ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭ বছরে অগ্নিকা ক্ষতি প্রায় ৫০ কোটি টাকা

বগুড়া নগরীতে শতাধিক পুকুর ভরাট

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

বগুড়া নগরীতে শতাধিক পুকুর ভরাট

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ গত তিন যুগে বগুড়া নগরীর শতাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রেলের পুকুর ও পৌরসভার পুকুরগুলো ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে। পুকুর ভরাট হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপনে জলের আধার কমে গেছে। বড় ধরনের অগ্নিকা-ে জলের উৎস পাওয়া যায় না। আইনে পুকুর ভরাট করতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতিপত্র নেয়া দরকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নেয়া হয় না। বগুড়া নগরীতে বর্তমানে পুকুর রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। যেগুলো এ্যাডওয়ার্ড পার্কের ভেতরে, সূত্রাপুর সাতানী মসজিদের সামনে ও মালগ্রামে। সরকারী আজিুজল হক কলেজের নতুন ভবনের সামনের একটি লেক ভরাট করা হয়েছে। ছোট একটি লেক আছে। বগুড়া রেল স্টেশনের পশ্চিমে রেলের জায়গার অনেক বড় একটি পুকুর প্রভাবশালীরা দখল করে ভরাট করেছে। খোঁজ খবর করে জানা যায় বহুকাল আগে রেলের এই ভূমির ওপর বড় পুকুর কাটা হয়। এই পুকুর ভরাট করা হয়েছে রেলের কোন অনুমতি ছাড়া। প্রভাবশালী ব্যক্তি রেল ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে এই পুকুর ভরাট করে বহুতল মার্কেট গড়ছে। এর ধারে আরেকটি পুকুর ভরাট করে বেদখল করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই পুকুর জোড়া পুকুর হিসেবে পরিচিত। যা ঐতিহ্য হয়ে ছিল। সাতানী বাড়ির পেছনের পুকুরটি ভরাট করে সেখানে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বগুড়া শহরের নিউমার্কেটের ভেতরের পুকুরটি কয়েক বছর আগে ভরাট করে সেখানে বহুতল মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। এই নিউ মার্কেটে গত বছর ভয়াবহ অগ্নিকা-ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে ভূ-উপরিভাগের পানির উৎস খুঁজে পেতে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়। আগুনে নেভাতেও অনেকটা সময় লাগে। নগরীতে বড় ধরনের অগ্নিকা-ে ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেলে নিকটে কোন পানির আধার খুঁজে পাওয়া যায় না। পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে দেরি হয় ও ক্ষতির পরিমাণে বেড়ে যায়। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদী এখন শুকনো প্রায় মরা নদীতে পরিণত। ফায়ার সার্ভিস সূত্রের খবর- গত সাত বছরে শুধু বগুড়া নগরীতেই এক হাজারেরও বেশি অগ্নিকা-ে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। কথা ছিল শহরের বাণিজ্যিক এলাকা এবং বহুতল ভবনের আবাসিক এলাকায় ওয়াটার হাইড্রেন্ট বা ভূগর্ভে জলাধার নির্মিত হবে। ফায়ার সার্ভিস জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় দফায় দফায় এই জলাধার নির্মাণের সুপারিশ করার পরও কোন কাজ হয়নি। জলাধার নির্মাণের ব্যয় কে নির্বাহ করবে এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটছে না। ফলে বড় ধরনের অগ্নিকা-ে দ্রুত আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থাই গড়ে উঠছে না। বগুড়া নগরীতে মার্কেট ও আধুনিক মার্কেটগুলো এবং শহরের সরু ফিডার রোডের দুই ধারে এমন ভাবে বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে দেখে মনে হবে ঘিঞ্জি এলাকা। এসব এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসকে এই সরু পথ ধরে প্রবেশ করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। প্রায় সাত বছর আগে শহরের বাণিজ্যিক এলাকা ও মার্কেটগুলোতে অবস্থান বুঝে ভূগর্ভে ১শ’ বর্গফুট করে জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। যাতে ওইসব এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকাগুলোতে আগুন লাগলে এই জলাধারের পানি ব্যবহার করা যায়। সুপারিশ দেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে কে নির্মাণ করবে ভূগর্ভের এই জলাধার। ব্যবসায়ীরা ভূগর্ভে জলাধার নির্মাণে ঐকমত্য হলেও আর্থিক ব্যয় বরাদ্দে তারা রাজি নয়। তারা সরকারকেই নির্মাণ করতে বলছে।
×