ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের পরও উৎসবের রেশ

এখনও বিজয়ের আনন্দ পতাকার লাল-সবুজে অপরূপ বাংলা মা

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

এখনও বিজয়ের আনন্দ পতাকার লাল-সবুজে অপরূপ বাংলা মা

মোরসালিন মিজান ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে...। সত্যি আঁখি ফেরানো যাচ্ছিল না। এবারও বিজয় দিবসে অনিন্দ্য সুন্দর রূপে ধরা দিয়েছিল বাংলা মা। বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়েছিল। জাতীয় পতাকার রঙে সেজেছিল গোটা দেশ। বাঙালী এদিন আবেগে ভেসেছে। যারা অস্ত্র হাতে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই করে দেশ উপহার দিয়েছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে জাতি। স্মরণ করেছে একাত্তরে নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের শিকার শহীদদের। বেদনার পাশাপাশি ছিল আনন্দঘন উদযাপন। সারাদেশেই ছিল উৎসব অনুষ্ঠান। যে যেভাবে পেরেছেন উদযাপন করেছেন বিজয় দিবস ২০১৭। দিবসটি ইতোমধ্যে গত হয়েছে। তবে উৎসব উদযাপনের রেশ কাটেনি। এখনও শহর ঢাকায় বিজয়ের রং। আনন্দ উচ্ছ্বাস। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই বদলে যেতে শুরু করে ঢাকা। মূল অপেক্ষা ছিল ১৬ ডিসেম্বরের জন্য। বিজয়ের দিনে প্রায় সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করা হয়। ঢাকার প্রতি প্রান্তে ছিল উৎসব অনুষ্ঠান। এসবের কিছু এখনও চলমান। মানুষের মনে যে দোলা যে আবেগ উচ্ছ্বাস, এখনও অটুট আছে। বিজয় দিবসের দ্বিতীয় দিনে রবিবার রাজধানী শহর ঘুরে এমন উপলব্ধি হয়েছে। যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। সন্ধ্যায় এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, উৎসবের আমেজ। মূল ভবনটি মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল। তা-ই আছে। লাল সবুজ আলো বিজয় দিবসের অনুভূতিটাকে যেন জাগিয়ে রেখেছে। আড্ডা গল্পে মশগুল অনেকেই গা থেকে পতাকার রং মুছে ফেলেননি। গিটার বাজিয়ে গান হচ্ছিল এখানে ওখানে। যুদ্ধ দিনের গান। আসাদ নামের এক তরুণ গাইছিলেন, রেললাইনের ওই বস্তিতে...। প্রয়াত পপ তারকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের গাওয়া গান। সুর তাল ঠিক রেখে গাইছিলেনÑ এমন নয়। এর পরও মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া সন্তানের প্রতীক্ষায় থাকা মায়ের হাহাকার তীব্রভাবে ছুয়ে যাচ্ছিল! গান শেষ হলে আসাদ বলছিলেন, ডিসেম্বর মাসটা তো অন্যরকম। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জনের মাস। একটা ফিল কাজ করে। এজন্যই যুদ্ধ দিনের গান গাওয়া। গানগুলো এখনও অনুপ্রেরণার উৎস বলে মন্তব্য করেন আরেক তরুণ হাবিব। অনেক আগে থেকে সরব হওয়া মঞ্চগুলোতে বিজয়ের গান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে ঢাকার ৮ মঞ্চে বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। গত বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর শনিবার সবকটি মঞ্চে অনুষ্ঠান ছিল। ষষ্ঠ দিনের অনুষ্ঠান বিকেল ৪টায় বাহাদুর শাহ্ পার্কে শুরু হবে। আয়োজকরা জানান, অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে থাকবে আলোচনা। সভায় প্রধান অতিথি আসন থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ। উৎসবের আহ্বায়ক শেখ আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সদস্য সচিব মানস বোস বাবুরাম। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মৈত্রী শিশু দল, সপ্তকলির আসর, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস্রে (বাফা) শিল্পীরা বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে থাকবেন। একক আবৃত্তি করবেন রফিকুল ইসলাম ও পদ্মাবতী দেবী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিবু রায়, শামিম চৌধুরী শ্যামল, সালমা চৌধুরী প্রমুখ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন। চরম পত্র পাঠ করবেন সৈয়দ শহিদুল ইসলাম নাজু ও তামান্না সারোয়ার। থাকবে পথনাটকের পরিবেশনা। ঢাকার বিভিন্ন সিনেমা হলে চলছে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র। এমনকি ঢাকার বাইরে সিরাজদিখানে নবনির্মিত পিক্স সিনেপ্লেক্সে চলছে ৭ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র উৎসব। আয়োজকদের পক্ষে ইমরান হোসাইন কিরমানি জানান, বিজয় দিবসের আগের দিন থেকে চলছে উৎসব। ইতোমধ্যে দেখানো হয়েছে আগুনের পরশমনি, গেরিলা ও অনিল বাগচীর একদিন। আজ সোমবার প্রদর্শিত হবে জয়যাত্রা। মাটির ময়না দেখানো হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। বুধবার থাকছে মেঘ মল্লার। বৃহস্পতিবার একত্তরের মা জননী দেখিয়ে শেষ হবে উৎসব। মোটামুটি গ্রামীণ পরিবেশেই সিনেপ্লেক্সটি গড়ে তোলা হয়েছে। এমন একটি জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নিয়ে এক সপ্তাহব্যাপী উৎসব। আশা জাগানীয়া বৈকি! সারাদেশে বিজয় দিবসের আরও অনেক উৎসব অনুষ্ঠান চলছে। দেখে অনুমান করা যায়, বিজয়ের আনন্দ আরও কয়েকদিন চলমান থাকবে।
×