ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

'রাখাইনে দুই মাসে ৪০ গ্রাম পুড়িয়েছে সেনাবাহিনী'

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

'রাখাইনে দুই মাসে ৪০ গ্রাম পুড়িয়েছে সেনাবাহিনী'

অনলাইন ডেস্ক ॥ স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত দুই মাসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ পেয়েছে তারা। সোমবার নিউইয়র্ক থেকে এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে আরো ৪০টি গ্রামের ভবনসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে। ২৫ অাগস্টের পর রাখাইনে এ নিয়ে ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই সময়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলছে, স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রমাণ করছে, এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে, যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়ানমার। ২৩ নভেম্বর ওই সমঝোতা হয়। কিন্তু ২৫ নভেম্বর রাখাইনের মংডুর কাছে মিয়াও মি চ্যাঙ গ্রামে আগুন আর ঘরবাড়ি ধ্বংসের ছবি তুলেছে স্যাটেলাইট। পরের এক সপ্তাহের মধ্যে চারটি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, 'সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের সময়েও রাখাইন গ্রামে বর্মী সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে এটাই প্রমাণ হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার এই প্রতিশ্রুতি স্রেফ একটি প্রচারণা। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংসের যেসব অভিযোগ বার্মার সেনাবাহিনী অস্বীকার করে আসছে, সেটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে এসব স্যাটেলাইট ছবি।' মিয়ানমারের মংডু, বুথিডাং আর রাথিডাং শহরে আশেপাশের এক হাজার গ্রামের ওপর স্যাটেলাইটের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ বছরের অাগস্টের শেষের দিকে রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এসব গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ১১৮টি গ্রামে হামলা হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর, যখন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের অফিস থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, রাখাইনে অভিযানের সমাপ্তি হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, অাগস্ট থেকে রাখাইনে শুরু করা এই অভিযানের সময় বর্মী সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, গ্রেপ্তার আর ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড চালিয়েছে। জাতিগত নির্মূলের এই অভিযান মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গেই সমতুল্য বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) বলছে, মিয়ানমারে আগস্টে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এক মাসে অন্তত ৬ হাজার ৭'শ রোহিঙ্গা হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৭'শ মৃত্যুর কারণ সহিংসতা, যার মধ্যে পাঁচ অথবা তার চেয়ে কম বয়সের শিশু ছিল ৭৩০ জন।
×