ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কমেছে যাত্রী হয়রানি নেই হকারদের উৎপাত

বদলে গেছে সদরঘাট টার্মিনাল

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

বদলে গেছে সদরঘাট টার্মিনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রীদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের মধ্য দিয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সদরঘাট নৌ-টার্মিনালের। মুক্তি মিলেছে হকার-কুলিদের দৌরাত্ম্যে যাত্রী হয়রানির। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ার পাশাপাশি বিস্তৃত হচ্ছে টার্মিনাল এলাকা। বদলে যাওয়া এ টার্মিনালের কারণে স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছে দক্ষিনাঞ্চলমূখী যাত্রীরা। প্রতিদিন ২২টি পল্টুন থেকে প্রায় ৮০টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে এবং ভিড়ছে, যেখানে যাত্রীসংখ্যা থাকে সাধারণত ১৫-২০ হাজার। তবে ঈদসহ বিশেষ উৎসবে এ সংখা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কিছুদিন আগেও কুলি, হকার, ইজারাদারদের দ্বারা যাত্রী হয়রানির ব্যাপকতা ছিল চরম। যাত্রীদের মালামাল আটকে মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায়, যাত্রী মালামাল নিয়ে কুলিদের টানাটানি, এমনকি সেই মালামাল লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটত অহরহ। এছাড়া হকারদের দ্বারা হয়রানি তো ছিলই। বর্তমানে যাত্রীদের নানামূখী হয়রানির এ দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে করেছে হকার, কুলি ও ইজারামুক্ত। যাত্রীদের লাগেজসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে আকাশী রঙের পোশাকধারী ৮০ জন পোর্টারকে। তাছাড়া টার্মিনাল এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নেয়া হয়েছে নান পদক্ষেপ। টার্মিনালের বিভিন্নস্থানে টানানো হয়েছে ‘হকারমুক্ত টার্মিনাল’ সাইনবোর্ড। টার্মিনালের নিরাপত্তা করা হয়েছে আরও জোরদার। এজন্য টার্মিনালের ভিতরে ২৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ডিএমপি, আনসার ও নৌ-পুলিশ। ফলে কমেছে আহাজারি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়াও যাত্রীদের সুবিধার জন্য সম্প্রসারিত টার্মিনালের নতুন ভবনের দোতলায় বসার স্থান এবং ভিআইপি যত্রীদের জন্য ওয়েটিংরুম নির্মাণ করা হয়েছে। নিচ তলায় রয়েছে টিকেট কাউন্টার। বড় করা হয়েছে পার্কিং ইয়ার্ড। যাত্রী পরিবহনে জেলাভিত্তিক আলাদা আলাদা ঘাট করা হয়েছে। চাঁদপুর ও কাছের জেলার যত্রীদের জন্য লালকুঠির ঘাট, পটুয়াখালী ও গলাচিপার যাত্রীদের জন্য ওয়াইজা ঘাট এবং বরিশাল, ঝালকাঠি, হুলারহাটের যত্রীদের জন্য ১,২ ও ৩ নং ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নদীর এপার-ওপার যাতায়াতের জন্য তিনটি নৌ-ঘাটের সংস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে ছয়তলা আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখান থেকে দূরপাল্লার জাহাজ তথা লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে। যাত্রী বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখেই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও টার্মিনাল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বিআইডব্লিউটিএ। সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যাত্রীদের মতে কুলিদের দৌরাত্ম্য থেকে পুরোপুরি মুক্তি না মিললেও তা অনেকাংশে কম। তারা বিআইডব্লিউটি-এর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং আশা করছেন উৎসবগুলোতে যখন উপচে পরা ভিড় থাকে তখন যেন যাত্রীদের দুর্ভোগের স্বীকার হতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে নৌ কর্তৃপক্ষকে। এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদিন জানান, সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি রোধ, নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সেক্ষেত্রে মাঝি কুলি থেকে শুরু করে আনসার, ডিএমপি সবার সঙ্গে ধাপে ধাপে বসে আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। যাত্রীদের অভিযোগ জানতে অভিযোগ বাক্স খোলা হয়েছে। আগামীতে নতুন নতুন আরও পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। কুলি ও হকারদের হয়রানির বিষয়ে তিনি জানান, প্রতিদিন টার্মিনাল পরিদর্শন করছেন বিআইডব্লিউটি-এর কর্মকর্তারা। তারপরও হকার পাওয়া গেলে বা কুলিদের দ্বারা হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল বা জরিমানা করা হচ্ছে।
×