ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তেল উৎপাদন সীমিত রাখার মেয়াদ বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

তেল উৎপাদন সীমিত রাখার মেয়াদ বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ একটা সময় বিদ্যুত উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো জ্বালানি তেল। উন্নত দেশগুলোর বিদ্যুতকেন্দ্রে এর ব্যবহার অনেক কমে গেছে। সেখানে তেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের পরিবর্তে স্থাপন করা হয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কমছে তেলভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র। ফলে এই জ্বালানি পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী কমেছে। চাহিদা কমে গেলেও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। ২০১৪ সালের জুনে প্রতি ব্যারেল তেল বিক্রি হয় ১১৫ ডলারে। আর ২০১৫ সালের শেষ দিকে তা নেমে যায় ২৭ ডলারে। যা গেলো ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তেলের দাম উর্ধমুখী করতে গত বছরের শুরুর দিকে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক। সংগঠনটির সদস্য নয়, এমন তেল উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোও এতে সম্মতি জানায়। প্রাথমিকভাবে ৬ মাসের জন্য তেল উৎপাদন সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এর সুফল পায় তেল রফতানিকারকরা। ২০১৬ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বনিম্ন ৫২ ডলারে বিক্রি হয়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল। দাম আরও বাড়াতে এ আশায় উৎপাদন সীমিত রাখার মেয়াদ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুতে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৫৭ ডলারে। দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার। এদিকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিদ্যুতচালিত গাড়ি বাজারজাতকরণের ঘোষণা দিয়েছে শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে তেলের চাহিদা আরও কমতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানায়, ২০১৯ সালে বিদ্যুতচালিত গাড়ির ব্যবহার শুরু হলে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা কমবে। ফলে কমবে এই জ্বালানি পণ্যের দামও। তবে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজার স্থিতিশীল থাকতে পারে। অন্যদিকে ভালো দাম পেতে ২০১৬ সালে নেয়া কৌশলকেই সমাধান হিসেবে মানছে তেল উৎপাদন ও রফতানিকারক দেশগুলো। এই জ্বালানি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেক। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হবে না তেলের উৎপাদন। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় এই পণ্যের দাম উৎপাদন ও সরবরাহ আরও কমতে পারে। নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ওপেকের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানাবে রাশিয়াসহ তেল উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলো। বর্তমানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে সৌদি আরব; যা মোট চাহিদার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৬ লাখ ব্যারেল এবং রাশিয়া ১ কোটি ৩ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। তেল উৎপাদনে শীর্ষ দশে আরও রয়েছে যথাক্রমে চীন, ইরান, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং কুয়েত। অন্যদিকে জোটবদ্ধভাবে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১০ সাল থেকে দৈনিক ১ কোটি ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫০ ব্যারেল তেল আমদানি করে ইইউ-এর দেশগুলো। একক দেশ হিসেবে তেল আমদানির শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র; ২০১৩ সাল থেকে দৈনিক ৯০ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করছে দেশটি। তেল আমদানির শীর্ষ দশে আরও আছে যথাক্রমে চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফিলিপাইন, ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্য।
×