ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঋণ নিয়ে আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, শাস্তিও দেয়া হচ্ছে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

ঋণ নিয়ে আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, শাস্তিও দেয়া হচ্ছে ॥ অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (দুদক) কর্তৃক ইতোমধ্যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। চুরি/লোপাট হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনার জন্য অর্থ ঋণ আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে মানি মামলাসহ অন্যান্য মামলা চলমান রয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোহাঃ গোলাম রাব্বানীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দুই কর্মকর্তাকে চাকুরি হতে অপসারণ ও বাধ্যতামূলকভাবে অবসর দন্ড প্রদান করা হয়েছে। দুদকের মামলায় একজন কর্মকর্তা কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে আরও ৫ কর্মকর্তাকে। সোনালী ব্যাংক লিঃ কর্তৃক ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, হলমার্ক অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত আদালতে ২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এর মধ্যে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা হয়েছে ২৪টি ও মানি মোকদ্দমা মামলা দায়ের করা হয়েছে ৫টি। ২৪টি অর্থ ঋণ মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯টি মামলার বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে রায় ও ডিক্রি হওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃক জারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত ১৯টি জারি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলায় নিলামের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া মানি মামলা ৫টির মধ্যে ৩টি মামলার শুনানীর দিন ধার্য হয়েছে। জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম উপকারে আসে না এটা কবে বলেছি তা মনে করে না। বরং আমি সবসময় বলেছি ক্ষুদ্র ঋণ নতুন ধারা উম্মোচন করেছে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করা হবে এটা কোনদিন বলিনি। ক্ষুদ্র ঋণের কারণে যারা কোনদিন ঋণ নিতে সাহস পায়নি তারা ঋণ নিয়ে ভাল করেছে। আবার কেউ কেউ সমস্যায় পড়েছে, সেটা অন্য বিষয়। এই ক্ষুদ্র ঋণ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। আমি ক্ষুদ্র ঋণের বিপক্ষে নই, পক্ষেই আছি। এটা আরও কীভাবে উপযোগী করা যায় সেই চেষ্টা করা দরকার। সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মোবাইল আর্থিক সেবাকে জনপ্রিয় ও সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ সেবার চার্জ কমানো সম্ভব হলে নি¤œ আয়ের জনসাধারণের মধ্যে এটি আরও জনপ্রিয় হবে বলে সরকার মনে করে। চার্জ কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল আর্থীক সেবার ব্যবহার সহজীকরণের উদ্দেশ্যে প্রোভাইডারগণকে ইন্টারনেটভিত্তিক এ্যাপ ডেভেলপমেন্টের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এ সকল এ্যাপ ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় তৈরি করার জন্যও তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। বাংলায় এ্যাপ চালু করা সম্ভব হলে সকল শ্রেণীর গ্রাহকের সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হবে। মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে করদাতার সংখ্যা ৩২ লাখ ৮০ হাজার ১০৫ জন। বর্তমানে এ উৎস হতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আদায়কৃত মোট রাজস্বের ৩৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই হারকে মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের মধ্যে কর-জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) এর অনুপাত ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার কথাও বলেছেন মন্ত্রী। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বিদেশি ব্যাংক বাদে দেশে তফসিলভুক্ত বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৪০টি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ হাজার ২৯০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ১ হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং সর্বনি¤œ বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১৯৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। একই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই ৪০টি ব্যাংক গত অর্থবছরে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। একই সময়ে আদায় করেছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা।
×