ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের কেউ ক্ষমতায় আসতে দেবে নাবিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের কেউ ক্ষমতায় আসতে দেবে নাবিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, যারা দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে তারা দেশবাসীর কাছে কোন মুখে ভোট চাইবে? তারা কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, রাজনীতি করে? এসব দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, লুটেরা, খুনীদের দলকে জনগণ কখনো ভোট দেবে না। এরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। দেশের মানুষই তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না, আমরা তা হতে দেব না। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মানুষ মাথা উঁচু করে চলছে, চলবেই। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রবিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা সৃষ্টি করে, দেশের জন্য ত্যাগ করে, তাদের দেশের প্রতি দরদ থাকে। আর যারা ক্ষমতায় উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের সেই দরদ থাকে না। যারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চায়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত হোক তা চায়- তারা কখনোই যুদ্ধাপরাধী ও মানুষ হত্যাকারী দলকে সমর্থন করতে পারে না, ভোট দিতে পারে না। এই লুটেরার দল ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এদের কখনো বিবেকবান দেশের জনগণ ভোট দেবে না, দিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাদের বিচার হয়েছে, ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে- সেসব যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল, ফাঁসির কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ছেলে-মেয়েদের সন্তানদের দলে ভিড়িয়ে রাজনীতি করে- স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা একজন মানুষ সেই দলকে কী ভাবে সমর্থ দেন? দলটির অনুগত হোন? তাদের কী বিবেকবোধ, বোধশক্তি কিছুই নেই? কোন বিবেকবান মানুষ তো তাদের সমর্থন করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন আহমদের সন্তান সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, দলের মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। বেলা তিনটায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ভিতরে ঠাঁই না হওয়ায় অনেকেই মিলনায়তনের বাইরে ছিলেন। নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাতের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, সন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা (আওয়ামী লীগ) গড়ে তুলি, আর খালেদা জিয়ারা ধ্বংস করে। আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়ারা মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ছেলের সামনে বাবাকে, মায়ের সামনে ছেলেকে, পিতার সামনে ছেলেকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আর এসব অপকর্মের হুকুমদাতা হলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, আর পরামর্শদাতা হচ্ছে তার কুলাঙ্গার পুত্র ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা। এখন দেখি বিদেশে শপিং মল বের হচ্ছে। ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা তারা লুটে নিয়ে গেছে। এতো অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা কী ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে? কোন মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে? স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই শুরু করেছিলেন। ওই সময় অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত ছিল। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিল, যারা রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করে এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনদের হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল- তাদের এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না, তাদের ভোটের অধিকারও ছিল না। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়। যারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী যারা তৈরি করেছিল, যারা দেশকে ধ্বংস করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে- সেসব যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা বানানো হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা দেশের জন্য রক্ত দিলো, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারাই যেন হয়ে গেল অপরাধী? আর যারা দেশকে ধ্বংস করলো, যারা আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল, নির্যাতন করলো, লুটপাট করলো, সেসব যুদ্ধাপরাধীরাই হয়ে গেল মন্ত্রী। আর এসব করেছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া ছিল একজন সাধারণ মেজর। জাতির পিতা তাকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল বানালেন। সেই বেঈমান, মুনাফেক জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লো। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধে সে ইনডেমনিটি জারি করলো। বঙ্গবন্ধুদের খুনীদের বিচারের পথই শুধু বন্ধ নয়, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছে এই জিয়াউর রহমান। জাতির পিতার হত্যাকারীরাই হয়ে গেল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা! আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ সবাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও একধাপ ওপরে নিয়ে গেল। যুদ্ধাপরাধী ও খুনীদের হাতে তুলে দিলো লাখো শহীদের রক্ত জাতীয় পতাকা। তারা হয়ে গেল মন্ত্রী, উপদেষ্টা। যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম হয়েছে, যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে, তাদেরকেই উনি (খালেদা জিয়া) মন্ত্রী করেছিলেন। