ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারাল বাংলাদেশ, ভারতের ;###;কাছে ১০-০ গোলে হার নেপালের

ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগেরদিনও এত শীত ছিল না, যতটা শীত পড়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই। হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা। চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। সূর্যদেবতার কোন দেখাই নেই। তারপরও এমন বৈরী আবহাওয়াতেও কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এসেছে শ’ খানেক দর্শক (আগেরদিন বাফুফে ঘোষণা দিয়েছিল খেলা দেখতে টিকেট ফ্রি)। তাদের প্রত্যাশা সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের এই আসরে মঙ্গলবার বাংলাদেশের মেয়েরা জিতবে। হারাবে ভুটানকে। তাদের সেই আশা পূরণ করেছে বঙ্গকন্যারা। মঙ্গলবার দিনটা তাদের জন্য আসলেই ছিল মঙ্গলময়। দাপটের সঙ্গে খেলেই তারা ৩-০ গোলে হারিয়েছে ‘ড্রাগনকন্যা’দের (ভুটানকে বলা হয় বজ্র-ড্রাগনদের ভূমি। কারণ এই ভূমিতে বজ্রপাত হয় প্রচুর)। বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন ম্যাচে জোড়া গোল করে। অপর গোলটি করে সাজেদা খাতুন। আগেরদিনই বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানিয়েছিলেন, তার দল যদি প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে তাহলে অবশ্যই জিতবে। আর জিতলে ফাইনালে যাওয়াটা কমপক্ষে ৮০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ জিতেছে ঠিকই তবে স্বাভাবিক খেলে নয়। অনেক ঘাম ঝরিয়ে। কারণ শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত ভুটান দল পুরোপুরি রক্ষণাত্মক স্টাইলে খেলে। বক্সের মধ্যে নিয়মিতই দেখা গেছে সাত ফুটবলারকে। বাংলাদেশ এ জন্য বারবার আক্রমণ করলেও ডিফেন্স ভাঙ্গতে পারছিল না। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারকে কোন পরীক্ষাই দিতে হয়নি। বরং বল পাওয়ার জন্য তাকে মাঝমাঠ পর্যন্ত এগিয়ে এসে সতীর্থদের বল পাস দিতে দেখা গেছে। ম্যাচে বল নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশেরই ছিল ৮০ শতাংশ। মাঠের বেশ শীতল আবহাওয়া অনেক সাহায্য করেছে ভুটান দলকে। এই আবহাওয়া তাদের জন্য আরামদায়ক। কেননা তারা বরফের দেশের লোক। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ দলই যেন শীতে খেলতে গিয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিল বারবার। ভুটানকে বয়সভিত্তিক ফুটবলে এর আগেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ গার্লস রিজিওন্যাল চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে নাকাল করে বাংলাদেশ অপরাজিত গ্রুপসেরা ও শেষ চারে নাম লিখিয়েছিল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল বিশাল ব্যবধানে, ১৬-০ গোলে। মঙ্গলবার পরের ম্যাচে ভারত নেপালকে হারালে ফাইনালে নাম লেখানো নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ভারতও ওঠে ফাইনালে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ ছোটন বলেন, ‘আঁখির গোল দুটি ছিল ফ্যান্টাস্টিক। সাজেদারটাও তাই। আজ ভুটান এত বেশি নেগেটিভ খেলেছে যে, এটাকে আসলে ফুটবল বলা যায় না। এ জন্যই ম্যাচে আমরা গোল করার তেমন সুযোগ পাইনি। তারপরও চেষ্টা করেছি অনেক। যারই ফল তিন গোলে জেতা।’ ম্যাচ শেষে তখনও নিশ্চিত ছিল না বাংলাদেশ ফাইনালে উঠতে পেরেছে কি না। কারণ তখনও ভারত-নেপাল ম্যাচ শুরু ও শেষ হয়নি। তাই ছোটন বলেন, ‘ফাইনালে উঠতে পারব কি না জানি না, তবে শেষ লীগ ম্যাচে আমরা অবশ্যই ভারতকে হারাতে চাই। এ জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ সিনিয়র ফুটবলে না পারলেও বয়সভিত্তিক ফুটবলে এ পর্যন্ত ভারতকে দু’বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাও এক আসরেই। ২০১৫ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অ-১৪ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের আঞ্চলিক পর্বে গ্রুপ খেলায় ভারতকে ১-০ এবং ফাইনালে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতকে হারানোর আনন্দই আলাদা। তাই ছোটন এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চান না, ‘আমি এই আসরে আমাদের শেষ লীগ ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে আমার সেরা দলটাকেই নামাব। সেই সঙ্গে দর্শকদের এন্টারটেইনিং ফুটবল খেলা উপহার দিয়ে তাদের আনন্দ দেয়াও অব্যাহত রাখতে চাই আমরা।’ ভুটানের কোচ সুং জি লি বলেন, ‘দলটি নতুন। খেলোয়াড়রা শিখছে। তারা প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে। গত ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচে তারা আরও ভাল খেলেছে।’ আগের ম্যাচে ভারতের কাছেও ০-৩ গোলে হারা ভুটানের ফাইনালে ওঠার আশা শেষ। তারপরও শেষ লীগ ম্যাচে নেপালের সঙ্গে জিতে আসরটি শেষ করতে চান কোচ লি। ৪ মিনিটেই গোল পেতে পারতো স্বাগতিক দল। মাঝমাঠ থেকে ডিফেন্ডার আঁখি খাতুনের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শট নেয় মারজিয়া। পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায় বল। ১৩ মিনিটে সফল হয় বাংলাদেশ। মারজিয়ার উড়ন্ত কর্নার বক্সের মধ্যে দীর্ঘদেহী আঁখি দৌড়ে গিয়ে হেড করে গোল আদায় করে নেয় (১-০)। ৩৮ মিনিটে বক্সের ভেতর শামসুন্নাহারের পাস। আনুচিংয়ের বাঁ পায়ের শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলে মারজিয়ার শট। গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে। প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। আবারও একই কম্বিনেশনে ৫৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। মারজিয়ার কর্নার। আবারও আঁখির গোল (২-০)। তবে এবার হেডে নয়। বাঁ পায়ের ভলি শটে। ৬১ মিনিটে মারিয়ার শট ভুটানের সাইডপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৭৯ মিনিটে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে বদলি ফরোয়ার্ড সাজেদা খাতুনের শট সাইডপোস্টে লেগে বল জালে ঢোকে (৩-০)। শেষ পর্যন্ত ড্রাগনকন্যাদের হারিয়ে জয় কুড়িয়ে মাঠ ছাড়ে বঙ্গকন্যারা।
×