ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের আনন্দে রঙিন শহরের সংস্কৃতি ভুবন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজয়ের আনন্দে রঙিন শহরের সংস্কৃতি ভুবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার সকাল থেকেই যেন চিত্রশিল্পীর রঙ্গিলা ক্যানভাস হয়ে ওঠে শহর ঢাকা। নগরের চারপাশে দেখা গেছে বর্ণময়তার দৃশ্যকাব্য। নগরবাসী পথিকের সূত্র ধরে পথে পথে বয়ে গেছে আনন্দের ফল্গুধারা। আর এমন আনন্দের উপলক্ষ ছিল মহান বিজয় দিবস। সেই সুবাদে বাঙালীর জাতিসত্তা প্রকাশের দিনটিতে দারুণ সরব ছিল নগরের সংস্কৃতি ভুবন। সেসব আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ সঁপে দেয়া শহীদদের। ভালবাসা জানানো হয়েছে পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠানো নতুন দেশের স্বপ্ন আঁকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। দিনভর উচ্চারিত হয়েছে জয় বাংলার গান। বিশেষ দিনটিতে যেন নতুন করে খোঁজা হয়েছে স্বাধীনতা শব্দটির তাৎপর্য। স্বদেশের প্রতি ভালবাসায় বর্ণিল হয়েছে ঢাকার পথ-প্রান্তরসহ নানা মঞ্চ কিংবা মিলনায়তন। আর এসব আয়োজনে বিশিষ্টজনদের আলোচনা, নৃত্য, গীত ও কবিতার ছন্দে, নাটকের সংলাপে কিংবা শিল্পীর মনন আশ্রিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আট মঞ্চে সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সে আয়োজনের অংশ হিসেবে শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের জয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘৭ মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক বাংলার ঘরে ঘরে/৭ মার্চ সম্পদ আজ বিশ্ব-মানবের তরে’। শোভাযাত্রার উ™ে^াধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও রামেন্দু মজুমদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, মীর বরকত, সাধারণ মানজার চৌধুরী সুইট, শাহনেওয়াজ প্রমুখ। শোভাযাত্রা পূর্ব বক্তৃতায় জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু এখনও পরাধীনতা ও সম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হইনি। অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকেও মুক্ত হয়নি। অসম্পূর্ণ যে কাজগুলো আছে তা আমাদের পূর্ণ করতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। শোভাযাত্রায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন জোটভুক্ত শতাধিক সংগঠনে কয়েক হাজার সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ মানুষ। সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে শোভাযাত্রা। বিজয়ের আনন্দ ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে নাটক, গান, আবৃত্তি ও নৃত্যাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অংশ নেয় শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রা জুড়ে ছিল জাতীয় পতাকা ও একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পোস্টার। ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে ঐতিহাসিক ২৪টি বাণীসম্বলিত ফেস্টুন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রাটি শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন সকালে আগারগাঁওয়ের জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমি ॥ বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক কামাল লোহানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সাংস্কৃতিক পর্বে প্রখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা দেশের গান, নাচ ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। বাংলা একাডেমি ॥ বিজয় দিবসের বিকেলে একাডেমির নজরুল মঞ্চে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এতে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি, বিজয় ও বিজয়ের মহানায়ক শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন রামেন্দু মজুমদার, খুশী কবির ও নাদীম কাদির। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শিশু একাডেমি ॥ বিজয় দিবসের বিকেলে ‘আমার ভাবনায় ৭ মার্চ’ শীর্ষক শিশুদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিশু একাডেমি। এ অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল আর্ট গ্যালারি উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি । সভাপতিত্ব করেন একাডেমির চেয়ারম্যান কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে বিজয় মেলা ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় মেলা। এ উপলক্ষে চ্যানেল আই ভবনের চেতনা চত্বর সেজেছিল লাল-সবুজের রঙে। সকালে একঝাঁক লাল-সবুজ বেলুন উড়িয়ে উ™ে^াধন হয় এ মেলার। সম্মিলিতভাবে মেলা উ™ে^াধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, সুজেয় শ্যাম, ফকির আলমগীর, তপন মাহমুদ, খুরশীদ আলম, শাহিন সামাদসহ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছাড়াও দেশবরেণ্য শিল্পীরা। মেলা প্রাঙ্গণে এসে স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা । লাল-সবুজে বর্ণিল মঞ্চ, তোরণ ও ফেস্টুনে সুসজ্জিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। ৭ বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণে ছিল ৭টি স্মারক স্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চিত্রাঙ্কনে অংশ নেনÑচিত্রশিল্পী আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে এক ঝাঁক শিশুশিল্পী। একাত্তরে চেতনাসঞ্চারী গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায়, ফকির আলমগীর, তপন মাহমুদ, শাহিন সামাদসহ আরও অনেকে। চ্যানেল আইয়ের সেরা কণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ ও সেরা নাচিয়ে শিল্পীরা নানা পরিবেশনায় অংশ নেয়। জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি ॥ বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা উপস্থাপনা করবে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। ৩০টির মতো নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা কবিতায় সাজানো ছিল প্রযোজনাটি। পরিবেশন করে সংবৃতার প্রতিষ্ঠিত ও নবীন আবৃত্তিশিল্পীরা।
×