ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীত আছে, শীত নেই জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

শীত আছে, শীত নেই জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট

সমুদ্র হক \ দু’দিন আগেও শীত ছিল না। পৌষ কি এবারও....। এমন ভাবনায় পৌষ অপমান সইতে পারল না। শীত তো শীত, যেন শৈত্যপ্রবাহ। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরবঙ্গে এমনই শীত এখন। তবে গেল ক’বছরের স্বল্পকালীন শীতের অনুভবে বলাবলি হচ্ছে : দিনকয়েক থেকেই পালাবে। প্রবীণরা বলছেন, ‘সেই শীত কী আর আছে! নিকট অতীতে শীত বছরে মাসতিনেক থাকত। আর এখন! এই এলো আর গেল!’ এবারও কি তেমনই হবে! আবহাওয়াবিদগণ তো তাই বলছেন। দিনে দিনে শীতের সময়কাল কমে যাবে। কারণ! ওই জলবায়ু পরিবর্তন। এখন মৌসুমের ছোট দিন। বেশিরভাগই কুয়াশায় ঢাকা। গোধূলী বেলার দেখা নেই। বিকেলও বোঝা যায় না। দ্রত ধেয়ে আসে সন্ধ্যা। শিশির যেন অদৃশ্য বৃষ্টি। মাথায় হাত দিলে টের পাওয়া যায়। রাত ন’টায় মনে হবে মাঝ রাত। বগুড়া শহরতলী এলাকায় তখন শিয়ালের ডাকও শোনা যায়। রাত দশটার পর অনেকটাই ফাঁকা। মাঝে মাঝে রিক্সার ক্রিং ক্রিং শব্দ। দ্রতগামী কোন মোটর গাড়ির শব্দকে মনে হবে ভিন গ্রহের সসারের মতো কি যেন অতিক্রম করল। মধ্যরাতে নগরী যেন একেবারে ঘুমিয়ে পড়ে। শহর ও নগরগুলোতে শীতের দৃশ্য অনেকটাই এই রকম। এর বাইরে মৌসুমি শীতকাল নগরী মহানগরীতে প্রায় অনুপস্থিত। কংক্রিটের বনে দিনে সূর্যের তাপ শুষে নিয়ে রাতে তা ছেড়ে দেয়। তারমধ্যে ঘন কংক্রিটের হাইরাইজ বনের ঢাকা মহানগরীতে জলাশয় কমে যাওয়া, যান্ত্রিক যানবাহনের নিত্যদিনের ইঞ্জিনের সৃষ্ট তাপ মিলিয়ে তাপাঞ্চল সৃষ্টি করেছে। তাপমাত্রা সব সময়ই ২/৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়তি থাকে। যে কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঢাকা মহানগরীতে শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়। গত একযুগে মহানগরী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি শীত অনুভ‚ত হয় ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি। ওই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরপর গেল তিন বছরে ঢাকায় ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামেনি। আবহাওয়া বিভাগ বলছে এবারও ঢাকায় তেমন শীত পড়বে না। একই অবস্থা হবে উত্তরাঞ্চল ছাড়া অন্যান্য নগরীতে। তবে গ্রাম ও নদী তীরবর্তী এলাকায় শীত এখনও বোঝা যায়। আহা উঁহু শব্দে ও ঠকঠক করে কাঁপুনিতে অনুভবও করা যায়। গায়ে সোয়েটার চাদর চড়িয়ে চলতে হয়। গেরস্ত ও কিষান বাড়ির উঠানে খড়, লতাপাতা জ্বালিয়ে চারধারে বসে গল্পগুজবে শরীর উষ্ণ করে নেয় লোকজন। গ্রাম এখন উন্নত হওয়ায় সেদিনের সেই খড়ের চালার বেড়ার বাড়ি নেই। হুহু করে শীতের বরফের হাওয়া এখন আর কাঁচা ঘরে ঢুকতে পারে না। বেশিরভাগ বাড়ি টিনশেডের নিচে ইটের গাঁথুনি। জানালা দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকলে সেদিনের মতো শীত জেঁকে বসতে পারে না। লেপ কাঁথার মধ্যে ঢুকলেই হলো। এভাবে প্রকৃতিতে পরিবর্তনের পালা শুরু হয়েছে গেল ক’বছর ধরেই। গ্রীষ্মকাল থেকেই তা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মেও কুয়াশাপাত হয়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে এবারের বর্ষার বৃষ্টি নির্দিষ্ট ঋতু পার করে অনেকটা সময় থেকেছে। শ্রাবণ পেরিয়ে যাওয়ার পর নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠে কয়েকদিনের মধ্যে তা নেমে যায়। শরত ও হেমন্তের শুরুটায় আকাশ ছিল আধো কালো ও আধো সাদা মেঘে ঢাকা। শীতের প্রাক্কালের ঋতু হেমন্ত শান্ত হলেও তা থাকেনি। হেমন্তে ছিল গ্রীষ্মের মতো চড়া রোদ, বর্ষার মতো বৃষ্টি। বোঝাই যায়নি এটা কোন ঋতু। সাধারণত শীতের ছোঁয়া দেখা দেয় অগ্রহায়ণে। কুয়াশাপাত হয়েছে তবে তা ছিল এলামেলা। পৌষের প্রথম দিনে বোঝাই যায়নি এটা পৌষ মাস। অনেকে বুঝতেই পারেনি পৌষের শুরুটা। এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, উত্তরের বাতাস সক্রিয় হলে জলীয় বাষ্প শুষে নেবে। তখন শীত বাড়বে। তীব্র শীত নামার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে মনে করছেন। ডিসেম্বরের শুরুতে নিম্নচাপের কারণে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি ছিল। নিম্নচাপ কেটে গিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জানুয়ারির (২০১৮) মধ্যভাগে মাঘ মাস শুরু হলে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শীতের প্রবেশ দুয়ার হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট নীলফামারী এলাকায় শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। শীতে ঋতুর যে উপসর্গগুলো থাকার কথা তাতেও ভাটা পড়েছে। শীত মৌসুমে গ্রামীণ জীবনের বিনোদন ও মেলাগুলো এবার তেমন নেই। শীতে নগরীর বড় আকর্ষণ যে পিঠা উৎসব তাও এবার জমজমাট নয়।
×