ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

কবিতা

**কমরেড, প্রতিদিন আমাদের ঘরে ঘরে দাউদ হায়দার দিন যায় অস্তাচলে, কমরেড লাল টুকটুকে দিন আনবে না? কোন স্বপ্নে, বর্ণে দেশ আজ প্রবঞ্চনাময়? তবে কী তন্দ্রামুখর বৈভব নিশীথে? হিংসায় উন্মত্ত এই পৃথবী, মাঝে মাঝে মনে হয় থেমে যাচ্ছে শোণিতের প্রবাহ, বর্বর দুঃশাসনে জানু বেয়ে উঠে আসছে মন্থর কেউটে, শ্বাপদ কালিমালিপ্ত সময় ঘিরে ধরছে আমাকে, আগুনের শিখা জ্বলছে না, মুমূর্ষু অমরাবতী, চারদিকে বিস্তারিত গহ্বর, জটিল, দুঃসহ, অস্থির, বধির যন্ত্রণা পায়ের তলার মাটি ধসে যাচ্ছে, দুর্যোধন আর শকুনির দল নির্মাণ করছে জতুগৃহ, অদূরে বারণাবত কমরেড, একদা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে বেমালুম ভুলে গেছ? নবযুগ আনবে না? লেনিনের সমাজ বিপ্লব, সাম্যবাদের শতাব্দী কেবল একটি দিনের শুরু নয়, কমরেড, প্রতিদিন আমাদের ঘরে ঘরে ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ বার্লিন, জার্মানি **সেই দুঃসময় নাসির আহমেদ আরণ্যক এই পথে যেতে যেতে মনে পড়ে আজো বুলেটবৃষ্টির স্মৃতি, সেই যে তুমুল যুদ্ধদিন দুই সহোদর ওরা কলেজপড়ুয়া, বয়স আঠার-উনিশ সুন্দরের কী অপূর্ব সাহস রক্তের ফুল হয়ে ফুটেছিল! হাওয়ায় হাওয়ায় কাঁপা গাছের পাতারা সেই স্মৃতি এখনো বহন করে ঝিরিঝিরি বিষাদ-সঙ্গীতে বাঁশঝাড়ে যেন সেই বুলেটবৃষ্টির ঝড় ঘুমিয়ে রয়েছে জীবনবিনাশী সেই হিংস্র শকুনের সঙ্গে আজো যুদ্ধে আছি! এইসব পথঘাট পাড়ি দিতে দিতে মনে পড়ে হিংস্র বাঘের চেয়ে নৃশংস ঘাতকের মুখ অন্ধকার নিয়ে যারা ছড়িয়ে পড়েছে এই সোনার বাংলায় সাপিনীরা সরসর শব্দ তুলে হাঁটে আজো পবিত্র ভূমিতে! মনে পড়ে দুঃসময় মনে পড়ে সুসময়, আশ্চর্য সময় সেই মার্চ একাত্তর সেই যে যুদ্ধের কোনো তুলনা কি হয়! **একাত্তর ॥ সেই অগ্নিতেজ হাসান হাফিজ সোঁদামাটি ভিজে আছে চিরদিনই ভেজা থেকে যাবে রক্তঋণ এই প্রিয় মাটি ধারণ করেছে প্রাণে এই নদী তৃণ পাখি ফুল একইসঙ্গে কৃতজ্ঞ মানুষ শহীদের আত্মা ও আবেগ লালন করতে চায় চেতনায়, অস্তিত্বের অণু পরমাণু সেই ত্যাগ সেই যুদ্ধ সেই দীপ্র একাত্তর নক্ষত্রতিয়াস বহমান শোণিতের সগর্ব ধারায় গ্রহণ করেছে শক্তি অগ্নিতেজ, অনাগত কালও সেই প্রেরণা লাভায় নিশ্চিত অর্জন করবে শান্তি স্বস্তি প্রগতি কল্যাণ। **শাশ্বত আশ্বাস পূরবী বসু নিঃশ্চিহ্ন আঁধার, চারপাশ ছিমছাম, আকাশে তীব্র ঘনঘোর, আমি শুধু এক পরিচিত কণ্ঠের অপেক্ষায় বসে আছি। তুমি আসবে। কাছে ডাকবে। চুপিচুপি বলবে, ‘এসে গেছি! আর ভয় নেই; এবার বন্ধ কর দরোজা-জানালা, সবক’টা।’ পৃথিবীর খিড়কিটা ভেজাতেই উজারিত নৈঃশব্দ ছেয়ে ফেলে চারপাশ; উপুর করা কাশার জামবাটি চুইয়ে ত্বরিতে মুঠোমুঠো জ্যোৎস্নার আভাস। স্বল্পালোকে দৃশ্যমান সহাস্য বদন, গাঢ় উষ্ণ স্বর, মায়াচ্ছন্ন কণ্ঠস্বর। অপলক দৃষ্টি; মন্ত্রমুগ্ধ স্নিগ্ধ চাহনি; স্থিত হৃদয়; একাগ্র, শাশ্বত আশ্বাস, ‘এসে গেছি। এই তো এসে গেছি আমি! আর ভয় নেই।’ **অর্চনা বসাক আলমগীর রেজা চৌধুরী স্বপ্ন থেকে ছিটকে দেখে, গলইয়ের ওপর দোনেশ বসে আছে। ওর লম্ফঝম্ফ বহুরঙা পুচ্ছ তিড়িংবিড়িং নাচ দেখে একটি সকালের সঙ্গে পরিচয় হলো। মাথার ওপর স্যাবর উড়ছে, শিশুরা কলরব করছে, শেয়ার মার্কেটে উৎকণ্ঠিত মুখ, জ্যামে পড়ে আশা উষ্মা প্রকাশ করছে। সর্বত্র বিকেলের বিষণ্ন ছায়া। ও একটু রোদ চেয়েছিল, দেয়া যায়নি। পরাস্ত সেই গল্প কাউকে বলা হয়নি। হেমন্তের কুয়াশায় লেগে থাকা শীতের প্রণয়। আমি তাকে জড়িয়ে রাখি নকশিকাঁথায়। স্বপ্নকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাই, ট্রেনের সাটিং চলছে, ‘তাজমহল’ থেকে বেরিয়ে কবি শামসুল ফয়েজ খিস্তিতে ভরে তুলছে গোসপেল হলের বারান্দা। ঝড়জলে আযাদ বেপাড়ার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মান্টোর কালো সালোয়ারকে প্রত্যক্ষ করে। মঞ্জুভাই কি জেল ভেঙে পালাল! আমি আর শোয়েব সিদ্দিকী গুদারাঘাটে অপেক্ষায়, কখন নীহার লিখন এসে বলবে, ‘চন্দ্রাবতী আসছে’। ৩/১ শরত শশী লেনে অর্চনা বসাক থাকে কি না? বেদনায় আক্রান্ত আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে সূর্যকে বিদায় দিলাম। শহরে তখন ব্ল্যাকআউট চলছে। **পোপের হৃদয় চিরে দুখু বাঙাল আমার শব্দসকল যখন পরিযায়ী পাখিদের মতো পালাই পালাই ঠিক তক্ষনি ব্যাঙের মতো বুকের দিঘির জলে ঝপাৎ করে লাফিয়ে পড়ল এক শব্দকিশোর এবং হরদম সাঁতারকাটতে থাকা এই কিশোরটির নাম কবিতা বুুঝলাম, আমি ছাড়লেও কবিতা আমাকে ছাড়েনি। ক্ষতি কি, একটা বেটাছেলের নাম না হয় কবিতাই হলো এবং আশ্চর্য, মুহূর্তের মধ্যেই তার মস্তকে ওঠে পড়ল পৃথিবীর বিরল সব কোহিনূর কোহিনূর নাম যাকে বলে শতনামের ভালোবাসা হ্যালো, গণহত্যা কবে তুমি হবে জেনোসাইড! ছি, ভালোবাসার কথা ওভাবে বলতে আছে! উপায় নেই ভেতরে জিওল মাছের সব খলবল ধ্বনি তিনি কোনো সিংহ বা হিটলারের মতো গর্জন করেননি ধীরকণ্ঠে শুধু জানান দিয়ে গেলেন নিঃসঙ্গ হিমালয়ের অবিচল অবস্থান আর দৃঢ়তার কথা। ক্ষতি কি, একটা বেটাছেলের নাম না হয় কবিতাই হলো নামের বাহার সব, ভালোবাসার শতনাম প্রেম আশা রোহিঙ্গা এবং পোপ ফ্রান্সিস ‘র্নিলিপ্ত’ পৃথিবীতে পরিত্যাজ্য সন্তানসকুলে অবশেষে মহামান্য পোপের হৃদয় চিরে ফুটে ওঠল রোহিঙ্গাকুসুম। **বধ্যভূমি মারুফ রায়হান গোলাপ বাগানটার মাঝখানে খানিকক্ষণ দাঁড়াই বিহ্বল রক্তিম পাপড়ি দেখে মনে পড়ে নাকি রক্তমাখা শাড়ি মুঠো খুলে মাটি ঝরে যেতে যেতে বলে ‘ভালো নেই মা-টি’ পুড়ছে কয়লা দূরে ভুলে থাকি, আর এইখানে আন্দোলিত সুমিষ্ট বাতাস, আহা এরকমই বুঝি স্বাধীনতার সুবাস এখানে ঘাতকদল একাত্তরে রচেছিল বধ্যভূমি, ভুলে গেছি! ভোলে নাই কৃতজ্ঞ গাছেরা সর্বশক্তি দিয়ে ফোটাচ্ছে সুন্দর আর বায়ু প্রবাহের ভেতর চাইছে দিতে সাম্য-শান্তির সৌরভ **এক কবির প্রত্যাবর্তন আনোয়ার কামাল এক কবি তার অমর কবিতা শোনাতে রেসকোর্সে ডেকেছিল সে-কি জনতার ঢল, বানের পানিকে মানিয়েছিল হার সবাই নীরব থেকেছে, শুনেছে তার ভালোবাসার কথা, মুক্তির কথা মানুষের মুক্তির নিশানা উড়িয়ে সেই বজ্রকণ্ঠের হুঙ্কার এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম অতঃপর স্বৈরাচারী আইয়ুবের মসনদ কেঁপে উঠেছে ভীত কাপুরুষরা সেই সিংহমানব কবিকে খাঁচায় পুরে রাখতে চেয়েছে পারেনি; কবিতার কবিকে, রাজনীতির কবিকে ধরে রাখা যায় না বাংলার নদী-নালা, খাল-বিল, পাখ-পাখালি, বৃক্ষরাজি প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে বাংলার অসীম সাহসী নারী-পুরুষ যুদ্ধ জয়ে তাকে ছিনিয়ে এনেছে তিনিই আমাদের পিতা; জাতির পিতা, বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান তিনি কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে ফুলেল সম্ভাষণে ফিরে এলেন তাঁর প্রিয় বাংলায় সেই প্রথম স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাওয়া, জাতির পিতাকে ফিরে পাওয়া **শরৎ আকাল শাহীন রেজা আজও কি ভাসে লাশ সীমাহীন পানগুছি জলে রক্তের আঙুর লতা ঘন হয় অরুপের ছলে নিখিল মাঝির পালে লাগে বুঝি দখিনের বাও নির্জন রাতের ডাক গুলি বোমা সে আমারে দাও মুক্তির সনদ হাতে এই আমি জেগে আছি একা আমার আরাধ্য ভূমে বিজয়ের নাম শুধু লেখা হৃদয়ে সাহস আছে আর আছে শহীদের ঋণ অচিন উজানে ভাসা নীলচোখ প্রজাপতি-বীণ গিয়েছে ডাহুক ক্ষণ শ্রাবণের চিহ্ন খুঁজে সেই কোথায় পালাবে তারা ঘাতকেরা নেই ক্ষমা নেই এ জাতি বীরের আর আমি তার প্রজন্মের হাত আমারি দুচোখে আজ চেনা সেই শপথের রাত দাঁড়াও বাঙালী ভূমে যতো আছো দিনের রাখাল তোমারি ছোঁয়াতে আজ কেটে যাবে শরৎ আকাল। **জনকের প্রলম্বিত ছায়ার সৈকত বাদল আশরাফ এসো অনাগত এসো এই উদ্যানে অনাবিল আকাশের নিচে- পিতার যে আঙুল ধরে হাঁটতে শিখবে তুমি যাবে বহুদূর, সে আঙুল তুলে দাঁড়িয়ে আছেন একজন আজও এখানে ... এসো অনাগত এসো এই উদ্যানে যেওনা অন্য কোথাও অন্য কোন দ্রাঘিমায়, যেখানে শিউলির উদ্যান নেই চর্যাপদের হরিণী করে না আনাগোনা ফোটে না পলাশ বর্ণমালার বিথিকায় সুরভিত ফুল... এসো অনাগত এসো এই উদ্যানে যেখানে দারুণ প্রেমের সংলাপ উচ্চারিত হয়েছিল একদিন সাড়ে সাত কোটি মানুষের সমবেত বিশ্বাসে- ‘এবারের সংগ্রাম -স্বাধীনতার সংগ্রাম’... এসো অনাগত এসো এই উদ্যানে ৭ মার্চের অপরাহ্ণে, প্রতিদিন জনকের প্রলম্বিত ছায়ার সৈকতে! **প্রিয় বাংলাদেশ মুহাম্মদ ফরিদ হাসান প্রিয় বাংলাদেশ, তোমার প্রতিটি গ্রাম জুড়ে তোমার শ্যামল বনভূমির প্রতিটি বৃক্ষ জুড়ে যে পাখি ওড়ায় প্রাণের পতাকা যে পথিক কণ্ঠে রাখে পিতৃপুরুষের অবিরাম শব্দগাথা তুমি তাকে ভালোবেস। প্রিয় বাংলাদেশ, তোমার প্রতিটি নদীর স্রেতে তোমার প্রতিটি ফসলের মাঠে যে মানুষ উৎসব ছড়ায় ক্লান্তিহীন যে তরুণ একখ- আকাশ হতে চায় তুমি তাকে ভালোবেস। প্রিয় বাংলাদেশ, তোমার প্রতিটি জোছনা রাতে তোমার প্রতিটি বৃষ্টির দিনের উল্লাসে যে তরুণীর ঠোঁটে গান লেগে থাকে যে নারী মা ডাক শোনার স্বপ্নে বিহ্বল তুমি তাকে ভালোবেস। প্রিয় বাংলাদেশ, তোমার প্রতিটি পবিত্র ভোরে তোমার অগ্নিঝরা দিনের অলিতে গলিতে যে যুবক মুখে নিয়ে বজ্র স্লোগান যে পিতা আর কখনো ফেরেননি তুমি তাকে ভালোবেস।
×