ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প

বাংলাদেশের পরিচিতি বিশ্বের অন্যতম কাঁচা চামড়া রফতানিকারক দেশ হিসেবে। কাঁচা চামড়ার পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে জোর দেয়া হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হারও ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের চামড়ার মান ভাল হওয়ায় চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সরকারী-বেসরকারী তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদান দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশ্বে চামড়াজাত পণ্য, অর্থাৎ জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ ইত্যাদির বাজারের আকার প্রায় ২২ হাজার কোটি ডলারের। এ বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব এখনও খুবই কম। চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় বাড়ানোর বড় সুযোগ আছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ১১৩ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকরা হয়েছে ১২১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। সদ্য সমাপ্ত ২০১৫ ১৬ অর্থবছরের কাঁচাচামড়া রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে এ সময়ের মধ্যে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৭৯ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের চামড়া রফতানি আয় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছে। ২০১৪ ১৫ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ২৪ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খাতের পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয় ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়ার জুতা রফতানিতে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ কম। তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় এ খাতের রফতানি আয় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়ার জুতা রফতানিতে আয় হয়েছিল ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে সদ্য সমাফত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাবার রফতানিতে আয় হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরে রাবার রফতানি আয়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাবার রফতানিতে আয় হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি এখন জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও চামড়ার তৈরি নানা ‘ফ্যান্সি’ পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি এখন জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও চামড়ার তৈরি নানা ‘ফ্যান্সি’ পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এসব পণ্য তৈরি করে বিশ্বের বাজারে পাঠাচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছোটপাদুকা প্রস্তুতকারী কারখানাও রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব চামড়ার ৫০ শতাংশই দেশের চামড়াজাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাকিটা প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশের চামড়া ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, হংকং, তাইওয়ানে বেশি রফতানি হয়। গত বছর বিশ্বে চামড়াজাত পণ্য কেনাবেচা হয়েছে ২১ হাজার ৭৪৯ কোটি ডলারের। বাজারের এ আকার ২০২১ সালে ২৭ হাজার ১২১ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। বছরে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়বে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা। বৈশ্বিক জুতা ও স্যান্ডেলের বাজারের আকার ছিল ১২ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের। চামড়া ওচামড়াজাত পণ্য এখন দেশের দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত। এ খাতে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১২৩ কোটি ডলার আয় করেছে। সামগ্রিকভাবে গত অর্থবছর যখন রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সেখানে চামড়া খাতে আয় বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ দেশের পাদুকার চাহিদা ও। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাদুকা তৈরির কার্যাদেশ পাচ্ছে। ফলে চামড়া ও চামড়া শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক বছরে ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান সমিতির সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এ দেশের পাদুকা শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পায়। উল্লেখ্য, এ শিল্পের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যায়। পাদুকা ও অন্যান্য পণ্য তৈরিতে উৎপাদিত পাকা চামড়ার মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। সেদিক থেকে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের প্রসার দ্বিগুণ করা সম্ভব। জুতা রফতানিতে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য চীনের। চীন অবশ্য জুতার বাজার খানিকটা ছেড়ে দিয়েছে। সেটি দখলের জন্য কাজ করে সফলতা পেয়েছে ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছে না সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। অর্থনীতি ডেস্ক
×