ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

-বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে

বীরপ্রতীক দুদু মিঞার পরিবার ভাল নেই !

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বীরপ্রতীক দুদু মিঞার  পরিবার ভাল নেই !

স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য সাহসী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বীরপ্রতীক নায়েক দুদু মিঞার পরিবার আজ ভাল নেই। স্বাধীনতার পর এক এক করে দীর্ঘ ৪৬ বছর কেটে গেল,অথচ পরিবারটির খোঁজখবর কেউ রাখেনি। সরকারী সুযোগ-সুবিধা থেকেও পরিবারটি বঞ্চিত। দুদু মিয়ার স্ত্রী মেহেরাজ বেগম বয়সের ভারে এখন মৃত্যুর পথে। মারাত্মক অর্থাভাবে দুদু মিঞার পরিবারের ১৫ সদস্য টিন ও বেড়া দিয়ে তৈরি ঘরে মানবেতর জীবন ধারণ করছে। এ ব্যাপারে দুদু মিঞার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোবিন্দারখীল গ্রামে। ২০১৪ সালে একবার তার বসতঘরটি সরকারীভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীকালে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরপ্রতীক দুদু মিঞাসহ এ দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ছিনিয়ে এনেছে লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নায়েক দুদু মিঞাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ গেজেট নোটিফিকেশন-০৮/২৫/ডি-১/৭৩-১৩৭৮। সনদ নং- ২২৮। ১৯৫০ সালে দুদু মিঞা পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে প্রথম যোগদান করেন। পরবর্তীতে ইপিআর বাহিনী পুনর্গঠনকালে ১৯৫৯ সালে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা বর্ডারে কর্মরত অবস্থায় তিনি বিদ্রোহ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। এজন্য দুদু মিঞা বীরপ্রতীক খেতাব পান,যা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ নবেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে মরহুম দুদু মিঞার পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের অভাব অনটনের বিষয়টি তুলে ধরেন। পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাঙালীর গৌরব ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা, এ বাংলাদেশ। এ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন পটিয়ার ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোবিন্দারখীল গ্রামের মরহুম বদিউর রহমানের পুত্র নায়েক দুদু মিঞা। তিনি চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরে। যুদ্ধ শুরু হলে দুদু মিঞা সাতক্ষীরা জেলার ৮নং ভোমরা সাবসেক্টরে ইপিআরের সঙ্গে বিদ্রোহ করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অক্টোবর মাসের শেষে এক যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে দুদু মিঞার শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলিবিদ্ধ হয়। ভারতে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি পঙ্গু অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। চিকিৎসার অভাবে ২০০০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বীরপ্রতীক নায়েক দুদু মিঞা গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ গোবিন্দারখীলে মারা যান। সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে দুদু মিঞার পরিবার তাদের অর্থে বাড়ির সামনেই ২০১০ সালে একটি গেট নির্মাণ করেন। বৃদ্ধ স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক কন্যাসহ ১৫ সদস্য রয়েছে। বর্তমানে আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের বসতঘরটি মেরামতও করতে পারেছেন না। গ্রামের বাড়িতে দুদু মিঞার পৈত্রিক ৮ শতক জায়গা রয়েছে। সরকারী অর্থায়নে তাদের বসতঘরটি নির্মাণের জন্য বিজিবির মেজর রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে একটি টিম তদন্তে এসেছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই উদ্যোগ আর হয়নি বলে মরহুম দুদু মিঞার পুত্র মোঃ নূরুল আলম জানিয়েছেন। বীরপ্রতীক দুদু মিঞার স্ত্রী মেহেরাজ বেগম এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তার স্বামী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে ঠিক। কিন্তু সরকারী সব সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারীভাবে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা দূরে থাক, সশস্ত্র বাহিনী দিবসে কোন সময় তাদের দাওয়াত পর্যন্ত দেয়া হয় না। অথচ দেশের অন্যান্য বীরপ্রতীকের পরিবার দাওয়াত পেয়ে থাকেন। বিভিন্নভাবে তাদের পরিবারটি অবেহেলিত। তবে ১৯৯৬ সালে বীরপ্রতীক দুদু মিঞা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলে তিনি নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের পরিবারের খবর আর কেউ রাখেননি। পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও হাইদগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেনÑ বীরপ্রতীক দুদু মিঞা যুদ্ধাকালীন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাঁর এ অবদান দেশের মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে। তাদের পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করার বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানে বীরপ্রতীক দুুদু মিঞার পুত্রকে জানানো হয়। তাছাড়া, তিনি জীবিত থাকাকালীন পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে একবার সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছিল। তবে সরকারীভাবে তাদের ঘরটি মেরামত করার কথা থাকলেও কি কারণে হচ্ছে না তা তিনি জানেন না।
×