ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুজরাট ও হিমাচলে বিজেপির জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

গুজরাট ও হিমাচলে বিজেপির জয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। যদিও দলটির প্রধান অমিত শাহ যেভাবে চেয়েছিলেন, নির্বাচন ঠিক সেভাবে হয়নি। টানা তেইশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও গুজরাট শাসনের ম্যান্ডেট পেয়েছে বিজেপি। পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির জন্য এটা ব্যাপক আশাব্যঞ্জক খবর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। নির্বাচন কমিশনের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে গুজরাটের ১৮২ আসনের মধ্যে ৯৯টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন ৯২টি আসন। যদিও গেল দুই দশকের মধ্যে বিজেপি এবারেই কম ভোট পেয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৮০টিতে। আর অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন তিনটি আসন। প্রত্যাশার চেয়েও কম ভোটে বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৯ সালের নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত হতে জনসমর্থন বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মোদির জন্য ঝুঁকি অবশ্য কম না। দেশটির বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। বন্ড মার্কেটের অবস্থাও ভাল না। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের প্রত্যাশার পারদ উপরেই উঠছে। আগামী বছরে অনুষ্ঠেয় আরও আটটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে তিনি নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক নীতির বিরূপ প্রভাবই সামনে নিয়ে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নয়াদিল্লীর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শুদ্ধ পাই বলেন, আমি জানি না, আগামী নির্বাচনে মোদির দল কতটা সফল হবে। তবে বিজেপিকে অবশ্যই তৃণমূল পর্যায়ে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, কৃষকদের আয় বাড়ানোরও সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। ১৯৯০ সালের পর থেকে হিমাচল প্রদেশে প্রতি পাঁচ বছর পর সরকার পরিবর্তন ঘটে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৬৪ আসনের মধ্যে সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৪৪টি। বিপরীতে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ২১টিতে। অন্যান্য প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন তিনটিতে। হিমাচলে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী প্রেম কুমার ধুমাল নিজের আসনে হেরে গিয়েছেন। নিজের পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত হার-জিতের চেয়ে দলের জয়ই বড় কথা। হিমাচলে পরাজয়ের পর ভারতে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারটিতে। কর্ণাটক, পাঞ্জাব, মেঘালয় ও মিজোরাম। পাঞ্জাব ছাড়া বাকি তিন রাজ্যে আগামী বছর নির্বাচন। ভারতকে কংগ্রেসমুক্ত করার যে ডাক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিয়েছেন, তা ব্যর্থ করে দেয়াই এখন রাহুল গান্ধীর বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি গুরুত্ব দিয়েছিল প্রগতি ও উন্নয়নকে হাতিয়ার করে। কিন্তু ভোটের দিন যত ঘনিয়ে এসেছে, বিজেপি হিন্দুত্বকে তত বড় করে তুলেছে। ভোটের আগে অমিত শাহ অন্তত দেড়শো আসনে বিজয়ী হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু দেড়শো তো দূরের কথা, গতবারের আসনগুলোও তারা ধরে রাখতে পারেনি। ২০১২ সালে বিজেপি জিতেছিল ১১৫টি আসন, এবারে নিশ্চিতভাবে তার চেয়ে অনেক কম আসন পেয়েছে তারা। বিজেপি প্রধান অমিত শাহ বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী বছরের নির্বাচনে বিজেপি কর্ণাটক, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরায়ও জয়ী হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, হিমাচলে আমাদের ভোট অন্তত ১০ শতাংশ বেড়েছে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। ভারতের রাজনীতি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। অসংখ্য বিজেপি কর্মীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই দল সফল হয়েছে। মোদি বলেন, দুই প্রদেশের নির্বাচনে আমাদের বিজয় এটাই বলে দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের আমাদের উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রতি আস্থা রয়েছে। নির্বাচনের হার স্বীকার করে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী তার প্রতি ভালবাসা ও সম্মান দেখানোয় ভোটারদের ধন্যবাদ দেন। তিনি টুইটারে দেয়া এক পোস্টে বলেন, কংগ্রেস দল জনগণের রায় মেনে নিয়েছে। দুই রাজ্যের নতুন সরকারকে অভিনন্দন। আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে গুজরাট ও হিমাচলের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
×