ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত কেন্দ্র ও সোলার প্যানেল

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১ জানুয়ারি ২০১৮

বিদ্যুত কেন্দ্র ও সোলার প্যানেল

দেশে বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। নতুন বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। তবে ক্লিন এনার্জি বা সবুজ জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে এখনও আমরা পিছিয়ে রয়েছি। প্রতিবেশী দেশ ভারত যে পরিমাণে সবুজ জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে তার ধারেকাছেও নেই আমরা। কিন্তু চলতি বছর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। তিন মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে আর যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার সবগুলোই দিনের পর দিনঝুলছে। অবস্থা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন সবুজ জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সিমলা বাজার এলাকায় তিন মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। দেশে সোলার প্যানেল অনেক আগে থেকে পরিচিত। দেশের প্রায় ৬০ লাখ ঘরে সোলার প্যানেল রয়েছে। দিনের পর দিন এর পরিমাণ আরও বাড়ছে। একই রকমভাবে একটার পর একটা সোলার প্যানেল জোড়া দিয়ে আট একর জমির উপর এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র, যা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করছে। ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করছে ‘এনগ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্ল্যান্ট লিমিটেড’ নামে এই কেন্দ্র। ২০১১ সালের দিকে সরকার একটি ১৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য চুক্তির পর জানিয়েছিল এটি হচ্ছে উপমহাদেশের সব থেকে বড় কেন্দ্র। সেই প্রকল্পটি পরে বাতিল করা হয়েছে। এরপর প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারতে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের প্যানেল বসানো হলেও আমাদের দেশে বসেনি। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে উৎপাদনের বাধ্যবাধকতার শর্ত রয়েছে বাংলাদেশের উপর। এখন দেশে ১১টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের চুক্তি রয়েছে। এর আগে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমন চুক্তি ছিল। কিন্তু প্রকল্প নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণে চুক্তিগুলো কাটছাট করা হয়েছে। সরিষাবাড়ীর সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপনে পিপিপি মডেল অনুসরণ করা হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠান জমি দিয়েছে। আর এটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বেসরকারী উদ্যোক্তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে জমি। এক মেগাওয়াট আধুনিক সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ৩ একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে ১০০ মেগাওয়াটের জন্য দরকার হয় ৩০০ একর বা ৯০০ বিঘা। উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিপুল এই জমির সংস্থান করা কোন ক্রমেই সম্ভব হচ্ছে না। সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই বড় জটিলতা হচ্ছে জমি প্রাপ্তি। সরকারীভাবে উদ্যোক্তাদের জমি অধিগ্রহণ করে দেয়া হলেই কেবল সৌর বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এতে এখন বিদ্যুতের যে দাম রয়েছে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। দেশের চরাঞ্চলে এমন হাজার হাজার একর পতিত জমি রয়েছে যেখানে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু বিদ্যুত বিভাগের উদাসীনতায় কোন প্রকল্পই আলোর মুখ দেখছে না। কিন্তু উল্টো দিকে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। ২০২০ সালে দেশে মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সেই হিসাবে ওই সময়ে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। কিন্তু নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিপুল বিদ্যুত উৎপাদন সরকারী-বেসরকারী অংশিদারিত্ব ছাড়া সম্ভব নয়। বিদ্যুত বিভাগ মাঝে এমন উদ্যোগ নিয়েছিল। ওই সময়ে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ হাজার একর জমি চাওয়া হবে। সরকার গ্রিড লাইন করে দেবে। এরপর বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাছে আগ্রহপত্র চাওয়া হবে। কিন্তু সেসবের কিছুই আর আগায়নি। ভারতে সরকার সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য জমি এবং গ্রিডলাইন করে দেয়। উদ্যোক্তাকে শুধু প্যানেল বসাতে হয়। এই নীতি অনুসরণের ফলে এক দিকে যেমন দেশটিতে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ¦ালানির সম্প্রসারণ হয়েছে, অন্যদিকে কম দামেও বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদক
×