ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধরিত্রী শীতল করার নতুন প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১ জানুয়ারি ২০১৮

ধরিত্রী শীতল করার নতুন প্রযুক্তি

এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালেই প্রকাশিত হবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃ সরকারী প্যানেলের রিপোর্ট। তাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে করণীয় কাজগুলোর ক্ষেত্রে কতদূর কি অগ্রগতি হয়েছে এবং আরও কি কি করা উচিত সম্ভবত তার উল্লেখ থাকবে। তবে জৈব প্রযুক্তিকে এক্ষেত্রে যে বিরাট ভূমিকা পালন করতে হবে তাতে সন্দেহ নেই। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও চলতি শতকে এত বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটবে যে তা পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক শিল্প যুগেও তাপমাত্রার চাইতে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হবে। এমনকি ২ ডিগ্রীও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, তাপমাত্রা এত বেশি বৃদ্ধি পেতে দেয়া যাবে না। উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যেই ধরে রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গেলে মানুষ বায়ুম-লে যে বিলিয়নকে বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাঠাচ্ছে সেখান থেকে সেই গ্যাস আবার ফিরিয়ে আনার মতো সক্ষমতা তাদের থাকতে হবে। এ পরিসরের প্রযুক্তিগত একটি কৌশল হলো ক্লাইমেট জিও ইঞ্জিনিয়ারিং। নীতিনির্ধারকরা এতদিন এই কৌশলটি এড়িয়ে গেছেন। এখন তাদের গুরুত্বের সঙ্গে কৌশলটি অবলম্বন করতে হবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। বায়ুম-ল থেকে কার্বন সরিয়ে নেয়ার প্রকৃতিজাত যে ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন ফটোসিনথেসিস, তা প্যারিস চুক্তি লক্ষ্যমাত্রা খানিকটা পূরণ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে জিও ইঞ্জিনিয়ারিংই ভরসা। এখন এমন প্রযুক্তি তা বায়ু থেকে কার্বন সরাসরি টেনে নেবে। গত বছর দুয়েকের মধ্যে এ ধরনের দুটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। একটি কানাডীয় অন্যটি সুইস। এরা ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক প্রকল্পও তৈরি করেছে। এ পর্যন্ত এসব প্রকল্পের দ্বারা দিনে কয়েক টন কার্বন বায়ুম-ল থেকে বের করে নেয়া সম্ভব। অথচ জলবায়ুর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য শেষ পর্যন্ত দিনে কয়েক মিলিয়ন টন কার্বন বের করে নেয়ার প্রয়োজন হবে। যাই হোক আমরা আশা করতে পাারি যে বায়ুম-ল থেকে কার্বন শুষে নেয়ার জিও ইঞ্জিনিয়ারিং কার্বন নির্গমন সমস্যার সমাধান করবে। আরেক ধরনের জিও ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে যা এই ধরিত্রীকে শীতল করতে সাহায্য করবে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে এসে পড়ে এর একটা অংশ টিকরে মহাশূন্য চলে যায়। এই বিশেষ জিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হলো পৃথিবীর গায়ে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যাওয়া সূর্যালোকের পরিমাণ বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়া। এই কাজটা কয়েকভাবে করা যেতে পারে। যেমন বিশেষ ধরনের মোমালাকে উজ্জ্বল করে তোলা। কিংবা স্ট্যাটোস্পিয়ারে বস্তুকণার এমন এক পাতলা স্তর সৃষ্টি করা যে ধরনের বস্তুকণা আগ্নেয়গিরির উদগিরণের পরই দেখতে পাওয়া যায়। এ বছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক স্ট্যাটোস্পিয়ার বা আন্তর আকাশে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এই বস্তুকণার পর্দা তৈরির চেষ্টা চালাবেন এবং দেখবেন সেই পর্দার ভৌত ও রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। জিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই কৌশলগুলো কতদূর কাজ দেবে তা এ মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না বটে, তবে এগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়ে গ্রীন হাউজ গ্যাসের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় বহুলাংশে সহায়ক হবে।
×