ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিষমুক্ত সবজি চাষ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

বিষমুক্ত সবজি চাষ

সবজি ক্ষেতসহ ফসল রক্ষায় জমির চারপাশে ঘিরে দেয়া হয়। নানাবিধ রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য বালাইনাশক ক্ষেতে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু পাখির হাত থেকে সবজি ক্ষেত রক্ষায় ক্ষেতের ওপড়ে মশারির মতো জালের আবরণ দেয়া হয়, এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত। অনেকেই আবার মনে করছেন, এটি আধুনিক প্রযুক্তির একটি মাইলফলক। বিষয়টি যাই হোক না কেন, ফসল রক্ষায় কৃষকের এটি যে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, তাতে কারও এতটুকু সন্দেহ নেই। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় বিষমুক্ত বেগুন চাষের জন্য নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কৃষকরা ঠিক এমন পদ্ধতি চালু করেছেন। তারা ক্ষেতের ওপরে জাল (নেট) জাতীয় আবরণ টানিয়ে নিচে আবাদ করছেন। কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার, উপকারী পোকা-মাকড় সংরক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতিতে আবাদ করছেন তারা। এদিকে বেগুনসহ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে মাঠ দিবস ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় ১নং শাহাগোলা ইউনিয়নের মাগুড়াপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের বেগুন ক্ষেতের দৃশ্য তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকার সকলকে। হাতিয়াপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উত্তর পার্শ্বে মাগুড়াপাড়া রাস্তা সংলগ্ন তার বেগুন ক্ষেত। সম্পূর্ণ বেগুন ক্ষেতের ওপরেই শামিয়ানার মতো আবরণ দেয়া হয়েছে জাল দিয়ে। বুলবুলি পাখি খেয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের বেগুন। আর তাই বুলবুলি পাখির হাত থেকে বেগুনের ক্ষেত বাঁচাতে মশারির মতো করে ক্ষেতের ওপরে ও চারপাশে টানানো হয়েছে জাল। ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো জমির ফসল। এ ব্যাপারে ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, তার বেগুন ক্ষেতের বেগুন গাছে ফুল থেকে গুটি আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-ছোট পাখি ও কাঠবিড়ালি দিন-রাত বেগুন ক্ষেতে গিয়ে বেগুন নষ্ট করে। এগুলো বেগুনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বালাইনাশক প্রয়োগ করে ওইসব পাখি নিধন করা যায় না। ফলে, অনেক টাকা ব্যয় করে পাখির হাত থেকে বেগুনের ক্ষেত রক্ষার জন্য পাঁচ কাঠা জমির বেগুন ক্ষেতের ওপরে জালের আবরণ দেয়া হয়েছে। বুলবুলি পাখি ও কাঁঠবিড়ালির হাত থেকে ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে পর্যায়ক্রমে বাকি জমিগুলোতেও জালের আবরণ দেবেন বলে জানান তিনি। নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে মাগুড়াপাড়া গ্রামের কৃষক নবাব আলী ও মিঠু জানান, আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে আমরা যখন বিভিন্ন তরিতরকারী ও বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ করতাম, তখন বালাইনাশকের কোন ব্যবহার ছিল না। কিন্তু এখন ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে বালাইনাশকের পাশাপাশি ক্ষেতে মশারির মতো জালের আবরণসহ বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাউছার হোসেন জানান, বালাইনাশক প্রয়োগ করে পাখি নিধন করা যায় না। বেগুন ক্ষেতে পোকামাকড়ের পাশাপাশি পাখিও বেশি ক্ষতি সাধন করে। এ কারণে কৃষকরা অনেক সময় সবজি জমিতে জালের আবরণ ব্যবহার করছে। এতে একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে বিষমুক্ত সবজিও উৎপাদন হচ্ছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×