ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী নগর সড়কে ওভার লোডিং যানবাহন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

রাজশাহী নগর সড়কে ওভার লোডিং যানবাহন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজশাহী নগরে দিনের বেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওভার লোডিং বালুর ট্রাক। এতে ধ্বংস হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো। এসব সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছরই যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া বেপরোয়া বালুর ট্রাকে সড়কে অকালে ঝরছে প্রাণ। অথচ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। রাত-দিন নগরীর সড়কগুলো দাপিয়ে ফিরছে বালুর ট্রাক। এতে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠলেও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বালু ট্রাকের সখ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পদ্মানদীর ১১টি বালুমহাল থেকে উত্তোলন হচ্ছে বালু। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। নগরীর উপকণ্ঠ পবার চরখিদিরপুর ও শ্যামপুর, হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এবং মদনপুর, কসবা ও চরহপরিপুর বালুমহাল তিনটি থেকে দেদারছে বালু উঠছে। একেকটি বালুমহাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০০ ট্রাক করে বালু যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। এছাড়া জেলার গোদাগাড়ীর তিনটি, চারঘাটের দুটি এবং বাঘার তিনটি বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। সেখান থেকেও প্রতিদিন শত শত বালুভর্তি ট্রাক পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। একেকটি দশ চাকার ট্রাক বহন করছে অন্তত ২৫ টন করে বালু। আর ৫ টন বহন ক্ষমতার ট্রাকে বালু যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টন করে। ওভার লোডের এসব ট্রাক বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে ফিরছে নগরীর সড়ক-মহাসড়ক। ফলে হরহামেশা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন চালক। অহরহ দুর্ঘটনায় ঘটছে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গেলো ২০১৭ সালে এ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৪১ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতেই মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। ফেব্রুয়ারিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। মার্চে ২০ জন ও এপ্রিলে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে মারা গেছেন ৩৯ জন। এছাড়া জুনে ৪২ জন, জুলাইয়ে ৩৩ জন, আগস্টে ১৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৬ জন, অক্টোবরে ২৬ জন, নবেম্বরে ২৯ জন এবং ডিসেম্বর ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩০৯ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেছেন এরা। এর বাইরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫০ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। রাজশাহী বিআরটিএর হিসেবে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এ অঞ্চলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০৪টি। এতে মারা গেছেন ২৫০ জন। আর আহত হয়েছেন ৩৯৫ জন। দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ সড়কে বেপরোয়া বালুর ট্রাক। শুধু দুর্ঘটনা নয়, বালুর ট্রাকের কারণে নষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলো। ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কগুলোর পেভমেন্ট ও সোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ছোটবড় অসংখ্য খানা-খন্দ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্রিজ ও কালভার্টগুলো। জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে সচল রাখা হচ্ছে সড়কগুলো। ভাঙাচোরা সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে আরও দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে সড়ক মেরামতে ২৭৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার পরিকল্পনা নিয়েছে সড়ক বিভাগ। এর আওতায় ওই ৭০৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়কেরই পেভমেন্ট মজবুতিকরণসহ সার্ফেসিং করা হবে। এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দফতর জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল রাজশাহী জেলায় মোটরযান অধ্যাদেশে অভিযান চালানো হয়েছে ২২৬টি। এক হাজার ২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। আদায় করা হয়েছে ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা। তবে ওভার লোডিং বালুর ট্রাককে এ আইনের আওতায় নিয়ে আসার খবর নেই। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ওভার লোডেড বালুর ট্রাক ও ডাম্পার চলাচলে নগরীর সড়কগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। নির্দিষ্ট পথে বালুর ট্রাকগুলো চলাচল করলে সড়কগুলো বাঁচে। দিনের বেলায় বালুর ট্রাক নগরীতে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকা জরুরী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী বলেন, পদ্মা থেকে বালু ও মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী ও রাজশাহী নাটোর-চারঘাট-বাঘা সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সওজের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু রওশন বলেন, সড়কগুলোর যে অবস্থা তাতে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ না করলে সুফল মিলবে না। বারবার মেরামতে ফল মিলছে না। সড়ক-মহাসড়কের এ দশার জন্য দায়ী ওভার লোডিং যানবাহন। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
×