ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে সোলার বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে চরবাসী

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

জামালপুরে সোলার বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে চরবাসী

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর ॥ জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যমুনার নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বেসরকারি ভিনসেন জিটেক লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দুর্গম চর মন্নিয়ায় ২৪৯ দশমিক ৬ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। ইতিমধ্যে ওই চরের ১ হাজার ২০০টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ওই চরের ২০ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের বৈদ্যুতিক আলোর চাহিদা পূরণসহ এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ফসলের জমিতে সেচকাজ, রাতে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাসহ ডিজিটালাল প্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ইসলামপুর উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়া গ্রামটিতে ২০ হাজার লোকের বসবাস। জন্ম থেকেই ওই এলাকার মানুষেরা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত থাকতো। আর এতে করে ডিজিটালাইজ তথ্য প্রযুক্তির যুগেও তারা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এখন আর কেউ তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। চরবাসীর আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিজিএল-১ সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। মন্নিয়া বাজার সংলগ্ন স্থানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গ্রামটিকে আলোকিত করেছে ভিনসেন জিটেক লিমিটেড। এতে করে কৃষি জমি আবাদ, কাঠচিড়াইয়ের করাত কল, ধান ভাঙানোর যন্ত্র, বরফ কল চালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দারুণ ছোঁয়া লেগেছে। জানা গেছে, ভিনসেন জিটেক লিমিটেড ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভিজিএল-১ সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি স্থাপন করে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪৯ দশমিক ৬ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। সরেজমিনে মন্নিয়া চরে গিয়ে দেখা গেছে, মন্নিয়া বাজারসহ ওই এলাকায় ১৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় ওই এলাকার মানুষেরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। ডিজিটালাইজ কাজগুলো হাতের নাগালে করতে পেরে এই সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যেন বাস্তবের আলাদীনের যাদুর চেরাগের মতোই তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে এলাকায় প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। আগে আলোর জন্য ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে অনেক সমস্যা হতো। এখন সেই সমস্যার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। ডিজিটাল যুগে মোবাইল চার্জ করাসহ তথ্য প্রযুক্তির কাজ করতে তাদেরকে আগে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের ইসলামপুর উপজেলা সদরে যেতে হতো। এখন তাদেরকে এসব কাজে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। সোলার প্যানেল স্থাপনের কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। উদ্যোক্তা ভিনসেন জিটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, যমুনার চরের এই দুর্গম অঞ্চলে ভিজিএল-১ সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা আমার অনেক দিনের পরিকল্পনা ছিল। চরাঞ্চালের মানুষেরা জন্ম থেকেই বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। আমি চরের সন্তান হিসেবে বঞ্চিতদের আলোকিত করতে এই উদ্যোগ নেই। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কওে এই চরেই তা সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই চরাঞ্চলের ১ হাজার ৫০০টি পরিবার আমাদের এই ভিজিএল-১ সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আওতায় রয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ পরিবারকে বিদু্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ভিজিএল-১ সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকের উন্নয়ন, শিল্প কারখানা, কাঠ চিড়াইয়ের করাত কল, ধানমাড়াই যন্ত্র চালনা, সেচযন্ত্র চালনা এবং বাজার আলোকিত হওয়াসহ এই সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিংসহ সকল সুবিধা পাবে। এতে করে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্রুত বদলে যাবে।
×