ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমার সবচেয়ে গর্বের দিন ১৬ ডিসেম্বর ॥ সুজেয় শ্যাম

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

আমার সবচেয়ে গর্বের দিন ১৬ ডিসেম্বর ॥ সুজেয় শ্যাম

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী সুজেয় শ্যাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার জাদুকরী কণ্ঠ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছিলেন, লাখ লাখ শরণার্থীসহ সাধারণ মানুষদের সংগঠিত করেছিলেন। তার দেখা সে সময়ের ঘটনাবলী সম্পর্কে আলাপচারিতার মূল অংশ টেলিফোনে আলাপন বিভাগে তুলে ধরা হলো। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দিনগুলোর কথা বলুন? সুজেয় শ্যাম : আমি তখন ঢাকা রেডিওতে চাকরি করতাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। আসাদ মারা যাওয়াসহ, তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের অত্যাচার তখন চরমে উঠতে শুরু করে। আমি তখন বিভিন্ন মিছিলেও যোগ দিয়েছি। ঢাকা থেকে ১৮ মার্চ আমার জন্মস্থান সিলেটে যাই। ২৫ মার্চের রাতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় পাকিস্তানী বাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতায় সিলেট নগরীতেও ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। বোমা মেরে কালুর ঘাট রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেয়ার পর আগরতলা হয়ে কলকাতায় পৌঁছায়। বহু কষ্টে কলকাতা ১৯’র ৫৭/৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে গিয়ে সন্ধান পেলাম স্বাধীন বাংলা বেতারের। ২৫ মে থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রোগ্রাম শুরু হয়। সে সময়ের উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতির কথা বলুন.. সুজেয় শ্যাম : অসংখ্য স্মৃতি আছে, কিন্তু এখন সেগুলো বলে কোন লাভ নেই। শহীদুল ইসলামের কথা এবং আজিত রায়ের সুরে ‘তুমি ফিরে যাও’ গানটি রেডিওতে শোনার পর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের চিঠি দিয়েছিলেন। আমার সবচেয়ে গর্বের দিন হলো ১৬ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে শহীদুল ইসলামের লেখা এবং আমার সুরে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনের পর পরই স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রচার হয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে বাঙালী ততদিন গর্বের সঙ্গে এই গানটি উচ্চারণ করবে। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছেন স্বাধীনতার ৪৭ বছরে তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? সুজেয় শ্যাম : সেগুলো এখন মনে করতে ইচ্ছে করে না, কষ্ট হয়। একাত্তরে যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কথা এখন তেমন কেউ মনে রাখে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু স্বাধীনতা তো সবার জন্য। আমরা মুখে বলি দেশকে ভালবাসি কিন্তু কাজের বেলায় তার বিপরীত। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রভাব কেমন মনে করেন? সুজেয় শ্যাম : আমার সন্তানকে সত্যি কথা না বললে, তারা সত্যকে জানবে কী করে? মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণদের দিয়ে ৫০টি গান করিয়েছি। নওশাদ ভাই আমাকে এই সব গানের ক্ষেত্রে অনেক প্রেরণা দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলার গানের জন্য আজ লাল সালাম দেই মেজর জেনারেল (অব.) আমিন চৌধুরীকে। তাদের কারণে আজ স্বাধীন বাংলার গানগুলো বেঁচে আছে। তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রভার তাদের উপর পড়বে কী করে? তবে সত্য কোনদিন মরে না। আমি এখনও আশাবাদী একদিন আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারব। -গৌতম পাণ্ডে
×