি চলচ্চিত্র এই বিভাগে (ন্যূনতম ৭০ মিনিটব্যাপী ফিকশন ফিল্ম) প্রতিযোগিতা করছে। এ বিভাগে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতাকে প্রদান করা হবে ১ লাখ টাকা। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি এ বিভাগে পুরস্কৃত করা হবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক ও চিত্রনাট্যকারকে। ফরাসী নারী নির্মাতা জুলি বার্টুসেলি এবং সিলিনি সিএমার ৭টি ছবি দিয়ে সাজানো হবে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগটি। এই বিভাগের সবগুলো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তনে। উৎসবের বাংলাদেশ প্যানোরোমা বিভাগটি না থাকলেও এবার তা সংযোজিত হয়েছে। চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ফিপরেসি এই বিভাগে সমালোচক পুরস্কার দেবেন। বিভাগের ১০টি চলচ্চিত্র থেকে ১টি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং একজন নির্মাতা পাবেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার। ৪১টি সিনেমা নিয়ে সাজানো সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগ থেকে দর্শক জরিপে একটি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে। ১১টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে চিলড্রেন্স বিভাগটি। গণগ্রন্থাগারে শওকত ওসমান মিলনায়তন ও জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে এই চলচ্চিত্রগুলো। এই বিভাগ থেকে একটি চলচ্চিত্র পাবে ‘বেস্ট জুভেনাইল অডিয়েন্স বাদল রহমান এ্যাওয়ার্ড।’ রাজশাহীর আড়ানিতে লাল মাফলার দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দেয়া দুই শিশু বিজয়ী নির্মাতার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেবেন। ২৯ চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হবে স্পিরিচুয়াল ফিল্মস বিভাগ। রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে প্রদর্শিত সিনেমাগুলো থেকে একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র এবং একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার পাবে। ৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হচ্ছে উইমেন ফিল্ম মেকারস সেশন, যার সব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। এ বিভাগ থেকে একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র, একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার দেয়া হবে। দেশ-বিদেশের ৫২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে শর্ট এ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম বিভাগ। জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে এই চলচ্চিত্রগুলো। এই বিভাগে রয়েছে শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র ও শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার। ছয় সহ¯্রাাধিক শিক্ষার্থীদের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ॥ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পরিচালিত দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা মহানগরীর স্কুল পর্যায়ের ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয় শুক্রবার সকালে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন সংলগ্ন মাঠে ছয় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীদের দুই দিনব্যাপী পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় এ পুরস্কার বিতরণী তিনটি পর্বে ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৬ হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। উদ্বোধনী দিন প্রথম পর্বে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার একশ’ দুই জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে পুরস্কার গ্রহণ করেছে ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৭৫ শিক্ষার্থী। আজ শনিবার বিকেল ৩টায় ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ১৭ শিক্ষার্থীর মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে।
×