ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আপাতত জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজ চালিয়ে যাবেন

মহিউদ্দিন নেই কার হাতে যাবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মহিউদ্দিন নেই কার হাতে যাবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। প্রথমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন নেতৃত্বদানকালে অসাধারণ গুণে তিনি হয়েছিলেন সব আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যমণি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল সব দলের তিনি ছিলেন অত্যন্ত আস্থাভাজন একজন নেতা। অনেকটা অভিভাবকতুল্য এই নেতার মৃত্যুতে রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট শূন্যতা। বিশেষ করে মাত্র কদিনেই এই অভাব হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেন অনেকটাই এতিম হয়ে পড়েছেন। এই শূন্যতা কিভাবে কাকে দিয়ে পূর্ণ হবে তা ভাবতেও পারছেন না কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু তারপরও দলের শীর্ষ পদটিতে কে আসতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিশ্লেষণ। মহানগর আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও স্বীকার করছেন যে, নেতৃত্বের জায়গায় মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার সমকক্ষ কেউ না। এমনকি কাছাকাছিও কেউ নন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। শুধু দলীয় কর্মসূচী নয়, চট্টগ্রামের স্বার্থে তিনি হতে পেরেছিলেন স্বাধীনচেতা এক ব্যক্তিত্ব। ফলে তার গ্রহণযোগ্যতা সর্বমহলে ছিল প্রশ্নাতীত। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই জনগণের নেতা। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নিশ্চয়ই দায়িত্ব পালন করবেন অন্য কোন নেতা। কিন্তু ওই রকম ভাবমূর্তির আরেকজন নেতা যে পাওয়া যাবে না সে বিষয়েও নিশ্চিত তারা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে কে আসছেন বা দলের হাল এবার কে ধরতে যাচ্ছেন তা নিয়ে শুধু দলীয় অভ্যন্তরেই নয়, বরং নাগরিকদের মধ্যে ভাবনা চিন্তা আরও বেশি। কেননা, মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কল্পনাই করা যেত না। কিন্তু নেতৃত্বহীন এ দলের দায়িত্ব কার ওপর বর্তাচ্ছে তা এখন ভাবতেই হচ্ছে। তবে আপাতত দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির ওপরই থাকছে এই গুরুদায়িত্ব, এমনটাই জানিয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন ৯ জন। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের এককালের তুখোড় নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, মোঃ নাঈম উদ্দিন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, এ্যাডভোকেট সুনীল সরকার, সাবেক গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, জহুরুল আলম দোভাষ এবং আলতাফ হোসেন বাচ্চু। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যিনি সিনিয়র তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন এমনটা নির্ধারিত থাকায় সহ-সভাপতিদের মধ্যে কোন ধরনের মতভেদ নেই। তবে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কতদিন চালানো হবে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে। কেননা, সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা রাখতে এই পদ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত দ্রুতই নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত তৃণমূল পর্যায়ে। নগর আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে যিনি সিনিয়র তিনিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাবেন আগামী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে তৎপর রাখতে যদি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, সেই এখতিয়ার শুধুমাত্র কেন্দ্রের। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দ্রুততার সঙ্গে তা হবে কিনা সে বিষয়ে কোন আভাস এখনও নেই। জাতীয় রাজনীতিতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, এখানেই রয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর এবং দেশের একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা কাস্টম হাউস। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য, জ্বালানি সেক্টরসহ বেশকিছু প্রধান খাত এই চট্টগ্রামে। উন্নয়নের ধারাহিকতায় চট্টগ্রামকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছে সরকার। গ্রহণ করা হয়েছে ইকোনমিক জোন, টানেল, এলএনজি টার্মিনালসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প, যার কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। চট্টগ্রামের ওপর দেশের অর্থনীতি যেমন নির্ভর করে তেমনিভাবে দেশের রাজনীতিতেও রয়েছে এই নগরীর প্রভাব। বিগত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই দেখা গেছে যে, চট্টগ্রাম অকার্যকর করে পুরো দেশকে অচল করে দেয়া যায়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তেমন ব্যাপক প্রভাব নিয়ে আর কেউ নিকট ভবিষ্যতে আসবেন, এমন মনে করেন না কেউই।
×