ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নমেলায় নানা শ্রেণীপেশার মানুষের ভিড়

চার লেন মহাসড়ক ব্রিজ স্থাপনা বিদ্যুত চিকিৎসা সেবার দৃশ্যমান চিত্র

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

চার লেন মহাসড়ক ব্রিজ স্থাপনা বিদ্যুত চিকিৎসা সেবার দৃশ্যমান চিত্র

বাবুল হোসেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন মেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেন বিশাল স্থির চিত্র মেলে ধরা হয়েছে একটি স্টলে। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের এই স্টলে রয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদে জেলার গফরগাঁও এবং ত্রিশালে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দীর্ঘ ব্রীজ নির্মাণের দৃশ্যমান উন্নয়নের আরও একাধিক দৃষ্টিনন্দন ছবি। এসবের বাইরে জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়নের ছবিও মেলে ধরা হয়েছে এই স্টলে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে। আরেক স্টলে মেলে ধরা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ-এলজিইডির গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের চিত্র। এতে বদলে যাওয়া গ্রামীণ জনপদের বর্তমান চেহারার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। মেলার নানা স্টলে বর্তমান সরকার মেয়াদের এরকম অসংখ্য উন্নয়নের ছবি মেলে ধরা হয়েছে। মেলায় আসা নানা শ্রেণী পেশার দর্শক সরকারের এসব উন্নয়নের সঙ্গে বাস্তবতা মেলানোর চেষ্টা করছেন। মেলার জনশক্তি রফতানির স্টলসহ পাট ও হস্তশিল্প পণ্যের স্টলগুলোতে ভিড় দেখা গেছে উপচেপড়া। নারী উদ্যোক্তারাও মেলায় তাদের পণ্যসামগ্রী মেলে ধরতে স্টল পেয়েছেন। সকাল-সন্ধ্যার এই ভিড় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রাতের সাংস্কৃতিক আয়োজনের ওপর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বাড়তি আয়োজন নিয়ে খুশি মেলার স্টল মালিকসহ দর্শক শ্রেুাতারা। মেলার উৎসব মুখরতাকে প্রাণ দিয়েছে এই সাংস্কৃতিক আয়োজন। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো মেলাকে নেয়া হয়েছে পুলিশী ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। এ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা নানা বয়সী দর্শক শ্রোতারাও। ‘উন্নয়নের রোল মডেল, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠ সংলগ্ন জিমনেসিয়াম ও জিমনেসিয়াম সংলগ্ন মাঠে শুরু হয়েছে ৩ দিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলা-২০১৮। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী গেল বৃহস্পতিবার সকালে এই মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা চলবে আজ শনিবার পর্যন্ত। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া মেলাকে আরও প্রাণবন্ত রাখতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পালা ছাড়াও কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে তুলে ধরতে এবং সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা অবহিতকরণ, এমডিজি অর্জনে সরকারের সাফল্য প্রচার এবং এসডিজি কার্যক্রমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে দেশ ব্যাপী জেলা প্রশাসন ৩ দিন ব্যাপী এই উন্নয়ন মেলার আয়োজন করে। মেলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং স্থানীয় নানা উন্নয়ন সংস্থা অংশ নেয়। মেলায় শতাধিক স্টল বসেছে। সরকারের নানা সংস্থার বাইরে পাট ও পাটজাত পণ্যসামগ্রী, খাবারের স্টলও বসে। মেলার বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের স্টলে মেলে ধরা হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদে বিদ্যুত ব্যবস্থার নানা উন্নয়নের চিত্র। এতে লোড শেডিং এর কবল থেকে বের হয়ে আসার নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয় গত ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেও। এখন সেই ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬০৪৬ মেও করা হয়েছে। গত ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২৭টি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। গত ২০১৭ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২টি। নতুন নতুন বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দূর করা হয়েছে লোড শেডিং। সংযোগ সুবিধাও সহজিকরণ করা হয়েছে। পুরো বিদ্যুত ব্যবস্থাকে আনা হয়েছে ডিজিটাল সেবার আওতায়। প্রিপেইড মিটার চালু ও ¯œ্যাপ শর্টের মাধ্যমে বিলিং সুবিধাসহ বিদ্যুত বিল প্রদানেও চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সুবিধা। গ্রাহকরা এখন এই সুবিধা পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিদ্যুত বিভাগের স্টল থাকা প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। এক কোটি আট লাখ গ্রাহক থেকে বেড়ে বর্তমানে দুই কোটি ৭৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত সংযোগের সুবিধা পাচ্ছেন। চিকিৎসা সেবার বৈপ্লবিক পরিবর্তনকেও মেলায় তুলে ধরেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের স্টলে। গত ২০১০ সালে জেলায় কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগী ছিল ১৫৯৩ জন। এখন সেটি কমে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২০১০ সালে ম্যালেরিয়া পজেটিভ রোগী ছিল ময়মনসিংহে ৪১৮ জন। এখন সেটি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১ জনে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে দাবি মেলার স্টলে থাকা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কর্মকর্তাদের। জেলা মৎস্য বিভাগের স্টলেও ছিল সরকারের সাফল্য মেলে ধরার প্রতিযোগিতার ছবি। বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় শিং, টেংরা, পাবদা, গুলশার চাষ নগর জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরের ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়িতেই সম্ভব! এমন অসম্ভবকে স্টলে মেলে ধরেছেন তারা। বলা হচ্ছে এখন থেকে এই চাষ হবে ক্ষুদ্র কাচের বাক্স ও কাচের জারের ভেতর! আর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, এখন থেকে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তার চাষ সম্ভব হবে পুকুরে! এমনটি এই সংস্থা মেলার স্টলে মেলে ধরেছে। এর বাইরে পুকুরে হবে বিলুপ্ত প্রায় সুস্বাদু মহাশোল ও লাল তেলাপিয়ার চাষ। মৎস্য বিভাগের নানামুখী উন্নয়নের কারণে বর্তমান সরকার মেয়াদে সারা বিশ্বে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ বলে দাবি করেছে সরকারের এই সংস্থাটি। হঁাঁস মুরগি ভেড়া ছাগল ও গরু মহিশের যে কোন রোগবালাই ও সমস্যা সমাধানে মোবাইল ফোনে সেবা প্রদানের দাবি করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্টলে থাকা কর্মকর্তারা। এসব উন্নয়নের বাইরে সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানের সেবাদান নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা গেছে মেলার স্টলগুলোতে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোতে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে সরকারের জনশক্তি রফতানির স্টলে। এসব স্টলে আসা দর্শনার্থীরা জেনে নিচ্ছেন, দ্রুততম সময়ে অনলাইনে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, করপ্রদান ও বিদেশ যাওয়াসহ কীভাবে নানা সেবা মিলবে। মেলার আয়োজকরা জানান, আগামী ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে আগামী ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবেশ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বিনিয়োগ বিকাশসহ সরকারের ১০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রচার করতেই এই উদ্যোগ। মেলায় আসা কলেজ ছাত্র মিলন জানান, সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা দেখানোর জন্য এই মেলার প্রয়োজন ছিল না। কারণ বিদ্যুত খাতের অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ এখন লোড শেডিং মুক্ত হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে এটি স্টলে দেখানোর কিছু নয়। দেশের উন্নয়নের সুফল মানুষ পাচ্ছে এটিই বড় কথা বলে জানান এই কলেজ ছাত্র।
×