ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবস টেনিস, আবারও সেরা প্রীতি

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজয় দিবস টেনিস, আবারও সেরা প্রীতি

রুমেল খান ॥ ১১ মাসের ব্যবধানে একই ভেন্যুতে দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল। প্রতি ফাইনালেই একই প্রতিযোগী। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার, দুটি ফাইনালেই ঘটে একই ঘটনা। এক প্রতিযোগী প্রতিটি সেটেই শুরুতে কয়েক গেমে এগিয়ে যান, অপর প্রতিযোগী দারুণভাবে কামব্যাক করে শেষ পর্যন্ত জিতে নেন ম্যাচ এবং শিরোপা। ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি রমনার জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স ‘আইউবি বিজয় দিবস টেনিস প্রতিযোগিতা’য় মহিলা এককের ফাইনালে দুই ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের এক মহাকাব্যিক দ্বৈরথ শেষে বিজয়িনীর নাম ছিল বিকেএসপির আফরানা ইসলাম প্রীতি। আর এবার ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর ‘রানার দিবস দিবস টেনিস প্রতিযোগিতা’র ফাইনালেও একই ইভেন্টে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মোকাবেলা শেষে বিজয়িনীর নাম সেই প্রীতিই! এবার অবশ্য তিনি ভিন্ন দলের খেলোয়াড় (নরসিংদী টেনিস ক্লাব)। দু’বারই রানারআপ প্রতিপক্ষ বিকেএসপির ঈষিতা আফরোজ রিতু। শনিবারের ফাইনালে প্রীতি রিতুকে হারান ৬-৩, ৭-৫ গেমে। পুরো ম্যাচে রিতুকে বেশকিছু ‘ভৌতিক’ শট মারতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝেই পয়েন্ট পেয়ে ‘কাম অন’ বলে নিজেকেই শক্তি-সাহস জোগাচ্ছিলেন তিনি। তিনি তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মজার ব্যাপারÑ ফাইনালে রিতু ও প্রীতি দুজনেই সমান সমর্থন পেয়েছেন। রিতুর সাপোর্টার ছিল তার বিকেএসপির ৪-৫ মহিলা খেলোয়াড়, আর রিতুকে গলা ফাটিয়ে সমর্থন জোগান তার ক্লাবের সমসংখ্যক পুরুষ খেলোয়াড়! খেলা শেষ হতেই কোর্টে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন সপ্তদর্শী ও বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতিকে। কোনমতে আবেগ সামলালেন তিনি। তবে আবেগের তোড়ে ভেসে গেলেন রিতু। খেলা শেষ হতেই ড্রেসিংরুমে না গিয়ে সোজা চলে গেলেন টেনিস কমপ্লেক্সের বাইরে পার্ক করা বিকেএসপির একটি বাসের ভেতর। সেখানে অশ্রুজলে ভাসালেন বুক। সেখানে গিয়ে রিতুকে সান্ত¡না ও উৎসাহ দিলেন সতীর্থ খেলোয়াড় রিনভী আক্তার এবং কাজিন মাহমুদুল মানিক। গত ১৭ জানুয়ারির ফাইনালে ম্যাচ হারের কারণ হিসেবে রিতু জানিয়েছিলেন তার ডান পায়ে ক্র্যাম্পের কথা। কিন্তু এবার কি হলো? ‘মনোসংযোগের ঘাটতি এবং আত্মবিশ^াসে চিড় ধরা ... এই দুই কারণেই মূলত দুই সেটেই এগিয়ে গিয়েও হেরেছি। সবচেয়ে বড় কথা, ভাগ্য সহায় ছিল না আমার।’ রিতুর ব্যাখ্যা। ১৭ জানুয়ারির ফাইনালের সঙ্গে এবারের ফাইনালের অবশ্য একটা ছোট পার্থক্য আছে। আগের ফাইনালটা গড়িয়েছিল তিনি সেটে। সেবারের স্কোরলাইন ছিল ৪-৬, ৭-৫, ৭-৬ (৭-৫)। শনিবারের ম্যাচে রিতু জিতলে প্রতিশোধ নিতে পারতেন আগের ফাইনালের হারের। এই প্রসঙ্গে রিতুর ভাষ্য, ‘হ্যাঁ, বিষয়টা মাথায় ছিল। আর এই ভাবনাই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। তাছাড়া শেষদিকে বেশ ক্লান্তও হয়ে পড়ি। বিকেএসপির কোচ হিসেবে কাজ করছি। অন্যদের খেলা শেখাতে গিয়ে নিজেই খেলার সময় পাই না! তাই ফিটনেসেও ঘাটতি ছিল।’ ম্যাচে প্রীতিকে দেখা গেছে কিছু ‘পাওয়ারফুল’ শট মেরে পয়েন্ট আদায় করে নিতে। যেটা রিতু একেবারেই পারেননি। বিষয়টা অস্বীকার করেননি রিতুও। প্রথম সেটে ০-৩ এবং দ্বিতীয় সেটে ৩-৪ গেমে পিছিয়ে থেকেও কিভাবে ম্যাচ ও শিরোপা জিতে নিলেন প্রীতি? ‘হারলে রিতু বদলা নেবে, এই দুশ্চিন্তাতেই শুরুতে বাজে খেলি। পরে টিম সাপোর্ট এবং আত্মবিশ^াসÑ এই দুটোই আমাকে চ্যাম্পিয়ন হতে শক্তি জুগিয়েছে। সাত মাস অনুশীলন করতে পারিনি বিকেএসপি থেকে চলে আসার পর। কারণ ক্লাব ম্যানেজ করতে না পারা। অবশেষে দেড় মাস আগে ক্লাব খুঁজে পেয়ে অনুশীলন করেছি। যে ক্লাবটা পেয়েছি, তাও সেটা চুক্তি ভিত্তিতে, শুধু এই টুর্নামেন্টের জন্য!’ জেতার আরেকটা গোমড় ফাঁস করেন প্রীতি, ‘আমি রিতুর উইক জোন চিহ্নিত করে খেলার চেষ্টা করেছি। তারপর আচমকা পুশ মানে পাওয়ার শট মেরে পয়েন্ট নিয়েছি।’ এ নিয়ে ক্যারিয়ারের সবমিলিয়ে ৪৩ নম্বর ট্রফি জিতলেন প্রীতি। এর মধ্যে একক ট্রফিই ২৭টি। প্রীতির খেলা দেখতে বাগেরহাট থেকে চারদিন আগে ঢাকায় একাই চলে আসেন তার মা শামীমা আক্তার আঁখি। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘এ নিয়ে মেয়ের ফাইনাল দেখতে এলাম দু’বার। আগেরবার হারলেও এবার জিতেছে সে। এজন্য আমি দারুণ খুশি। যদিও শুরুতে খুব নার্ভাস হয়ে পড়ি। টেনশনের চোটে ভিআইপি গ্যালারি ছেড়ে দর্শক গ্যালারিতে গিয়ে বসি। সারাক্ষণ কেবল দোয়া-দরুদ পড়েছি!’ মায়ের সামনে আগের ফাইনালে প্রীতি হেরেছিলেন ২০১৩ সালে, শাহ্ সাফিনা লাক্সমির কাছে। ‘ওটা ছিল আইটিএফ অ-১৪ আসর। ফাইনালে প্রবল জ¦র নিয়ে খেলেছিলাম।’ প্রীতির স্মৃতিচারণ। আরও যোগ করেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই আমার ক্লাব থেকে ফোন এসেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমাকে তারা অভিনন্দন জানিয়েছে এবং নতুন বছরের শুরুর দিকেই নরসিংদীতে তাদের ক্লাবে আমাকে যেতে বলেছে। আমাকে তারা সংবর্ধনা এবং প্রাইজমানি দেবে।’ প্রাইজমানি বলতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা (ওইদিনই দ্বৈতে রানার্সআপ হন প্রীতি। ফলে তিনি আরও পাবেন আড়াই হাজার টাকা)। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মেয়েদের টেনিস মানেই রিতু বনাম প্রীতির ফাইনাল। সব আসর মিলিয়ে এ নিয়ে তারা চতুর্থবার ফাইনালে মোকাবেলা করলেন। প্রীতির ভাষ্যমতেÑ তিনি চার ফাইনালের তিনটিতেই জিতেছেন, আর হেরেছেন একটিতে। তার মানে প্রীতি ৩ : ১ রিতু। বয়সে-অভিজ্ঞতায় প্রীতির চেয়ে এগিয়ে রিতু। কিন্তু বাজীমাত করলেন প্রীতিই। বিজয় দিবস টেনিসের বিজয়িনী তিনিই।
×