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল বানালো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা স্বাধীন দেশে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কী করে মেনে নিতে পারেন যে ফাঁসির হুকুম পাওয়া যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যারা চায়, যারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চায়, যারা চায় দেশের সন্তানরা লেখাপড়া শিখবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হবে, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে তাদের প্রতি বলতে চাই- আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখনই দেশের উন্নতি হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা দিয়েছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। মাঝখানে ৮ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল, দেশের উন্নয়নও বন্ধ ছিল। এখন আবার উন্নয়ন শুরু হয়েছে। দেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের দেশের প্রতি যে দরদ-আন্তরিকতা থাকে, উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষের তা থাকে না। তাদের লক্ষ্য থাকে ভোগবিলাস, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার। তাদের পক্ষে কেউ থাকবে না। যারা দেশের বিরোধী, যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। তারা কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিজয় দিবসে দেশের তরুণদের উচ্ছ্বাস-উৎসাহের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন করেছি, এখন আমাদের নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, এ বছর বিজয় দিবস ব্যাপকভাবে পালিত হয়েছে। আপামর জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, শিশু, যুবক থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে এই দিনটিকে পালন করেছে, তারা যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে নতুনভাবে জাগ্রত হয়েছে, আমি তাদের মধ্যে আশার আলো দেখি। তাদের হাত ধরেই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত হবে। আগামী দিনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অথচ এই ভাষণ একটা সময় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জনগণ এখন মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। সেটাই এই বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা। আমাদের স্বাধীনতার সুফলকে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, এটাই আজকের প্রতিজ্ঞা। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের বিজয় আসবেই। আগামী ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের আরেকটি বিজয় আসবে। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং আগামীতেও থাকবে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করব। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এখন বিশ্বের সব দেশ বাংলাদেশকে সম্মান করে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের সুর্বণজয়ন্তী। এই দুটি সালকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা পৃথিবীর আর্তমানবতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। একই সঙ্গে সেখানে ছুটে গিয়ে অসুস্থ রোহিঙ্গাদের বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী অনেকদিন পর ডঙ্কা বাজিয়ে সেখানে গিয়ে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ফটোসেশন করেছেন। বিএনপির সমালোচনা করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিএনপির স্পর্ধা কত বড় তারা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলে। চোরের মায়ের বড় গলা। একটা চোরের কাছে কেন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে? বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। তারপুত্র সিঙ্গাপুর ও মালেয়েশিয়ায় টাকা পাচার করেছে। এটা প্রমাণিত। বিএনপির মুখে গণতন্ত্র মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনী মোশতাক-জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিল। হাজার হাজার সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। দেশে যদি গণতন্ত্র না-ই থাকতো তাহলে বিএনপি নেতারা টেলিভিশনে এত বড় বড় কথা বলে কিভাবে? যারা খুন করে, আগুন সন্ত্রাস করে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। আগামী নির্বাচনে যেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আমিরাত ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান ॥ বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও শিল্প গড়ে তোলার অবকাঠামোও প্রস্তুত করা হয়েছে। আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীরা এখানে যে কোন ধরনের শিল্প স্থাপনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।’ রবিবার সকালে গণভবনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত সাঈদ বিন হাজার আল সেহি সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে তাঁরা দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জানান, তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বিমান যোগাযোগ সেবা, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময় চুক্তি। এছাড়া, বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে দেশের প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া। তিনি দু’দেশের মধ্যে ‘গভমেন্ট টু গভমেন্ট’ সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের সরকারী ও কূটনৈতিক পাসপোর্টের ক্ষেত্রে আরব আমিরাতে ভিসা মুক্ত চলাচলের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। এ সময় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে বিশেষায়িত হাসপাতাল করার ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যে প্রস্তাব ছিল তা পুনরুজ্জীবনেরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সাঈদ বিন হাজার আল সেহির দায়িত্ব পালনকালে দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।
×