ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনিকা ও আঁখির মনের কথা

আবার মাঠে নেমে পড়েছে সাফ চ্যাম্পিয়ন মারিয়ারা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

আবার মাঠে নেমে পড়েছে সাফ চ্যাম্পিয়ন মারিয়ারা

রুমেল খান ॥ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যের চূড়ায় ওঠার প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে সাফ জয়ী (অ-১৫) নারী ফুটবলাররা নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় আবারও মাঠে নেমে পড়ছে। ১৫ দিনের ছুটি কাটিয়ে বাংলার মেয়েরা আবারও ফিরল চেনা বাসভূমে, বাফুফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। নতুন সাফল্যের প্রত্যাশায়, নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় আজ থেকে আবারও নেমে পড়ছে মাঠে মারিয়ারা। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়- আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। বাফুফের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বছর থেকেই মেয়েদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে দেশে বা বিদেশে। ক্যাম্পে আপাতত আছে ৩৫ ফুটবলার। সংখ্যাটা অচিরেই ৫০-এ উন্নীত করা হবে। নতুন বছরে পাঁচটি শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে মারিয়াদের। এগুলো হচ্ছে : তিনটি সাফ টুর্নামেন্ট (অ-১৫, ১৮ এবং সিনিয়র সাফ), একটি ফুটসাল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য) এবং এএফসি অ-১৬ ও ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব আসর। বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাফুফে ভবনে এসে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে রিপোর্ট করতে থাকে জাতীয় দলের মহিলা ফুটবলাররা। কথা হয় দলের খেলোয়াড় মনিকা চাকমা, আঁখি খাতুন, নার্গিস আক্তার এবং কোচ ছোটনের সঙ্গে। খাগড়াছড়ির সুমন্তপাড়ার মেয়ে মনিকা ২০১৫ সালে বাফুফের ‘প্ল্যান অ-১৫ বালিকা ট্যালেন্ট হান্ট’ ফুটবল কার্যক্রমের মাধ্যমে দৃশ্যপটে আসে মনিকা। লিওনেল মেসির গুণমুগ্ধ মনিকা। তার খেলার ধরনও মেসির মতো। এ জন্য অনেকেই তাকে ‘মেসিকা’ বলে। তার ভাষ্য, ‘ছুটি কাটিয়ে এলাম। এখন আমাদের মাথায় আবারও খেলার চিন্তা। লক্ষ্যÑ সামনের টুর্নামেন্টগুলোতে কিভাবে ভাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় এবং দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানো যায়। এ জন্য আমাদের অবশ্যই ভালমতো অনুশীলন করতে হবে। নিজের ব্যাপারে বলবোÑ থাইল্যান্ডে গিয়ে যেমনটা খেলেছিলাম, এবার ঢাকায় তারচেয়ে ভাল খেলেছি। এরপর আসরে ঢাকার পারফর্মেন্সকেও ছাড়িয়ে যেতে চাই।’ বাড়ি গিয়ে দুই একদিন একা একা বল নিয়ে প্র্যাকটিস করেছে মনিকা। তার বাড়ির নিচেই একটা জমি আছে, সেখানেই প্র্যাকটিস করেছে। ‘খেলার মাঠে যেতে পারেনি, কারণ ওটা বাড়ি থেকে অনেক দূরে।’ মনিকা খুবই খুশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারায়। ‘এতে আমার পরিবার খুবই আনন্দিত। আমার গ্রামের লোকেরাও এতে দারুণ খুশি ও গর্বিত। আমার জন্য সবাই দোয়া করেছে।’ বাফুফের ক্যাম্পের মজাদার খাবার খেয়ে এতই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল মনিকা, এবার ছুটিতে বাড়ি যেয়ে সেখানকার খাবার খেয়ে নাকি ভালই লাগেনি তার। আরও মজার ব্যাপারÑ দোকানে কিছু কিনতে গেলে দোকানিরা মনিকাকে চিনতে পেরে ডিসকাউন্ট দিয়েছে। প্রতিবেশী আর স্বজনদের বাঁকা কথা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলে কুড়িয়ে যাচ্ছে সুনাম। নিজের অদম্য চেষ্টায় কিশোরী এই ফুটবলার নজর কেড়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। নাম তার আঁখি খাতুন। সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার। গড়নে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার আঁখি ডিফেন্ডার। অনেকেই তাকে ডাকে ‘কায়সার হামিদ’ নামে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাড়গোলার মেয়ে আঁখি জনকণ্ঠকে জানায়, ‘একসঙ্গে আমরা অনেকদিন ছিলাম। একাধিক প্রীতি ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট ছিল। আমাদের একটু বিশ্রামের দরকার ছিল। বিশ্রাম নিয়ে আমরা এখন আবারও চাঙ্গা হয়ে ঢাকায় ফিরেছি।’ আরও যোগ করে সে, ‘এ বছর আমাদের অনেকগুলো টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। তাই আমাদের আবারও একসঙ্গে ভালমতো প্র্যাকটিস করতে হবে। অতীতে আমরা যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই সামনে খেলে সাফল্য পেতে চাই।’ নিজেদের এলাকায় যখন আগে যেত অঁাঁখি, তখন দেখতো অনেকেই মেয়েদের ফুটবল খেলাটা পছন্দ করতো না। ‘কিন্তু এবার যখন সাফ জিতে গেলাম, তখন দেখি ওই মানুষগুলোই নিজ থেকে এগিয়ে এসে কথা বলছে, প্রশংসা করছে। বাড়িতে এসেও আমাকে দেখে যায়। মহিলারা তো মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। আমার বান্ধবী আর কাজিনরা তো ঠাট্টা করে বলে, তুই তো অনেক ভাল খেলছিস। আমাদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কোন দলে সুযোগ পাইয়ে দে। যখন গ্রামের বাইরে যাই, তখন লোকজন আমাকে চিনতে পেরে আমার সঙ্গে সেলফি উঠিয়েছে। গ্রামের স্কুলে যখন যাই, তখন স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী হুড়মুড় করে ভিড় জমিয়েছে আমার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য। রিক্সা করে কোথাও যাচ্ছি, পথচারীরা আমাকে দেখিয়ে বলতো, ওই দ্যাখ আঁখি যাচ্ছে। তো, এগুলো বেশ ভালই লাগে। ? পরবর্তী লক্ষ্য? ‘সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ঠিক আছে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে আরও। সামনের টুর্নামেন্টগুলোতেও ভাল ফল করতে হবে।’ বাড়ি যাওয়ার পর মা আঁখিকে তার প্রিয় খাবারগুলো রান্না করে খাইয়েছেন ... পায়েশ, খিচুড়ি, মাংস। ছুটিতে এবার বাড়ি গিয়ে দুটি সংবর্ধনা পেয়েছে আঁখি। সেখান থেকে সে পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত সে। ছুটিতে বাড়ি গিয়েও নিজের ফিটনেস বজায় রাখার চেষ্টা করেছে আঁখি, ‘ছোটন স্যার বলে দিয়েছিলেন, বাড়ি গিয়ে যেন বসে না থাকি। বলেছিলেন সাঁতার কাঁটতে। সেটাই করেছি বাড়ির পাশের পুকুরে।
×