স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থেকে বহুরূপী প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা হলো- কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেল (২২), রুবেল হাওলাদার (২২), আল-আমিন (২০) ও মোতালেব হোসেন (৪৮)। র্যাব এ সময় ইংরেজীতে লেখা ৯৭টি জঙ্গীবাদী ভুয়া লিফলেট, নকল ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত ৩ হাজার ৩শ’ ৫০ পিছ জিনেক ট্যাবলেট, বেশ কিছু নকল ইয়াবা ও নকল ফেনসিডিল ও নকল ইয়াবা ও ফেনডিসিল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। রবিবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফতুল্লার শিবু মার্কেট ও টাগারপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে অবস্থিত র্যাব-১১ এর ব্যাটেলিয়ন সদর দফতর কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল কামরুল হাসান এই তথ্য জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্ণেল কামরুল হাসান জানান, শুক্রবার এক যুবক র্যাবের কাছে তথ্য দেয় যে, ফতুল্লার কোতালের বাগ কবরস্থান মসজিদে কিছু লোক গোপন বৈঠক করছে এবং তারা জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এমনকি তারা জঙ্গী সংক্রান্ত উগ্রবাদী লিফলেট মানুষের মাঝে প্রচার চালাচ্ছে। র্যাবের বিষয়টি সন্দেহ হলে মসজিদে ব্যাপক তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণাদি না পেয়ে বিষয়টি সন্দেহ হলে র্যাব লিফলেটের উৎস খোঁজতে থাকে।
পরে ভুয়া তথ্যদাতা কামরুল ইসলামকে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা শিবু মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে একই রাতে টাইগারপাড় এলাকা থেকে কামরুল ইসলামের সহযোগিদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত প্রতারক কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেল নিজেই জঙ্গী সংক্রান্ত লিফলেট তৈরি এবং নকল ইয়াবা ও ফেনসিডিল তৈরি করে আসছিল। পরে তার বাসায় তল্লাশি করে বিপুল পরিমান ভূয়া জঙ্গিবাদি লিফলেট এবং নকল ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের সিও আরও জানান, গ্রেফাতারকৃত কামরুল ইসলাম রুবেল বরিশালের কলাপাড়া একটি প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। পরে সে ফতুল্লা এলাকায় বসবাস শুরু করে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। কামরুল ইসলাম অধিক লাভের আশায় নিজেই তার একটি দল তৈরি করে সহযোগীদের সাহায্যে ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট জিনেক-৫০ এর সঙ্গে ইয়াবা সাদৃশ্য সুগন্ধির মিশ্রন ঘটিয়ে ইয়াবা প্রস্তুত করে বিক্রি করতে থাকে। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গোপনে তার প্রস্তুকৃত ইয়াবা রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিয়ে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার অপকৌশল প্রয়োগ করে আসছিল।
সে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দোকানের রুবেল হাওলাদারের সহায়তায় জঙ্গীবাদী লিফলেট তৈরি করে মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে জঙ্গী মামলায় জড়িয়ে অবৈধভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চেয়েছিল। ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতায় ফাঁসানোর জন্য উক্ত লিফলেট গুলো মসজিদের ভেতরে রেখে দিয়েছিল বলে স্বীকারও করেছে।
সিও আরও জানান, রুবেল হাওলাদার ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দোকানের মাধ্যমে ব্যবসা করে আসছিল। রুবেল হাওলাদার কামরুল ইসলামের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এমনকি উগ্রবাদী লিফলেট কম্পোজ ও বিভিন্ন মাদ্রক দ্রব্যের স্টিকার কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করত। আল-আমিন মাদক সরবরাহের কাজ সহায়তা করত গোপনে মাদক দ্রব্য ও মসজিদে লিফলেট রাখার কাজেও তাকে সহায়তা করত। মোতালেব হোসেন ওষুধের ব্যবসা করে। সে ব্যাথানাশক জিনেক-৫০ ট্যাবলেট কামরুল ইসলামের কাছে সরবরাহ করেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র্যাব জানায়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: