ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী ॥ বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা দেশী-বিদেশীদের চরম ভোগান্তি

মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ, অবরোধ

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

মাওলানা  সাদের আগমন ঠেকাতে বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ, অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আশপাশের এলাকায় রাস্তা আটকে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন তাবলিগ জামাতের নেতাকর্মীরা। সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিশ্ব এজতেমায় ভারত থেকে আসা তাবলিগ জামাতের স্বঘোষিত আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে আসার প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঘটনাটি ঘটে। বিক্ষোভের কারণে তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছিলেন নগরবাসী। এমন ভোগান্তি থেকে রেহাই পাননি বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা দেশী-বিদেশীরাও। রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়ে রীতিমত বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। বিক্ষোভ আর যানজটের কারণে কয়েক ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে টাঙ্গাইল, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। উল্লেখ্য, ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নী মতাবলম্বী মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সংঘ তাবলিগ জামাত। ধর্মীয় এই সংঘের মূলকেন্দ্র বা মারকাজ ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত ও সেখানে তাবলিগের কেন্দ্রীয় পর্ষদ রয়েছে। একে নেজামউদ্দিন বলা হয়। কেন্দ্রীয় পর্ষদের ১৩ জন শূরা সদস্য থাকেন। তাদের মাধ্যমেই ভারত উপমহাদেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি সম্প্রতি নিজেকে সংঘের আমির দাবি করেন। এতে করে তাবলিগ জামাতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্রপাত হয়। মাওলানা সাদ বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। তার আসাকে কেন্দ্র করে এদেশের তাবলিগ জামাতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তারই প্রেক্ষিতে মাওলানা সাদের বাংলাদেশ আসাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়। বুধবার সকাল নয়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কওমীপন্থী ও তাবলিগ জামাতের একাংশের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, মাওলানা সাদ যেন কোনভাবেই বিশ্ব এজতেমায় অংশ নিতে না পারেন। প্রসঙ্গত, বিশ্ব এজতেমা তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ ইসলামী ধর্মীয় সমাবেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এজতেমায় যোগ দিয়ে থাকেন। বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়কের সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তার প্রভাব পড়ে টঙ্গী আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু করে মহাখালী পর্যন্ত। সময় যত গড়াতে থাকে তাবলিগ জামাতের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিমানবন্দরের সামনের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার সড়ক পথের যোগাযোগ। শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজটে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে পড়ে থাকায় অনেকেই হেঁটেই রওনা হন গন্তব্যের উদ্দেশে। এদিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হয়েই পড়েন মহাবিপাকে। তাদের বহনকারী যানবাহন ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নিতে আসা আত্মীয়স্বজনও পড়েন মহাবিপাকে। তারা আর বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কাছে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি। হেঁটেই তাদের প্রিয়জনের কাছে যেতে হয়েছে। এ সময় রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়ে বসে থাকতে হয়েছে। পুলিশ জানায়, বিমানবন্দর থেকে যানজট এক পর্যায়ে গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে বাড়তে থাকে। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার দিকে আসা অনেক যানবাহন আটকা পড়ে। অনেক যানবাহন সোজা গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রার দিকে চলে যায়। ওইসব যানবাহন চন্দ্রা-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে মিরপুর শাহআলী মাজাররোড-শ্যামলী হয়ে গন্তব্যের দিকে যায়। অনেক যানবাহন আবার চন্দ্রা থেকে বাইপাইল-সাভার হয়ে আমিনবাজার-গাবতলী হয়ে গন্তব্যের দিকে যায়। এদিকে বিমানবন্দরের রাস্তা বন্ধ থাকায় মহাখালীর দিকে যানজট বাড়তে থাকে। ফলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জায়গার যানবাহন আর বিমানবন্দরের দিকে যেতে পারেনি। তারা সর্বশেষ মহাখালী পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল। এদিকে বিক্ষোভের মধ্যেই দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ভারতের দিল্লী থেকে মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি ঢাকায় পৌঁছান। তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় পুলিশ পাহারায় বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে পৌঁছে দেয়া হয়। মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সম্প্রতি এই মসজিদ ঘিরে চলমান তাবলিগ জামাতের কর্মকা- এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ব্যাপক মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। মারামারির কারণে আশপাশের এলাকায় রীতিমত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় তাবলিগ জামাত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশেরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কয়েকজনও আহত হয়েছিলেন। তবে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ থামেনি। বিক্ষোভকারীরা আগের মতই রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মাওলানা সাদ বিশ্ব এজতেমায় অংশ নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি। বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি জানান। এদিকে বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়। তখন থেকেই রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীরা চলে যেতে থাকেন। আর ওই সময় থেকেই যানবাহনও চলাচল করতে থাকে। এরপর থেকেই যানবাহন চলাচল করছে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ এজাজ শফী জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবধরনের প্রস্তুতি আছে। বিশ্ব এজতেমার মত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সম্মেলনকে সামনে রেখে এমন বিক্ষোভের নেপথ্যের কারণ জানার চেষ্টা চলছে। যাত্রাবাড়ীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র কাকরাইল মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে রাতেই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। নক্ষত্রের জন্ম রহস্য উদ্ঘাটন পতিত গ্যাসের কু-লী ও ধুলাবালি থেকে কীভাবে নতুন একটি নক্ষত্র জন্ম নেয়, সে সম্পর্কে নতুন তথ্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। একটি জাম্বো জেটে করে বয়ে নিয়ে যাওয়া টেলিস্কোপ থেকে নক্ষত্র গঠন নিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন ধারণা পেয়েছেন। সোফিয়া মানমন্দির থেকে গবেষকরা যে পর্যবেক্ষণ দাঁড় করিয়েছেন, তাতে নক্ষত্রের গঠনে চুম্বক ক্ষেত্রের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সব থেকে কাছের একটি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ‘হো ওফিউচি এ’ নামের একটি যন্ত্র ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিদ সমিতির ২৩১তম বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে। দেশটির নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্যাবিও স্যান্টোস বলেন, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কীভাবে নক্ষত্র তৈরি হয়, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা। তিনি বলেন, আমরা জেনে আসছি, আনবিক গ্যাসের বিশাল কু-লী ও ধুলা থেকে গ্রহ-নক্ষত্র তৈরি হয়। আর এসব গ্যাস ও ধুলা নক্ষত্রপুঞ্জের ছায়াপথে অবস্থান করে। নিজস্ব অভিকর্ষের আওতায় গ্যাসের কু-লী জমে যায়। এরপর তা আস্তে আস্তে ঘনীভূত হতে থাকে। গ্যাসের কু-লীর বিভিন্ন টুকরা জমে আলাদা একটা কাঠামো তৈরি হয়, যেটাকে ‘কোরস’ বলা হয়। ধুলাবালির এ ঘন কোরস ও গ্যাস মিলে নক্ষত্রের উৎপত্তি ঘটে। স্যান্টোস বলেন, এখানে বিপুল রহস্য আছে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। -বিবিসি অনলাইন
×