ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়ায় ১ কোটি ৪১ লক্ষাধিক টাকার কর্মসৃজন প্রকল্পে হরিলুট

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

উখিয়ায় ১ কোটি ৪১ লক্ষাধিক টাকার কর্মসৃজন প্রকল্পে হরিলুট

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে চলমান ৪০ দিনের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে গৃহীত অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে শ্রমিকের মজুরির টাকা হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ২ ডিসেম্বর মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে শেষ পর্যায়ে চলে এলেও কাজের সঙ্গে প্রণীত শ্রমিক তালিকার কোন মিল খোঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের তালিকা সরবরাহেও পিআইও গড়িমষি করার অভিযোগ উঠেছে। বছর বছর বাস্তবায়িত কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের মতো এবারো বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প সমূহ আদৌ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। বিভিন ্ন অভিযোগে গত ৭ জুলাই উখিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অন্যত্রে বদলী করা হলেও উক্ত কর্মকর্তা বদলী ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ২০১৭-১৮অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য প্রথম পর্যায়ে চলমান ৫টি ইউনিয়নে ৩৯টি প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১কোটি ৪১লক্ষ ২০হাজার টাকা। তৎমধ্যে জালিয়াপালং ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের জন্য ২৮৩ জন শ্রমিকের মজুরি বাবৎ ২২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। উক্ত ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য টেক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সমবায় অফিসার কবির আহমদকে। রতœাপালং ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১৫৯জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ লক্ষ ৭২হাজার টাকা। সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ হাছানকে এ ইউনিয়নের কর্মসৃজনের প্রকল্পের কাজ তদারকি করার জন্য সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৯টি প্রকল্পে ৪০৮জন শ্রমিকের মজুরি বাবৎ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২ লক্ষ ৬৪হাজার টাকা। উক্ত ইউনিয়নে কাজ তদারকি করার জন্য পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে টেক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বৃহত্তর রাজাপালং ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের কাজ করার জন্য ৩৬২জন শ্রমিকের বিপরীতে ২৮লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্প দেখাশোনা করার জন্য কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পালংখালী ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ৫৫৩জন শ্রমিকের মজুরী রাখা হয়েছে ৪৪লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। এ ইউনিয়নে টেক অফিসার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শওকত হোসনকে সাময়িক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসির অভিযোগ, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায় নাম থাকলেও অধিকাংশ শ্রমিককে কর্মস্থলে দেখা যায়না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নাম সর্বস্ব কাজ করে শ্রমিকের মজুরীর টাকা ভাগাভাগির মাধ্যমে লুটপাট করে থাকে। এ নিয়ে অভিযোগ করলেও কোন কাজ হয়না বলে একাধিক স্থানীয় সমাজ সর্দার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের লোকজন জানিয়েছেন। বিশেষ করে রত্নাপালং ইউনিয়ন, জালিয়াপালং ও হলদিয়া পালং ইউনিয়নে লুটপাটের চিত্র বেশী হচ্ছে বলে স্থানীয় স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী অভিযোগ, কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্প শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবত মাঠ পর্যায়ে উক্ত কাজের কোন অস্থিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়না। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহকে গত ৭ সেপ্টেম্বর অন্যত্র বদলী করা হলেও বদলীতে ঠেকাতে ব্যাপক তদ্বির করছেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান জানান, কর্মসৃজন প্রকল্প তিনি পরিদর্শন করছেন, শতভাগ কাজ দেখেই তিনি টাকা ছাড় দেবেন। কাজ না হলে টাকা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান।
×