ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষায় ২০১৭ সাল

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষায় ২০১৭ সাল

সময়ের পরিবর্তন ও আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার সুস্পষ্ট ছাপ সমাজের সব বিভাগে পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থাতেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রভাবের প্রতিফলন রাতারাতি দেখা পাওয়া অসম্ভব। স্বাধীনতার পর থেকেই শিক্ষার উন্নয়ন ও ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য। তবে দরিদ্রতার মাঝে দাঁড়িয়ে অবৈতনিক শিক্ষা ছিল নিতান্তই দুঃসাধ্য। বাস্তবতা হচ্ছে সেখানেও আমরা জয়ী হয়েছি। ৮ বছর আগে যেখানে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ৬১ শতাংশ, বর্তমানে সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় শতভাগ। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তির হার ছিল ৫১ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তির হার ছিল ৩৩ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪৪ শতাংশ। যে জাতি নারীদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে, সে জাতির উন্নতি অবধারিত। বর্তমান সরকার শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অগ্রগতি লক্ষণীয়। একসময় নারী শিক্ষা ছিল শুধু উচ্চবিত্ত ও শহরের কিছু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। ২০১৭ সালে বেস্ট গ্লোবাল টিচার বা বিশ্বসেরা শিক্ষকদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন বগুড়ার শাহানাজ পারভীন। বর্তমান সরকার মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করেছে। সাধারণ শিক্ষার অনুরূপ মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও আধুনিকায়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর স্থাপিত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা দেখভাল করার জন্য মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। দেশে উচ্চশিক্ষার পরিধি প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এর পরিমাণ মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ২২ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই সরকার আজ শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা আজ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে সারা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করছে। এতসব সফলতাকে ব্যর্থ করার চেষ্টাও অব্যাহত আছে সমানভাবে। সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন এক অপশক্তি আজ সোচ্চার। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা যার সিংহদ্বারে লিখা রয়েছে ‘কোন জাতিকে ধ্বংস করতে পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই, বরং সেই জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। কারণ এভাবে পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারদের দ্বারা রোগীর মৃত্যু হবে, ইনঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা দালান-কোঠা, ইমারত ধ্বংস হবে এবং অর্থনীতিবিদ দ্বারা দেশের আর্থিক খাত দেউলিয়া হবে। এছাড়া বিচারকদের দ্বারা বিচার ব্যবস্থার কবর রচনা হবে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মানে হলো একটি জাতির অবলুপ্তি।’ প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই মহৌৎসব কি তবে কোন নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য পালন করা হচ্ছে? এর প্রতিকার অতীব জরুরী। এই জাতি নানান ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আশা করি এ ষড়যন্ত্র অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। বর্তমান শিক্ষাসহায়ক সরকারের সঙ্গে সঙ্গে জনসচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিজেরা নষ্ট না করে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তৈরি করাই উদ্দেশ্য হতে হবে।
×