ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুটানকে হারালে ফাইনালে এক পা দেবে বাংলাদেশের মেয়েরা, অপর ম্যাচে নেপাল মোকাবেলা করবে ভারতকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ভুটানকে হারালে ফাইনালে এক পা দেবে বাংলাদেশের মেয়েরা, অপর ম্যাচে নেপাল মোকাবেলা করবে ভারতকে

রুমেল খান ॥ পৌষের সকাল। ঘড়িতে ১১টা বেজে ৫ মিনিট। বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে গিয়ে একটা দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠতে হলো। মাঠের এক কোনায় জটলার মতো। সেখানে বরফ রাখার একটা বাক্স। তাতে বরফমিশ্রিত পানি ঢেলে পা ডুবিয়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের তিন সেনানি মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুন এবং মনিকা চাকমা। ওদের পাশেই টার্ফে বসা ফরোয়ার্ড আনুচিং মগিনী। কাপড়ে বরফ বেঁধে সেটা হাঁটুতে ডলছে। একটু পরেই আরেক খেলোয়াড় নাজমা এসে দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুকে এসে জানাল তার পায়ের পাতায় ব্যথা, কিছুটা ফুলে গেছে। লিটু তাকেও বরফ চিকিৎসার পরামর্শ দিলেন। ব্যাপার কি? এক দলের পাঁচ-পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আহত হলো কিভাবে? অবস্থা কতটা গুরুতর? আজ মঙ্গলবার ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে কি তারা খেলতে পারবে? অনুশীলন শেষেই সব প্রশ্নের জবাব মিলল দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে। সব শুনে একগাল হেসে আশ্বস্ত করলেন তিনি, ‘না, ওদের কারুরই সিরিয়াস কোন ইনজুরি হয়নি। গত ম্যাচে তহুরা, মনিকা আর মারিয়া অতিরিক্ত পরিশ্রম করে খেলেছে। প্রচুর দৌড়েছে, ওভারল্যাপ করেছে, শুটিং-ড্রিবলিং করেছে। ফলে তারা বেশ ক্লান্ত। এজন্য আজ তাদের অনুশীলন করাইনি।’ পাশেই দাঁড়ানো দলের ফিজিওথেরাপিস্ট সজীব বকশী বললেন, ‘তাদের এ্যাঙ্কেল জয়েন্টের রিকভারির জন্য ওদেরকে ১০ মিনিট করে আইস থেরাপি দিচ্ছি। আনুচিং এবং নাজমা নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে যে চোট পেয়েছে, তা খুবই সামান্য। এটা কিছু নয়। তারা পরের ম্যাচেও খেলতে পারবে। আমরা আসলে কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। এজন্যই এই পাঁচজনকে আজ অনুশীলন করাইনি, বিশ্রাম ও চিকিৎসা দিচ্ছি।’ সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে আজ বঙ্গকন্যাদের আরেকটি পরীক্ষা। প্রতিপক্ষ ভুটান। বেলা সাড়ে ১১টা কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচটি। একই ভেন্যুতে দুপুর আড়াইটায় নেপাল মোকাবেলা করবে ভারতকে। আজ জিতলে বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা প্রায় নিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে কোচ ছোটন জানান, ‘আমরা যদি গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও স্বাভাবিক খেলাটা খেলি, তাহলে অবশ্যই আমরা জিতব। আর জিতলে ফাইনালে যাওয়াটা কমপক্ষে ৮০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবে আমাদের।’ সোমবার বাফুফে টার্ফে প্রায় এক ঘণ্টা অনুশীলনে ঘাম ঝরায় বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন বিস্ময়করভাবে সেখানে দেখা যায়নি ‘বাফুফের মাতব্বর’ খ্যাত স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলিকে। ফলে অনুশীলনে ছোটনকে মনে হয়েছে অনেক নির্ভার। অনুশীলনের শেষ দিকে দলের ফুটবলারদের দুই ভাগে বিভক্ত করে আট মিনিটের একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলান (বিকেলে মেয়েদের সাঁতার অনুশীলন হয়)। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই আসরে অংশ নিচ্ছে চার দল। নিষেধাজ্ঞা কারণে অংশ নিতে পারছে না পাকিস্তান। শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করেছে শ্রীলঙ্কা। চার দলের এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতিতে। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দুই দল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে। ৩ পয়েন্ট করে নিয়ে গোল পার্থক্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ (+৬) ; দ্বিতীয় স্থানে ভারত (+৩)। ভুটান ও নেপাল এখনও কোন পয়েন্ট পায়নি। রবিবার উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ ৬-০ গোলে নেপালকে এবং ভারত ৩-০ গোলে ভুটানকে হারায়। ভুটান প্রথম ম্যাচে হারলেও তাদের মোটেও হাল্কাভাবে নিচ্ছে না বাংলাদেশ। ছোটন বলেন, ‘এ ম্যাচটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটিকে তাই আমরা সেমিফাইনাল হিসেবে নিচ্ছি।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘নেপালের বিপক্ষে আমাদের মেয়েরা যেভাবে খেলেছে, এ ম্যাচেও একইভাবে খেলবে। দর্শকদের বিনোদিত করে, ভাল খেলে নিজেদের সেরাটা দেবে।’ আগের ম্যাচে জিতলেও প্রচুর গোল মিসও করেছে তহুরা, মনিকারা। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘এটাই এখন আমাদের একমাত্র সমস্যা। গোল স্কোরিং নিয়ে মেয়েদের বুঝিয়ে দিয়েছি।’ ভুটানকে বয়সভিত্তিক ফুটবলে এর আগেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে নাকাল করে বাংলাদেশ অপরাজিত গ্রুপ সেরা ও শেষ চারে নাম লিখিয়েছিল। ওই ম্যাচে সানজিদা, মারিয়া ও মৌসুমীর হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ জিতেছিল বিশাল ব্যবধানে, ১৬-০ গোলে! আজকের ম্যাচেও ভুটান বধ করবে বাংলাদেশ। দেবে গোল। জিতবে ঠিকই। তবে সেটা কত গোলে, সেটাই হতে পারে প্রশ্ন।
×