ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আলামত দেখতে পাচ্ছি না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আলামত দেখতে পাচ্ছি না ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি ও এ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে আমরা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আলামত দেখতে পাচ্ছি না। সোমবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি কী আশঙ্কা করছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কা তৈরি হবে তখন, যখন সরকার চাইবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। আশঙ্ক থাকবে তখন যখন সরকার জনগণকে ভোট না দেওয়ার ব্যবস্থা করবে, যখন সরকার পুরো বিষয়টিকে ঘোলাটে করে তুলবে। তবে আমরা আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের এটাই একমাত্র পথ, এর বিকল্প নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেই ধরনের কোনো আলামত দেখতে পাচ্ছি না। ‘জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই মেয়াদ পূরণ করতে পারেছি’ প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি প্রধানমন্ত্রী আছেন জোর কওে, রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করে।’ তাঁর যদি এতটুকু গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ থাকতো, তাহলে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেন। ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপি সম্পর্কে যেসব আপত্তিকর বক্তব্য রেখেছেন এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি এসব আপত্তিকর বক্তব্য অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বিবর্জিত। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এ ভাষায় উক্তি করা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। হলে আমরা জানিয়ে দেবো। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপির সভা-সমাবেশগুলোতে বাধা দিচ্ছে। সরকার এসব করতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা হেলিকপ্টারে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোট চাচ্ছেন, অথচ বিএনপিকে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেআইনি গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিন এটা বেশি হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছেন না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান। আমরা তাঁকে সেই ধরনের সম্মান দিয়ে এসেছি। দুর্ভাগ্য রাষ্ট্রপতি পুরোপুরিভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করছেন। তিনি জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দেন, সেটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তৈরি করে দেবেন এবং সেটি তিনি পাঠ করবেন। কিন্তু মিনিমাম কিছু বিষয় তো আছে। এই যে দেশে গণতন্ত্র নেই এটা তো সত্যি কথা। দেশের মানুষ যে লাঞ্চিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে এবং মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে এই বিষয়গুলো তার বক্তব্যে আসেনি। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে সুসংসহত করার বিষয়গুলোতে রাষ্ট্রপতির কাজের মধ্যে প্রতিফলন দেখতে পাইনি। নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যথিত যে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সেই সময় সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএনপির যৌথসভা ও সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, আবদুস সালাম আজাদ, ওলামা দলের সভাপতি আবদুল মালেক প্রমুখ।
×