ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামীকাল ৫ জানুয়ারি রাজধানীর রাজপথে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু রাজপথে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি তারা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিএনপি ইচ্ছে করলে শুক্রবার ঘরোয়া পরিবেশে সমাবেশ করতে পারবে। তবে ৫ তারিখের পরে অন্য কোথাও কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাইলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে করতে হবে। বিএনপি কবে কোথায় সমাবেশ করবে তা আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে জানাবে বলে দলের প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৪ বছর পূর্তির দিন আজ ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ ও ঢাকার বাইরে সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল করার পূর্ব ঘোষণা ছিল বিএনপির। দলের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আগেই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারি একটি ইসলামিক সংগঠনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ায় বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে একই দিনে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তাদের সাফ জানিয়ে দেন হয় রাজপথে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। তবে বিএনপি চাইলে শুক্রবার ঘরোয়া পরিবেশে সমাবেশ করতে পারবে। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুইয়া ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এ বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সাংবাদিকদেও কাছে বলেন, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আমাদের সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। আমরা চাইলে যে কোনো দিন সমাবেশ করতে কোনো সমস্যা নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সেটা ইনডোরে করতে হবে। বিএনপিকে এই মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেয়া সম্বব নয় বলেও তিনি জানিয়েছে। সেখানে সমাবেশ করতে হলে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ বিষয়ে ডিএমপিকে জানানোর কথা বলে এসেছি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন কওে বিএনপি। এর এক বছর পর ২০১৫ সাল থেকে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে দলটি। তবে এখন পর্যন্ত কোন বছরই ৫ জানুয়ারি রাজপথে সমাবেশ করতে পারেনি তারা। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি টানা ৯২দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এ ৯২ দিন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ছেড়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করেন। তবে এ ৯২ দিনের সহিংস আন্দোলনে সারাদেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তাদেও আন্দোলন নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে ওই আন্দোলন ছেড়ে আবার খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মুখপাত্র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না পেলেও সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমাবেশ করতে চাই। আশা করছি আমাদেও সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। রিজভী বলেন, সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে একটি নাম না জানা সংগঠনকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়ে যে নাটক করেছে সেই নাটকটি আসলে গণতন্ত্রের সাথে, জনগণের সাথে মশকরা করার শামিল। তবুও আমরা আশা করছি সরকার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে। তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই আমি অবিলম্বে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়ার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানচ্ছি। রিজভী বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলে বিরোধী দলগুলোকে বারবার কর্মসূচি পালন করতে না দিয়ে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল এবং নানা মত ও বিশ্বাসের মানুষরা গণতন্ত্র ফিরে পেতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রেও প্রতি দায়বদ্ধতার জন্যই দলমত নির্বিশেষে বিএনপির ডাকা শুক্রবারের ঢাকার সমাবেশ এবং সারা দেশে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল সফল করতে হবে। রিজভী বলেন, আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, তারাই পরিকল্পিতভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে একটা অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছেন। তারা রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশব্যাপী সরকারের নির্দেশে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি শুরু করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সরাফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।
×